এস এম জাকির হোসেন: পর্বঃ আট
দুর্গম যাত্রা শুরু
এপ্রিলের নয় তারিখ ঢাকা থেকে বাড়ির পথে শুরু হলো আমাদের দুর্গম যাত্রা। সারা শহর নিস্তব্ধ। শান্ত, নিরিবিলি। কে বলবে এ শহরের লোকজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পাকিস্তানি মিলিটারী নামক আতঙ্ক। ঘর থেকে বের হয়ে মামি বারবার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে। মনে প্রশ্ন এই সাজানো সংসার ঠিকঠাক থাকবে তো! মামা তাড়া দিলেন। অবশেষে আমরা বড় মামার গোরানের বাসা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। তখনও রাতের অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি। ফজরের নামায শেষে মুসুল্লিরা সবে ঘরে ফিরে গেছে। ফাঁকা রাস্তার পাশের মাঠে জমানো ময়লার স্তুপের কাছে কয়েকটা কুকুর কু-লি পাকিয়ে শুয়েছিলো কেবল। আমরা নিঃশব্দে সামনে এগোলাম।
এলাকার গলিপথ ধরে পূবদিকে কিছুদূর এগিয়ে গেলে অনেকটা জায়গা জুড়ে খোলা জমি। বর্ষাকালে এই জমিগুলো পানিতে ডুবে থাকে। এই জমির শেষপ্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে ছোট ছোট গ্রাম। শহরটাকে ডান দিকে রেখে খোলা জমির পাশ দিয়ে সরু পথ ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। আধো অন্ধকারে দূরে গ্রামগুলোকে দেখা যায় ঝাপসাভাবে। শীতের আমেজ শেষ হয়েছে মাত্র কিছুদিন আগে। সবজিও এখন প্রায় শেষদিকে। অনেক জমিই পরিত্যাক্ত। কিছু কিছু জমিতে দেখতে পেলাম টমেটো, লাউ ও শিমের মাচা। পূবদিক থেকে আসা ভোরের হাওয়ায় কিছুটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিলো।
এমনিতে আমাদের চলার পথটা মোটেই মসৃণ ছিলো না। তার উপর সাথে মহিলা ও বাচ্চারা ছিলো। আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলাম মহিলা আর শিশুদের নিয়ে পথচলা খুব একটা সহজ হবে না। আসলে এই পথে সাধারণত মানুষ যাতায়াত করে না, তাই নির্দিষ্ট কোনো রাস্তাও নেই। মাঝে মাঝেই নালা, খানা-খন্দ আর নর্দমা। এগুলো এড়িয়ে আমাদের পথ চলতে হচ্ছিলো। আমি দাদাকে কাঁধে নিয়ে হাঁটছি। রানুর নিজেকে সামলানোই কষ্টকর, তাই মা, মেজচাচি আর বড় আপাই সামলাচ্ছে আনুকে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো আলো ফোটার আগেই এই এলাকা ছেড়ে দূরে চলে যাওয়া।
কিছুদূর চলতেই আমাদের সামনে আরেকটি দলকে দেখতে পেলাম। তারাও সামনে এগিয়ে চলেছে। মনে মনে ভাবলাম যাক, ওদেরকে অনুসরণ করে সামনে এগোনো যাবে। আমরা নিঃশব্দে পথ চলছিলাম। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ কথা বলছিলাম না। সবার সামনে আসাদ ভাই, ছোট চাচা আর মেজ চাচার ছেলে মতিনকে দেয়া হয়েছে। তারা চারিদিকে নজর রেখে পরিস্থিতি বুঝে আমাদের নির্দেশনা দিবে। সবশেষে ছোট মামা, চন্দন (ছদ্ম নাম চান মিয়া) আর বড় মামার কাজের ছেলে মনাকে রাখা হয়েছে। সবাই ঠিকমতো এলো কিনা সে খেয়াল রাখার জন্য। বড় মামাকে সামাল দেয়ার জন্য আমি বাবাকে তার সাথে মাঝামাঝি জায়গায় থাকতে বললাম। সোহেল মাঝখানে আমার পাশে পাশে হাঁটছে।
গতরাতের আলোচনা অনুযায়ী আমরা চলছিলাম। এই পথে পায়ে হেঁটে বড়রাস্তায় উঠবো। তারপর মেইন রোড ক্রস করে নারায়ণগঞ্জে ঢুকে পড়বো। চারিদিক এখনও পরিষ্কার হয়নি, আমরা ধীর গতিতেই চলছিলাম। কাঁধে বৃদ্ধ দাদা, তাই খানা খন্দ দেখে আমাকে খুব সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছিলো। আমার সামনে ছিলো মেজ চাচার ছেলে মতিন, ও-ই আমাকে পথ নির্দেশনা দিচ্ছে।
আরও আধাঘণ্টা চলার পর চারিদিক ক্রমশ ফর্সা হয়ে আসছিলো। এলাকা ছেড়ে অনেকদূর চলে এসেছি। দিনের প্রথম আলোয় দেখলাম আমাদের থেকে বেশ কিছুটা সামনে আরও কয়েকটি দল এগিয়ে যাচ্ছে।
মা বললেন ‘একটু জিরাইয়া নেওয়া দরকার। বাচ্চাগুলান কাহিল হইয়া পড়ছে।’
মহিলা আর বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে আমরা একটা বড় গাছ দেখে তার তলায় থামলাম। তখন চৈত্র প্রায় শেষের দিকে। গাছে গাছে কাচা আম ঝুলছে। সুমন আর হাসান গাছে ঢিল ছুড়তে যেতেই বড় মামা ধমকে উঠলেন। দুজনেই ফিরে এসে চুপচাপ যার যার জায়গায় বসে পড়লো।
আমি হাসানকে নিচু স্বরে বললাম, সামনে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। আম খাওয়ার অনেক সুযোগ পাবি। একসময় আর কিছুই খাওয়ার ইচ্ছে থাকবে না। শুধু সময় গুনবি কখন বাড়ি পৌঁছাবি।
প্রায় মিনিট বিশেকের মতো আমরা বিশ্রাম নিলাম। তারপর আবার শুরু হলো পথ চলা। দাদাকে কাঁধে নিতে যেতেই আসাদ ভাই হাসতে হাসতে বললো, ‘এবার বুড়ারে আমার কাছে দাও, তুমি বরং বুড়ির কাছে যাও। দেখো তাঁকে কোলে নিতে হয় কি না।’
সোহেল আমার পেছনেই ছিলো। দাদির পাশে পাশে হাঁটছিলো। আসাদ ভাইয়ের কথাগুলো শুনে সোহেল মিটিমিটি হাসছে। ফিসফিস করে আমার উদ্দেশ্যে বললো, ‘দাদা, দ্যাখো না দাদির কোনো হেল্প লাগে কি না।’ আমিও দাদির দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম। সে হাসির মানেটা ছিলো অনেকটা এরকম ‘কী দাদি, উঠবে না কি কোলে?’ দাদি কি বুঝলো জানি না, সে আমার দিকে ফিরে মুখ ভেংচালো। তারপর সেই ফোকলা দাঁতে হেসে আমার কানের কাছে বললো, ‘আগে নিজের বিবিরে সামলা। দ্যাহো না ও আটতে পারতেছে না। পারলে ওরে কোলে নে।’
মেজচাচি দাদির পাশ থেকে হাসছিলেন। আমি ওখান থেকে নিঃশব্দে সরে গেলাম। সোহেল নিচু স্বরে বললো, ‘কী রকম ধরা খাইলা দাদা? দাদি তোমার থেকে এককাঠি উপরে, বুঝছো?’
