পাঁচ বছর পর লিওনেল মেসি ৩৪ বছর পূর্ণ করবে, আর আমার মনে হয় আমরা সবাই কাঁদব, এ কারণে কাঁদব যে মেসি ৩৪ বছর পূর্ণ করে ফেলেছে!’-কথাটা জোসে মরিনিওর, বলেছিলেন ২০১৬ সালে। আজ (২৪ জুন) সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচের উল্লেখ করা সেই দিন। বার্সেলোনা-আর্জেন্টিনার মহীরুহ লিওনেল মেসি আজ ৩৪ পূর্ণ করে পা দিয়েছেন ৩৫ বছরে।
২৪ জুন, ১৯৮৭। সেলিয়া মারিয়া কুচিত্তিনি আর হোর্হে মেসির ঘর আলো করে জন্ম নিল এক ফুটফুটে ছেলে। মা আর বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হলো লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচিত্তিনি। যে বয়সে হাঁটতে শেখা সেই বয়সেই লাতিন বাচ্চাদের পায়ে শোভা পায় ফুটবল। মেসির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো না।
তবে যেটা তাকে আর সব বাচ্চা থেকে তাকে আলাদা করে রাখত তা হচ্ছে তার বলের দখল। সেই বয়সেই তার কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া দুরূহ কাজ ছিল।
এমন প্রতিভাকে লুফেই নিয়েছিল নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ। ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলে সে বয়সেই রীতিমতো তারকা বনে গিয়েছিলেন মেসি। তবে বাধ সাধল ‘গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম’, যা হলে বাচ্চার দেহের বৃদ্ধি থমকে যায়। বিশাল অর্থ প্রয়োজন ছিল তার চিকিৎসায়, বাবা হোর্হে পড়লেন মহাবিপদে। সেই বিপদ থেকে তাদের উদ্ধার করল বার্সেলোনা।
একদিন বিকেলে রোজারিওর মাঠে প্রতিপক্ষকে ড্রিবল, গতি দিয়ে ছিটকে দিচ্ছিলেন; তাই দেখে যেন বার্সা স্কাউটদের চোখ সরে না। সেদিনই একটা পেপার ন্যাপকিনে চুক্তি সাক্ষর হলো মেসির। কিছুদিন পর পাড়ি জমালেন বার্সায়।
২০১২ সালে মেসির আসল রূপ দেখতে পায় বিশ্ব। সেবার তার পারফরম্যান্স তাকে ‘ভিনগ্রহের খেলোয়াড়’ হিসেবে অবস্থান এনে দেয়। মাত্র ২৫ বছর বয়সী মেসি সেবার জার্ড ম্যুলারকে ছাড়িয়ে দেশ ও ক্লাবের হয়ে এক মৌসুমে ৯১ গোলের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ১৯৭২ সালে দেশ ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জার্মান কিংবদন্তির গোলসংখ্যা ছিল ৮৫টি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ম্যুলারকে ছাড়িয়ে গেলেও থামেননি মেসি। বরং রিয়াল ভায়োদোলিদের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ের রাতে ম্যাজিক্যাল পারফরম্যান্স দিয়ে চমকে দেন। ২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগার ১৩টি দলের সম্মিলিত গোলের চেয়েও বেশি গোল করেছিলেন মেসি।
মেসি জাদুতে এখন পর্যন্ত ১০টি লা লিগা, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৭টি কোপা দেল রে, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ৩টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জয় করেছে বার্সেলোনা। শুধুমাত্র নিজ দেশ আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এখনও শিরোপার দেখা পাননি তিনি। যদিও ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল, ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতার খুব কাছ থেকে ফিরেছেন। এই তিনবার ফাইনাল হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছে তার।
২০১৪ বিশ্বকাপ ছিল মেসির জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। সেবার ফাইনালটা প্রায় জিতেই গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু জার্মানির সুপার-সাব মারিও গোৎশে ১১৩তম মিনিটে আচমকা গোল করে আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে ছুরি বসিয়ে দেন। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অবশ্য মেসির হাতেই শোভা পেয়েছিল। কিন্তু ফুটবল জাদুকর তো বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
২০১৯ সালে ফের একবার মেসি রাজত্ব দেখেছে বিশ্ব। পুরো বছর মাঠে রাজত্ব দেখিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর জিতে নেন তিনি। রেকর্ড গড়ার পথে তিনি পেছনে ফেলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। এর আগে দুজনেই সমান ৫টি করে ব্যালন ডি’অরের মালিক ছিলেন। প্রায় একযুগ ধরে চলা বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে একজন আরেকজনকে পেছনে ফেলা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ২৬ বছর বয়সের আগেই ৪টি ব্যালন ডি’অর জেতার কীর্তিও আছে মেসির দখলে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো মেসিযুগের অবসান ঘটবে। বিষাদের সেই মুহূর্ত আসার আগে তার পায়ের জাদু যতবেশি সম্ভব উপভোগ করতে চাইবে ভক্তরা।