ওকে ধমক দিয়ে আমি সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠতেই মনে হলো আরেকটি দিনের শুরু। মনে উৎকণ্ঠা কেমন যাবে আজকের দিনটি? লোকজন ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে। অনেকে উৎসুক দৃষ্টিতে আমাদের দেখছে। আবার নতুন করে কিছু দল যোগ হচ্ছিলো আমাদের সাথে। সবার উদ্দেশ্য একটাই এই অঞ্চল ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়া। এই দিকটা শহরের বাইরে। কিছুটা নিরাপদ। তাই অনেকেই এলাকা থেকে বের হবার জন্য এই পথটাকেই বেছে নিয়েছে। ছোট চাচা আর মতিন কিছুটা দ্রুত হাঁটছিলো। অন্যরা ওদের সাথে তাল মেলাতে পারছিলো না। সাথে মহিলা ও বাচ্চারা রয়েছে। বড় মামারও বেশ বয়স হয়েছে। তাই আমি ছোট চাচাকে আস্তে হাঁটতে বললাম। পেছনে এসে দেখলাম বড় মামা হাঁপাচ্ছেন। আমি ঘুরে তাঁর কাছাকাছি চলে আসলাম। কথা বলে বুঝলাম তার কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সবাইকে থামতে বললাম।
আমরা আবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। ‘চল, আর দেরি করা যাবে না। সামনে অনেক পথ বাকি।’ বড় মামাই তাড়া দিলেন।
আবার এগিয়ে চললাম। বড় মামার বাসা গোরান থেকে বেরিয়েছি প্রায় তিনঘণ্টা। এতটা পথ হেঁটে অবশেষে আমরা বড়রাস্তায় উঠে এলাম। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। এখন কারফিউ নেই। ছোট চাচা আর আমি পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য সামনে এগিয়ে গেলাম। আশেপাশে তেমন কিছু চোখে পড়লো না। কেবল মানুষজন ছুটছে। যেনো মানুষের ঢল নেমেছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষ রাস্তার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আসা যাওয়া করছে। আমরা ফিরে এসে পরিস্থিতি জানাতেই বড় মামা সামনে চলার জন্য মতামত দিলেন। আমরা বড়রাস্তা ক্রস করে উল্টাদিকের এলাকায় ঢুকে পড়লাম। এখন এসব এলাকায় ঘন বসতি গড়ে উঠলেও তখন বেশিরভাগই ছিলো নিম্নাঞ্চল। কোথাও চাষের জমি, কোথাও পুকুর ডোবা।
মেইনরোড এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত গ্রামাঞ্চল আর লোকজনের বাড়িঘরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছি। আসাদ ভাই থেকে এবার দাদাকে কাঁধে তুলে নিলো ছোট চাচা। আমি হাঁটতে হাঁটতে মায়ের পাশে চলে এলাম। মা সারাটা পথই আনুকে কোলে নিয়ে হেঁটেছেন।
আমি বললাম, ‘এবার ওকে আমার কাছে দাও।’
আনু এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো, এবার জেগে উঠলো। আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে গলা জড়িয়ে ধরলো। মা হাসতে হাসতে বললেন, ‘দেখো না, বাবাকে পেয়ে কী খুশি! আমি যেনো আর কেউ না।’
মায়ের কথা শুনে এত কষ্টের মধ্যেও হেসে ফেললো মিনু ফুপু। আমি আনুকে কোলে নিয়ে পুরো দলটাকে একবার ভালো করে দেখে নিলাম। সবাই ঠিকঠাকই আছে। দলের অল্পবয়সী ছেলেদেরকে দেয়া হয়েছে সবার ব্যাগগুলো বহন করার দায়িত্ব। ওরা তা ভালোভাবেই পালন করছিলো। দেখলাম বড় মামা আর বাবা কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন। আমি তাদের ছাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আমার সামনে সামনে হাঁটছিলেন নুরুল ফুপা। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিলো কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ফুপা, কষ্ট হচ্ছে?’ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘না। আমার আর কষ্ট কি? ছোট ছোট শিশু আর তোমার বৃদ্ধা দাদির জন্য চিন্তা হচ্ছে।’
কাঁচাপাকা শ্মশ্রুমন্ডিত ছোটখাটো গড়নের নিরীহ মানুষ নুরুল ফুপা একজন কেমিস্ট। ঢাকা মেডিকেলে চাকরি করেন। ফুপার কাছে অফিস আর বাসাই একমাত্র জগৎ। নিজের ধর্মকর্ম নিয়েই থাকেন। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে চৌদ্দ বছরের সুমন এবার ক্লাস এইটে পড়ে আর মেয়ে সুমি স্কুল শুরু করেছে মাত্র। দুই সন্তান নিয়ে মিনু ফুপুর ছোট সুখী পরিবার। যুদ্ধের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি নুরুল ফুপার জন্য সবচেয়ে কষ্টকর। ফুপা আমাকে নিচু কণ্ঠে বললেন, ‘সুরুজ, মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়। আল্লাহ আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।’

আমি ফুপার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘জ্বি ফুপা।’
আমরা কখনও ধানি জমি ঘেঁষা সরু রাস্তা আবার কখনও মানুষের বাড়ির পাশের মেঠোপথ ধরেই এগিয়ে চলেছি। বয়স্ক ও মহিলাদের কথা ভেবে কিছুক্ষণের জন্য আবারও একবার বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। মেজ চাচার মেয়ে তানিয়া বললো, ‘সুরুজ দাদা, পানি খাবো।’
তানিয়ার দেখাদেখি আরও কয়েকজন পানি খেতে চাইলো। আমাদের সাথে আনা পানি শেষ। তাই পাশের বাড়ির টিউবওয়েল থেকে বোতলগুলোতে খাওয়ার পানি নিয়ে নিলাম।
এগারোটা বাজে। আমরা আবার চলতে শুরু করলাম। সকাল থেকে একই ধরণের পথে চলতে হচ্ছে। তাই এখন আর কাউকে নির্দেশনা দিতে হচ্ছে না। সবার আগে আগে সোহেল, তারপর আসাদ ভাই আর মেজ চাচা। আমি, ছোট মামা আর চন্দন দলের সবার দিকে লক্ষ রাখছি। আসাদ ভাই আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়াতে পাকবাহিনী বেশকিছু নিরীহ মানুষকে গুলি করে মেরেছে। বড় মামা সবাইকে নির্দেশনা দিলেন, এখন থেকেই অনেক সাবধান হতে হবে। সামনে পেছনে যারা থাকবে তারা চোখ কান খোলা রাইখো। মাকে ডেকে বললেন, ‘জয়নাব, সুরুজের ছেলেকে তোর কাছে রাখ। ওকে এখন থেকে সামনে থাকতে হবে।’ চন্দনের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, ‘চান মিয়া, তুমি পেছনে চলে যাও।’
মা আবার আনুকে কোলে তুলে নিলো। বড় মামা সোহেল আর মতিনকেও আমার সাথে সামনের দিকেই রাখলেন। দাদাকে কাঁধে নেয়ার দায়িত্ব পড়লো পালাক্রমে মেজ চাচা ও ছোট চাচার উপর। তবে আসাদ ভাইও তাদের সাথে যোগ দিলো।
বড় মামা আজ সকালে তাঁর বাসা থেকে রওনা দেবার আগেই সবাইকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ‘চন্দন নামটা তোমরা সবাই ভুলে যাও। ওকে আর কেউ চন্দন নামে ডাকবা না। আজ থেকে ওর নাম চান মিয়া।’ আমরাও তখন থেকে চন্দনকে চান মিয়া নামেই ডাকছি। বড় মামা চান মিয়ার সাথে তাঁর কাজের ছেলে মনা আর ছোট মামাকেও দলের পেছন দিকে রাখলেন।
চলমান…
শোনো বন্ধু শোনো!
প্রাণহীন এক জীবনের ইতিহাস;
বিশ্বাসহীন নিঃশ্বাসে তার
মর্গে বসবাস।
এখানে এক লাশের পাসে
মৃত মানুষে হাসে,
অন্যেরে খুন করিয়া ফাঁসে
আপন সর্বনাশে।
চারদিকে দেখি এ কি কারবার !
বারবার মরে মরা,
জ্যান্ত মরার ভান ধ’রে পড়ে
রয়েছি কি আর করা!
পাপী পরহেজগার বেহুশ
হায়েজ রক্ত শরাব পানে,
কাট্টা কাফের জান্নাতে যাবে
পিঠে চড়ে শয়তানে !
রঙবাজ রাজা রাজ্যের চোর
বাটপার বারোমাস
প্রজা প্রচুর চশমমখোর,
রাজ পাইক-পেয়াদা’র দাস।
এখানে যে যারযার, তার
পাপের স্বর্গবাসে
নরকঙ্কাল কাল রাত্তিরে
দাঁত বের ক’রে হাসে।
চোরাকারবারি সরকারি সব
সভাসদ, সভাপতি,
উজির, নাজির নজিরবিহীন
আধমরা সেনাপতি।
শোনো বন্ধু শোনো!
প্রাণহীন সামরাজ্যের ইতিকথা,
শ্বেতপাথর আর সোনার খাঁচায়
দারুণ মর্মব্যথা।
ঘন ঘোর ঝঞ্ঝা
অমানিশা রাত্রি
হাল ছেড়ে দিও না
সুদূরের যাত্রী।
সব আলো নিভে যাক
জ্বালো আলো হৃদয়ের
গতি হারা জগতে
তুমি আন গতি ফের।
ঢাক ঢাক গুঁড় গুঁড়
কালো মেঘ গর্জন
বৃষ্টির বদলে
হয় শিলা বর্ষণ।
বিদ্যু্ৎ চমকায়
এ কী মহা তর্জন
ভয়ে সব জড়োসড়ো
থর থর কম্পন।
এই ঘোর দুর্দিনে
পথে যেন থেমো না
হাল ধরে থেকো তুমি
খুঁজে পাবে মোহনা।
যুদ্ধের দামামা
বাজে শোন ঈষাণে
বিজয়ের বার্তা
তুলে ধর নিশানে।
তুমি শুধু সামনে
হবে সদা আগুয়ান
তুমি বীর বাহাদুর
তুমি সেরা পাহলোয়ান।
জোর পায়ে চল ভাই
নাই ডর নাই ভয়
অমানিশা হবে শেষ
আঁধারের হবে লয়।
ভালো জীবন পেতে আগে ভালো মানুষ হও ;
সত্য সুপথ ধৈর্য সাহস ত্যাগের শপথ লও।
পারলে হতে ভালো মানুষ থাকবে না অভাব,
নিজে প্রথম বদলে ফেলি আপনার স্বভাব।
সব সাধনা পূর্ণ হবে ভালো মানুষ হলে,
চরণতলে সুখ লুটাবে দুঃখ যাবে চলে।
ভালো মানুষ সাদা মনের সহজ সিধে কথা,
সৃষ্টি সেরা মানব মনে দেয়না কভু ব্যথা।
তার ছায়াতে হয় নিরাপদ অন্য সকল জন,
সাদা কালো সবই ভালো দেখে দুই নয়ন।
ভালো মানুষ বড় সোজা পানির মতো সরল,
হাতে দিলে বিষের শিশি ভাবেই না এ গরল।
ভালো মানুষ তৃপ্ত সদা অল্প কিছু পেয়ে,
দেখে না সে কার কিবা ধন বেশি তার চেয়ে।
ভালো মানুষ যদি কেঁদে তুলে দুটি হাত,
কেঁপে ওঠে সৃষ্টিজগত আরশ মাখলুকাত।
ভালো মানুষ সত্যবাদী কায়মনে চায় যা,
যায় না বৃথা মিলবে সুফল আল্লাহ্ দেবেন তা।
ভালো মানুষ পথ ভুলে না, সরল পথে চলে,
দেয় না আঘাত, মিষ্টি মুখে সঠিক কথা বলে।
এই দুনিয়ায় ভালো মানুষ বাড়ুক সে সুজন,
গড়তে হবে সোনার জীবন, আলোকিত মন।
ছড়িয়ে দিলাম ভালোবাসার ফুলের রেণু সবার মাঝে ;
কুড়িয়ে নিও সকাল-দুপুর নিশীথ রাতে বিকেল-সাঁঝে।
ভুলে ভরা অন্ধ প্রেমের অথৈ জলে ডুবে ছিলাম,
সবার মাঝে সুখ-বসন্তে ভালোবাসার গোলাপ দিলাম।
ভালোবাসা মিষ্টি-মধুর, শান্তি সুখে সাগর ভরে,
ভালোবাসায় দিচ্ছি সঁপে হৃদয় মণি-মুক্তা করে।
সুখ-বসন্তে গোলাপ চেয়ে বিঁধলো কাঁটা যেদিন বুকে,
ভালোবাসার বীজ ছড়ালাম, ভরলো বাগান পরম সুখে।
ভালোবাসা অমূল্য ধন, যায়না পাওয়া যথা-তথা,
সুগন্ধি ফুল মন মাতানো, রঙিন আলোয় শ্রেষ্ঠ কথা।
আবেগমাখা ভালোবাসা মায়ের কাছে প্রথম শেখা,
ভালোবাসা পেলো যে জন, অমর হলো সবার দেখা।
সৃষ্টি মূলে ভালোবাসা, সৃজন হলো বিশ্বজাহান,
ভালোবাসার আধার তিনি দয়ার সাগর আল্লাহ্ মহান।
যায় না পাওয়া ভালোবাসা অর্থবিত্তে কে না জানে ?
আনন্দ-রস, বেহেশতি সুখ, প্রেমিক-সুজন সবাই মানে।
ভালোবাসা স্বর্গ সুধা, হৃদয় জুড়ে লালন করি ;
ভালোবাসা ধারণ করে ভালোর মাঝে জীবন গড়ি।
ভালোবাসা বুক ভরে নাও, প্রাণ খুলে গাও সুর মিলিয়ে,
ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চতুর্দিকে দাও বিলিয়ে।
মিন্টু রহমান: বিগত ১০০ বছর নজরুলকে অসম্মান,অবহেলা ও অমর্যাদা করে রাখার প্রেক্ষিতে ও একটি সাম্প্রদায়িক হিন্দু গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে ১৯২১ ঢাকার সালে মুসলিম নবাব সলিমুল্লাহ কতৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও কলকাতা থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হিন্দু শিক্ষকদের একচ্ছত্র আধিপত্যের বদৌলতে শুধুমাত্র রবীন্দ্র সাহিত্য ব্যতীত নজরুল সৃষ্টিকর্মকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়।
অথচ ১৯২১ সালে কবিতা “ প্রলয়োল্লাস “ ও ১৯২২ সালে জানুয়ারীতে ঐতিহাসিক কবিতা “ বিদ্রোহী “প্রকাশিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রদায়িক হিন্দু শিক্ষক গণ পরবর্তীতে এই দুটি কবিতা ও ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হিন্দু+মুসলিম সম্মিলনের নিদর্শণ ও নজরুল রচিত ১ম কাব্যগ্রন্থ “ অগ্নিবীণা “ গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত কবিতা গুলোর মূল্যায়ণ করে তা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্তি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে “নজরুল সাহিত্য” কে একটি বিষয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি, বরং নজরুল কে একজন সাধারণ মাপের কবি হিসাবে গণ্য করে তাদের মৌলবাদী আচরণ প্রদর্শণ করেছেন— অথচ ওই রকম কবিতা রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু কাব্য সাধনায় কখনো রচনা করতে সমর্থন হয়নি-কবিতা গুলের নন্দনতত্ব পর্যালোচনা করলে এর সত্যততা মিলবে।
অপরদিকে স্কুল- কলেজে পাঠ্যসূচিতেও নজরুলের শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত কবিতা গুলো পাঠ্য করা হয়নি-কিন্তু পশ্চিম বংগের হিন্দু কবিদের রচিত অখ্যত-কুখ্যাত কবিদের কবিতা সংযোজন করতে ভুল হয়নি, এমনকি তথাকথিত পন্চকবি ( অখাদ্য) কবিরাও বাদ যায়নি। অমাদেরকে যে বিষয়গুলো খুঁজে বের করে ঐসব কর্মের বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে তা নিন্মে প্রদাণ করা হলোঃ——
(১) ঐ সময় শিক্ষা বোর্ডে পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন কমিটিরে কারা দায়িত্ব পালন তরেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ কাদের দ্বারা পরিচালিত হতো ও কলকাতার কোন কোন ব্যক্তির নির্দেশে বাংলা বিভাগ পরিচালিত হয়েছে। কাদের প্রদত্ত স্বাক্ষরে নজরুল বিষয় বা সাহিত্য পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্তি হয়নি। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত কেন নজরুল সাহিত্যকর্ম আবহেলা ও অমর্যাদা করা হয়েছে , সে সকল শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রণযণ করা।
(২) পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর হিন্দু শিক্ষক গণ কত জন কত বছর বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছে, ওদের নাম ও সময়কাল খুঁজে বের করা ,ওদের সংগে কয়জন মুসলিম শিক্ষক নিয়েগ পেয়েছে এবং তাদের সময়কাল জানতে হবে।সে সময়কার কবি সাহিত্যিক গণ নজরুল কে কতটা মর্যাদা প্রদাণের জন্য কাজ করেছে বা বিরোধিতা করেছে।
বিশেষ করে কবি গোলাম মেস্তফা ও কবি ফররুখ আহমদের এর নিস্ক্রিয়তা কতটুকু নজরুলের অবহেলায় অবদান রেখেছে যা তৎকালীন সাম্প্রদায়েক হিন্দু শিক্ষকদের সহায়ত প্রদাণ ও পেছন থেকে শক্তি জুগিয়েছে। ফলে ২৪ বছর পাকিস্তান সময়কালে নজরুল পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম কবি ও সাহিত্যিকদের দ্বারা নিগৃহিত হয়েছে।
(৩) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ও স্বাধীনতা লাভের পরবর্তিতে এদেশের কবি-সাহিত্যিকদের নজরুলের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা কতটুকু জাতীয় কবি হিসাবে সর্বক্ষেত্রে প্রদাণ করা হয়েছে , কিংম্বা নজরুল অধ্যাপক বা নজরুল চেয়ার প্রাপ্ত ব্যক্তিরা কতটুকু তাদের উপর অর্পিত করণীয় কাজ সম্পন্ন করেছে।
(৪) নজরুলের সৃষ্ট গদ্য ও পদ্য সাহিত্য একেবারে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গান বিষয়ে কেন সকল নজরুল চর্চাকারীরা অন্ধের মতো পড়ে রইলেন বা পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন একটু ভেবে দেখতে হবে।সম্ভবত নজরুলের মহৎ সৃষ্টিকে আড়াল করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।

এ রকম হাজারো জিজ্ঞাসা আজ নজরুল অনুরাগীগের কাছে প্রতিদিন আলোচিত হচ্ছে , তাই সমস্ত অজানা বিষয় গুলো চিহ্নিত করে নজরুলের প্রতি অসম্মান , অবহেলা ও অমর্যাদার কারণ নির্ণয় করে বাংলাদেশের প্রতিটি নজরুল অনুরাগীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে, এবং এ থেকে উত্তরণে এই অবহেলার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পাশাপাশি এই নজরুল বিরোধী দের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব ও ঘৃণা প্রকাশ করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, তবেই দ্রোহের কবি, সাম্যবাদী কবি, মানবতাবাদী কবি, সহ অবস্থানের কবি ও প্রৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি প্রকৃত সম্মান এ মর্যাদা প্রদর্শণ করা হবে।
জাতীয় নির্বাচন-২৪ এর পর দেশব্যপী আন্দোলন+
# তৃণমূল পর্যায়ে নজরুল অনুরাগী, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানকে অংশ গ্রহণের জন্য বিনীত আহবান জানাই- কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, কবিকুল শিরেমনি এবং মহা বিশ্বকবি ।
মিন্টু রহমান, নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এবং নজরুল সংগীতজ্ঞ।
মিন্টু রহমান: সব কিছু’রই শেষ কথা বলে কিছু নেই বলা হয়ে থাকে, তবে নজরুল সংগীত এর বেলায় কোন ভাবেই এই কথা প্রযোজ্য নয় নির্দ্বিধায় বলতে পারি–বাঙালী গীতিকবি তো অবশ্যই– ভিনদেশী, অন্যভাষী গীতিকবি দের বেলায় তা প্রযোজ্য হতে পারে ,কিন্তু নজরুল এর ব্যপারে এখনো কেউ এ কথা প্রমাণ করতে পারেনি– এখানেই নজরুল সবার চাইতে শ্রেষ্ঠতম গীতিকবি, সুরকার ,সংগীতস্রষ্টা, সংগীত পরিচালক ও সংগীতজ্ঞ হিসাবে বিবেচিত। তিনি কেন শ্রেষ্ঠতম বলে দাবীদার তা অবশ্যই ব্যখ্যা করা’র মত যথেষ্ট উপাদা ন তার গানে রয়েছে বলে এর পক্ষে সহজ ও অকাট্য প্রমাণ কিম্বা উদাহরণ দেয়া খুবই সহজঃ—
(১) নজরুল সংগীত এর বাণী,সুর, শব্দচয়ণ,ছন্দ, উপমা উতপ্রেক্ষা,চিএকল্প, বিদেশী শব্দ ও সুর আমদানি, বাণী’র সাথে সুরে’র সফল প্রয়োগ,উর্দু/হিন্দী বন্দিশ অবলম্বনে বাংলা খেয়াল এর সার্থক সৃষ্টি , পারস্যে’র কবি হাফিজ-রুমী’র কবিতা-গানের সফল অনুবাদ করা, বাংলা’য় গজল সৃষ্টি , আধুনিক গানের সৃষ্টি ইত্যাদি আরো কত কি যে বলে শেষ করা যায় না–এ জন্যই বলছি যে সব কথার শেষ না থাকলেও নজরুল সংগীত এর নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ বাণী ও সুর সৃষ্টি’র পর আর শেষ কিছু অাছে বলে মনে হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারেনা– এ ক্ষেত্রে আমি ১০০% নিশ্চিত।

(২) নজরুল নিজে গান লিখে সুর করে শিল্পীদের তুলে দিয়েছেন গ্রামোফোন রেকর্ড করার লক্ষে, তাই একজন শিল্পী তার নিজস্ব মেধা, দক্ষতা ও কন্ঠ চর্চা’র বদৌলতে যথাসম্ভব নজরুল এর কাছ থেকে গানটি’র গায়কী/স্টাইল অায়ত্ব করতে সক্ষম হয়েছে সত্য, কিন্তু নজরুল এর হুবুহু(true copy)গায়কী/স্টাইল কে অায়ত্বে আনতে কখনোই পারেনি যা সকলেই স্বীকার করবে–এরি প্রেক্ষিতে যেমন আংগুরবালা,ইন্দুবালা,কমলা ঝুরিয়া,হরিমতি, আব্বাস উদ্দিন, কে মল্লিক, যুথিকা রায়,ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিএ,শচীন দেব,জ্ঞাণ গোস্বামী,চিও রায়,গীরিণ চক্রবর্তী, কমল দাশ গুপ্ত ও অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত শিল্পী সহ স্মরনীয়-বরণীয় গুনীজনদের কথা বলতে হয়, নজরুল যে সবার গান শুনে খুশী হয়েছে এ কথা বলা যাবে না–আবার অনেকের গান শুনে মুগ্ধ ও হয়েছেন বললে ভুল হবেনা–তবে তার সম্পূর্ণ চাওয়া যে পূর্ণ হয়েছে এটা কিছুতেই বলাও ঠিক হবেনা , তবুও নজরুল এর অর্ডারি গান, নাটকের গান,সিনেমা’র গান, বিভিন্ন গ্রামোফোন কোং তে চাকুরীকালিন ও ট্রেইনার হিসাবে নিযুক্ত থাকার সময়ে’র গান তাকে পেটে’র ক্ষুধা’র করাণে রচনা ও সুর করতে হয়েছে-তবে নিজের মনের মত বা যে ভাবে তা গাওয়া দরকার ছিল তা কিন্ত পাননি–এখানেই তার creation/creativity প্রতিটি ক্ষেত্রে হোচট খেয়েছে বলা যেতে পারে, তাই নজরুল সংগীত এর সম্পূর্ণ গায়কী/স্টাইল যে আমরা ধরতে পেরেছি বা আয়ওে আনতে সক্ষম হয়েছি, এ কথা বলা ও ঠিক হবে না—নজরুল এর কন্ঠে গীত রেকর্ডে গানগুলো শুনলে তার গায়কী ও তার গানে কতটা পর্যন্ত স্বাধীনতা ভোগ করা যাবে তার কিঞ্চিত হিসাব হয়তো মিলবে, বিশেষ করে “পাষানের ভাংগালে ঘুম” এবং “দাড়ালে দুয়ারে মোর” গান দু’টি উল্লেখযোগ্য।
(৩) নজরুল সংগীতের স্বর্ণযুগে’র শিল্পীদের অনুকরণে সম্ভবতঃ দেবকন্ঠ মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার ধারালো কন্ঠে ও বাংলা গানে’র ভান্ডার বলে পরিচিত সুপন্ডিত বিমান মুখোপাধ্যায়(HMV) এর ট্রেনিং-প্রাপ্ত হয়ে নজরুল সংগীত কে মহা মর্যাদা’র অাসনে অবশ্যই পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন –যা আর কোন শিল্পী করতে এতটুকু চেষ্টা করেনি কিম্বা কারো কন্ঠে অাজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

(৪) আমাদের দেশের জনপ্রিয় নজরুল সংগীত শিল্পী সোহরাব হোসেন,খালিদ হোসেন,ফেরদৌসি রহমান, জুলহাসউদ্দিন, ফাতেমা তুজ জোহরা,ফেরদৌস আরা, ইয়াকুব আলী খান,ফেরদৌস আরা,রওশন আরা মোস্তাফিজ, সিফাত ই মন্জুর, খায়রুল অালম শাকিল,জোসেফ কমল রড্রিক্স,শবনম মুস্তারী, শহীদ কবির পলাশ সহ অনেক শিল্পী নজরুল সংগীতে’র আদি গ্রামোফোন রেকর্ড হুবুহু অনুসরণ করে ওই সব শিল্পীদের স্টাইলে গান করতে পেরেছে বা করেছে? যদি না-ই পেরে থাকে/ইচ্ছকৃত করেনি তবে এরাও ওতো গ্রামোফোন রেকর্ড অনুসরণ না করার অভিযোগে সমান দোষী বললে ভুল হবেনা–এ ছাড়াও আজকের শিল্পীরা কি নিজেদের ইচ্ছামত কাজকর্ম ও অলংকরণ করে গান গাইছে না?এরা তো “সুধীন দাস মার্কা” স্বরলিপি ভিওিক গান গেয়ে নজরুল কে আরো বেশী styl বিকৃত /অপমান করতে পারে না-তেমনি মানবেন্দ্র ও পারেনি, ধরুন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় যদি শ্রী সুধীন দাস এর শেখানো গান গাইতেন– বলুন তো নজরুল সংগীত কি আর নজরুলীয় স্টাইলে পরিবেশিত হতো, রবীন্দ্রসংগীত হয়ে যেতো না কি?
(৫) আমার মাথায় যতটুকু এসেছে এরি ধারাবাহিকতায় আপনারা এর পক্ষে বা বিপক্ষে আরো একটু এগুতে চেষ্টা করবেন, দেখবেন আপনাদের চোখে নজরুল সংগীত কে স্পষ্ট দেখতে ও উপলব্দি করতে সক্ষম হবেন, মনে রাখবেন যে নজরুল সংগীত উচ্চাংগ অংগের, তাই এর প্রতিটি শব্দে ও সুরে আলাপ, বিস্তার, তান-সার্গাম ও অলংকরণের চেষ্টা অজান্তেই এসে যায় একজন প্রকৃত, সুশিক্ষিত শিল্পী’র মনে-প্রাণে–হ্রদয়-জুড়ে এমনিতেই জেগে ওঠে সুরের মূর্ছনা–এর জন্য আদিযুগের অথর্ব, অযোগ্য শিল্পী দের(রেকর্ডকৃত অনেক শিল্পী’র গীত অনেক গানই শোনার অযোগ্য) অনুকরণে আমরা নজরুল-বিরোধি স্টাইল/গায়কী অলম্বনে এ যুগে এসে মুর্খে’র মত গান গাইতে পারিনা, অথবা বর্তমানকালে’র গৃহ শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে নজরুল সংগীত এর কবর রচনা করতে পারিনা–আমাদের কে আরো সচেতন ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিজ স্বার্থ ত্যগ করে নিরপেক্ষ ভাবে নজরুল সংগীতে’র স্বার্থে সুবিচার করে সমস্ত জটিলতা থেকে মুক্ত হতে হবে।
মিন্টু রহমান, নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এবং নজরুল সংগীতজ্ঞ।
আজি শ্রেষ্ঠ লোকের প্রাণনাশে
দুষ্ট লোকের প্রাণ হাসে
মনের সুখে গান গায় অবশিষ্ট লোকে উল্লাসে।
প্রাণ যায় প্রাণপ্রিয়ার তরে
প্রাণ টেকে না আপন ঘরে
স্বপ্নে বিভোর কখন আবার
অমাবস্যায় চাঁদ হাসে।
পালের গরু পাল ছেড়ে ঐ দূরদেশে
নামাজ পড়ে মুচকি হাসে দরবেশে।
দেখবো এবার কোন সে মাঝির নাও ভাসে।
কাল ছিল যে সিংহাসনে
আজ বসতি বৃন্দাবনে
কাল ছিল যার হাজার হাজার
আজ সে দু’এক পাই গোনে,
কাল ছিল যে প্রিয়ায় বুকে
মুখ গুঁজেছে মহা সুখে
আজ খাটিয়ায় চললো শুয়ে
মহা শ্মশান,গোরস্থানে।
এবার মহামারীর খেলা
কখন যে কার বিদায়বেলা
কেউ জানে না কবে আবার ফুটবে ফুল,
কারো আবার ফুটবে না ফুল
নড়বে না কেউ মোটে একচুল
নড়েচড়ে আবার কারো ভাঙবে ভুল।
ঘোল খেয়ে ঐ বোল বোলে দ্যাখ্ সরকারে
মিথ্যাবাদী মুখ ঢেকেছে দরকারে।
বুঝবে শেষে রয়না মুকুট
মিথ্যার উপর ভর ক’রে।
আজি মহাবিশ্বের ঘরে ঘরে কারবালা
খুব সহজে মিটবে না রে গা’র জ্বালা।
নাফরমানের ফরমানে এই জীবন যায়
কাল বুঝে ঐ কাকের মাংস কাকে খায়।
জয় জীবনের আসবে ফিরে
ফিরলে মানুষ ধীরে ধীরে
নয়তো এবার যাবার পালা
মাটির নীচের আস্তানায়।
মহাযাত্রায় শামিল হবে এই আশায়
মহামানব কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়।
একলা জীবন জয় হবে না,মন মাঝি!
তোমার বিচার হবে নিজ কাজের কাজী!
বিশ্বসেরা স্বার্থপরে নামাজ পড়ে
খোদায় হাসায়।
মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: বাংলা সাহিত্যের এক বিষ্ময় প্রতিভার নাম কাজী নজরুল ইসলাম |সঙ্গীত কবিতা, নাটক ও উপনাস্যের মতো সাহিত্যের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো অবাধ বিচরণ | নিজেই লিখতেন গান, দিতেন সেইসব গানের সুর এবং সেইসাথে গাইতেন গানও | এছাড়াও পাশাপাশি সাংবাদিক হিসাবে ধরেছিলেন কলম এবং করেছিলেন নানা আন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য |
ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কারণের তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয় |
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জন্ম হয় ২৪শে মে ১৮৯৯ সালে, বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে | তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন | কবি ছিলেন তাদের ষষ্ঠতম সন্তান |
তাঁর বাবা ছিলেন আসানসোলের এক স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধু | নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন কাজী সাহেবজান | ছোটবেলায় তাঁর ডাকনাম ছিলো “দুখু মিয়া” যা পরবর্তীকালে সাহিত্য জগতে তাঁর ছদ্মনাম হয়ে ওঠে |
তাঁর পারিবারিক অবস্থা প্রথম থেকেই তেমন একটা ভালো ছিলোনা | চরম দারিদ্রের মধ্যেই তাঁর বাল্য, কৈশর ও যৌবন বয়স কাটে |
কিন্তু সীমাহীন এই পারিবারিক দুঃখ-দূর্দশার মধ্যেও তিনি আজীবন বাংলা কাব্য ও সাহিত্যচর্চা করে গিয়েছিলেন | কোনো বাঁধাই তাঁকে কোনোদিনও দাবিয়ে রাখতে পারেনি |
তিনি তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন গ্রামেরই মসজিদ পরিচালিত একটা ধর্মীয় স্কুল থেকে | সেখানে তিনি কোরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্বের বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন |
পরে, ১৯০৮ সালে তার বাবা কাজী ফকির আহমদের মৃত্যু হয় | সেইসময় তার বয়স ছিলো মাত্র নয় বছর । বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে তাঁর শিক্ষা বাধাগ্রস্থ হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে তাকে নেমে যেতে হয় জীবিকা অর্জনের কাজে |
সেইসময় তিনি মক্তব থেকেই নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন আর এরপর একইসাথে তিনি কাজ করেন হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে |
এইসব শিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি অল্পবয়সেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন, যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্য তথা সঙ্গীতে ইসলামি ঐতিহ্যের রূপায়ণ করতে সহায়ক হয়ে ওঠে |
কিন্তু কবি সেই কাজ বেশিদিন করতে পারেননি | অল্প কিছুদিন এইসব করেই তিনি সেই সমস্ত কাজ করা ছেড়ে দেন এবং নিজেকে শিল্পীরূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাংলার রাঢ় অঞ্চলের এক ভ্রাম্যমান নাট্যদলে যোগদান করেন |
সেই দলের সাথে তিনি বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেতেন আর তাদের থেকে অভিনয়, গান ও নাচ প্রভৃতি শিখতেন | এছাড়াও কখনো কখনো নাটকের জন্য গান ও কবিতাও তিনি লিখে দিতেন তাদের সাহায্যের কথা ভেবেই ।
এখানে একটা কথা বলে রাখি যে, কাজী নজরুল ইসলাম কিন্তু শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মগ্রন্থই অধ্যায়ন করেননি; সেইসাথে তিনি হিন্দু পুরান সহ বহুবিধ শাস্ত্রও অধ্যায়ন করেছিলেন | তিনি দুই ধর্মকেই সমানভাবে শ্রদ্ধা করতেন | তাঁর কাছে কোনো ধর্মই ছোট কিংবা বড় ছিলোনা |তবে তিনি মনে প্রাণে মুসলিম ছিলেন।
তাঁর উদারতার জন্যই হয়তো আমরা তাঁর কবিতা, নাটক ও গানের মধ্যে দুই ধর্মেরই সমন্বয় খুঁজে পাই |
যাই হোক আবার আগের কথায় ফিরে আসি !
তিনি নাট্যদলে থাকাকালীন প্রচুর লোকসঙ্গীতের রচনা করেন | যারমধ্যে অন্যতম কিছু হলো- দাতা কর্ণ, কবি কালিদাস, আকবর বাদশাহ, রাজপুত্রের গান, মেঘনাদ বধ, বিদ্যাভূতুম প্রভৃতি | এছাড়াও তিনি হিন্দু দেবী কালীকে নিয়ে প্রচুর শ্যামা সঙ্গীতও রচনা করেন সেইসময় | যারজন্য অনেক ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ তাঁকে কাফেরও পর্যন্ত বলেছিলো |
এই বিষয়ে তিনি একবার বলেন – “আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি”
১৯১০ সালে নজরুল ইসলাম পুনরায় শিক্ষাজীবনে ফিরে যান | প্রথমে তিনি ভর্তি হন রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুলে এবং পরে মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে | আজ বর্তমানে অবশ্য মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল “নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন” নাম পরিচিতি লাভ করেছে |
কিন্তু সেইসব স্কুলে পড়ার পরেও তিনি কোনোটাতেই বেশিদিনের জন্য পড়তে পারেননি | আর্থিক সমস্যাই তাঁর সেখানে পড়াশোনার শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় | তাই ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ার পর তাঁকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয় |
এরপর ১৯১৭ সালের শেষদিক থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর কাজী নজরুল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে একজন সেনা হিসাবে কাজ করেন | প্রথমে তিনি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীকালে প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত নওশেরা প্রদেশে যান |
তারপর যখন তাঁর প্রশিক্ষণ শেষ হয়, তখন তিনি করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন । শোনা যায় তখন নাকি তিনি রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবীদের থেকে ফারসি ভাষা শেখেন, সঙ্গীতানুরাগী সহসৈনিকদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতচর্চা করেন এবং একই সঙ্গে সমানভাবে সাহিত্যচর্চাও করেন ।
তিনি করাচির সেই সেনানিবাসে বসে রচনা করেন বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী, মুক্তি, ব্যথার দান, ঘুমের ঘোরে নামক ইত্যাদি সব গদ্য ও কবিতা | এত দূরের এক সেনানিবাসে কাজ করা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার পাঠক ছিলেন এবং গ্রাহকও |
তাঁর পছন্দের কিছু সাহিত্য পত্রিকা ছিলো যথাক্রমে- প্রবাসী, ভারতী, মর্ম্মবাণী এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা | অবশেষে ১৯২০ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, তিনি সেনার জীবন ত্যাগ করে পুণরায় কলকাতায় ফিরে আসেন |
কলকাতায় ফিরে এসে কাজী নজরুল ইসলাম একইসাথে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু করেন | কলকাতায় তাঁর প্রথম আশ্রয় ছিল ৩২নং কলেজ স্ট্রীটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে | তিনি সেই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে অনেক কাজ করেন |
এরপর যখন তাঁর সদ্যরচিত উপন্যাস ‘বাঁধন-হারা’ এবং ‘বোধন’, ‘শাত-ইল-আরব’ ও ‘বাদল প্রাতের শরাব’ নামক প্রভৃতি কবিতা; মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা ইত্যাদি সব নামকরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন তা বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে |
জানা যায়, ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে নজরুল ইসলাম একবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান | ব্যাস ! তখন থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় কুড়ি বছর, বাংলার এই দুই প্রধান কবির মধ্যে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ থাকে | তাঁরা একে অপরকেই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন এবং তৎকালীন রাজনীতি ও সাহিত্য নিয়েও মাঝে মাঝে আলোচনা করতেন বলে শোনা যায় |
১৯২১ সালে একবার কবি নজরুল ইসলাম, মুসলিম সাহিত্য সমিতির গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে যান | আর সেখানেই তিনি প্রমীলা দেবীকে প্রথমবার দেখেন | যার সাথে পরে ভালোবাসা হয় এবং বিবাহ করেন।
কিন্তু এর আগে নজরুলের বিয়ে ঠিক হয়, আলী আকবর খানের শালী নার্গিস আসার খানমের সাথে | বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আলী আকবর খান তাঁকে শর্ত দেন ঘরজামাই হিসাবে থাকার জন্য, যেই শর্ত তিনি মোটেই মানেননি |
অবশেষে বাসর সম্পন্ন হবার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান কবি । সেইসময় তিনি একদম অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন এবং প্রমিলা দেবীই তাঁকে পরে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলেন |
যখন প্রমিলা দেবী এবং নজরুল ইসলামের সন্তান হয় তখন কবি নিজেই তাদের সন্তানদের নামকরণ বাংলা এবং আরবি উভয় ভাষার সমন্বয়ে করেন |

বিয়ের ঠিক কিছু বছর পর থেকেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু হয় | কিন্তু সেইসময়ও তাঁর অসুস্থতা অনেকবারই ঠিক হয়ে যায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে|
কিন্তু ১৯৪২ সালে যখন কবি আরো একবার শারীরিক অসুস্থতার কবলে পরেন তখন তাঁকে আর আগের মতো সুস্থ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি কারণ তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং তাঁর মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে যায় |
১৯৫২ সালে সেইজন্য কবিকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয় | সেখানে তিনি চার মাস ছিলেন, কিন্তু তাতেও তাঁর মানসিক অবস্থার সামান্যটুকুও উন্নতি হয়নি |
এইভাবেই অনেক চিকিৎসা করানোর পর সবশেষে ধরা পরে যে, কবির মস্তিষ্কে নিউরন ঘটিত সমস্যা হয়েছে আর সেই সমস্যাকে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্বারা ঠিক করা একদম অসম্ভব | তিনি কোনোভাবেই আর সুস্থ হতে পারবেন না।
তবে কবিকে পারে আঘাত করে অসুস্থ করা হয়েছে বলেও মানুষ বিশ্বাস করে |
তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালের ২৪শে মে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় | কবির বাকি জীবনটা এরপর বাংলাদেশেই কাটে এবং ১৯৭৬ সালে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় |
অবশেষে, দীর্ঘ রোগভোগের পর সেই বছরই অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন |
হে মহান আল্লাহ পাক, রাব্বুল আলামিন!
তোমার নূরের আলোয় উজ্জ্বল আসমান ও জমিন।
তোমার মহা ভূ-মণ্ডলে অতি ক্ষুদ্র মোরা,
স্ব-মহিমায় জাগ্রত ,তোমার আসন জগৎ জোড়া ।
রোদ্দুরে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, জোছনায় সুখে হাসি,
কতকিছু তুমি দান করেছ, তোমাকেই ভালবাসি ।
তোমার শক্তির একটি বিন্দু মহা সিন্ধু সম ,
দিয়েছো কত প্রেম ভালবাসা,দিয়েছো যে প্রিয়তম।
কুদরত তব বোঝা বড় ভার, দিয়েছো চোখের মণি
কর্ণ দিয়েছো বলেই আমরা ভালো মন্দ শুনি ।
মস্তকে কালো ঘন চুল দিলে বুকে দিলে মোহ মায়া,
অন্তরে যেন জাগ্রত থাকে, তোমার নূরের কায়া ।
আমরা হাটি মাটির পরে কোথা থেকে জল পড়ে?
দেখিনা কিছুই, অবিরত কেন গাছপালা শুধু নড়ে!
শুভ্র ধুসর ধোয়ার কুণ্ডলী কোথা যেন মিশে যায়,
সবকিছু প্রভূ বিকশিত হয় তোমার মহিমায় ।