শিবলী সাদিক: পোল্যান্ড! ইউসুফ চাদিদ , এই পোল্যান্ডেরই পোজনান মসজিদের ইমাম ! !
মুসলিম নাগরিক সমিতির প্রধান টমাস মিস্কোভিচ এই পোল্যান্ডেরই ! ! !
আর আছেন আগাটা নালবোরচিক, ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামতত্ববিদ ! ! ! !
১০ বছর ধরে পোলিশ ক্যাথলিক গির্জার ক্যালেন্ডারে ২৬ জানুয়ারি দিনটি ইসলাম দিবস হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে৷
এই পোল্যান্ডেই মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছেন আর্টুর কনোপাকি৷
প্রায় ১,০০০ বছর আগে পিয়াস্ট রাজবংশের অধীনস্থ রাজ্য হিসাবে পোল্যান্ড সর্বপ্রথম সংগঠিত হয়। ষোড়শ শতকের শেষভাগকে পোল্যান্ডের স্বর্ণযুগ বলা হয়, যখন জাগিয়েলনীয় রাজবংশের অধীনে পোল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ, সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৭৯১ সালে পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া কমনওয়েলথের সংসদ, যা সেইম নামে পরিচিত, ইউরোপ মহাদেশের প্রথম রাষ্ট্র হিসাবে মার্কিন সংবিধানের আদলে একটি সংবিধান রচনা ও প্রবর্তন করে। কিন্তু এর অল্প কিছু কাল পরেই পোল্যান্ডের প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও প্রুশিয়া পোল্যান্ডকে গ্রাস করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর পোল্যান্ড আবার স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অবশ্য পোল্যান্ড তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনত কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী পোল্যান্ড এ পরিণত হয়।

রিবনিক:
রিয়াল মাদ্রিদ এবং পোলিশ ন্যাশনাল ফুটবল দলের গোলরক্ষক জেরী ডুডেক এর রিবনিক, রুদা নদীর তীরে তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার পরিবেশ থাকাতে “সবুজ” শহর খ্যাতি ভোগ করছে পোল্যান্ডের যে শহরটি , তারই নাম রিবনিক।
জার্মান রাজনীতিবিদ অটো লন্ডসবার্গের রিবনিক, ১৯৪৫ থেকে ১৯৮৯ পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে থেকে শহরটিকে দক্ষিণ পোল্যান্ডের একটি প্রধান খনির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
পোলিশ পিয়ানোবাদক পিয়াত পেলেকজানি আর লিডিয়া গ্রিসোলোনিয়ার রিবনিক যেখান থেকে ১ থেকে ২ ঘন্টার ড্রাইভ করলেই পাওয়া যাবে বেজিকিডি পর্বতমালা, স্কিইংয়ের জন্য একটি জনপ্রিয় বিনোদনমূলক এলাকা।
পোলিশ ফুটবলার Krzysztof বডিজিওনি এই রিবনিকেরই !
ক্রিগ্মামারিনে অ্যাডমিরাল হারমান বোহেম ও কিন্তু এই রিবনিকের ! !
২০০৮ সালের বিজয়ী সুপারস্টার টমাস গদজ এই রিবনিকের ! ! !
অভিনেতা ওলেক কাপ্পাও এই রিবনিকের ! ! ! !
এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন থেকে পোল্যান্ডের একটি সীমান্তবরতী ( চেক রিপাবলিক ও স্লোভাকিয়া) শহর রিবনিকের এই হিচ হাইকিং ( বাই রোড) থেকেই আমি এস্তোনিয়ান, লাটভিয়া্ন, লিথুয়ানিয়ান আর পোলিশ জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সম্পর্কে আর এই দেশগুলোর বিশালতা, ভউগোলিক দর্শনীয় স্থান আর সংস্কৃতি সম্পরকে অভিজ্ঞতা নিতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ্।
এটি ছিল চ্যালেঞ্জিং , প্রায় ২০০০ কি,মি,। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় হয়েছিল নব সংযোগ। প্লেনে সময় লাগে প্রায় ৩ঃ৩০ মিনিট, তবে রিবনিক পর্যন্ত নয়, কাতওিচে পর্যন্ত।
আমি শিখেছি ধৈর্য এবং নমনীয় হতে, প্রবৃত্তিকে বিশ্বাস করতে, শিখেছি পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে, এবং আর উপভোগ করেছি প্রতিটি মুহূর্ত করি, যা সবসময় সহজ নয় আর সম্ভবও নয়।
২০০৯ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে গিয়েছিলাম এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিনে, এস্তোনিয়ান গার্মেন্টস ইম্পোরটিং কোম্পানি সুভা এর ডিরেক্টর অ্যালেক্স এর সাথে এক ব্যবসায়িক মিটিঙে।
তাল্লিন থেকে পরবর্তী মিটিং ছিল এই পোল্যান্ডেরই “সবুজ” শহর খ্যাত রিবনিকে, আমার পোলিশ ( গার্মেন্টস ব্র্যান্ডের ) হোস্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্টের সাথে। আগে থেকে কমিউনিকেশন চলছিল হোস্ট কোম্পানির পারচেজ ডিপার্টমেন্টের বারবারা কুবিয়েনিয়েকের সাথে, যে খুব ভাল ইংরেজী জানে।
ফ্রাঙ্কফুর্ট আর তাল্লিনে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সফরে হয়ে পরেছিলাম পুরোপুরি ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত ( মানসিক ভাবে! শারীরিকভাবে নয় কিন্তু হুউউউ )। তারপরও যেতে হবে পোল্যান্ডের রিবনিকে, ফর ব্রেড অ্যান্ড বাটার।
ব্যবসায়িক সফরে্র কারনেই করতে হচ্ছিল বিমান ভ্রমণ, কর্পোরেট লেভেলের থাকা খাওয়া, চলা ফেরা।
আর তাই মনে মনে ভাবলাম কেমন হয় আকাশ পথে ভ্রমণ না করে, সড়ক পথে ভ্রমণ করলে ? এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন থেকে পোল্যান্ডের রিবনিক পর্যন্ত হিচ হাইকিং করলে ! ব্যাকপ্যাকিং ! !
যেই ভাবা সেই কাজ। এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিনের সকল ব্যবসায়িক কাজ শেষ করেই সাথে, আমার প্রিয় গ্যাজেট এসার ল্যাপটপ, এইসটিসির ডূপডের পিডিএ আর সনি ডিজিটাল ক্যামেরা সহ কিছু হালকা কাপড়ের সাথে শুধুমাত্র এক সেট ফর্মাল ড্রেস সাথে নিয়ে) আর কিছু প্রয়োজনীয় ফাইল সাথে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম তাল্লিনের বাস স্টেশনের দিকে।
ইচ্ছে আছে সময় ও সুযোগ পেলে এস্তোনিয়ার ভ্রমণ সম্পর্কে ও লিখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্।
তাল্লিন থেকে রিগা তে আপনি বিভিন্ন ভাবে যেতে পারেন, বিমানে, বাসে, ট্রেনে এমনকি ক্রুজেও।
সময়টা ছিল জুলাই মাস। গ্রীষ্মকাল। আমি গিয়েছিলাম বাসে। তাল্লিন্ন বাস ষ্টেশন থেকে রিগা পর্যন্ত। খুজতে লাগলাম সবচেয়ে সস্তায় কিভাবে রিগা পর্যন্ত যাওয়া যায়, অনেক খুজে পেলাম তাল্লিন্ন বাস ষ্টেশনে লাক্স এক্সপ্রেস এর ডাবল ডেকার বাসগুলো। আমার কাছে সস্তায় ভাল লেগেছিল লাক্স এক্সপ্রেস এর বাসগুলোই। কিন্তু আমাদের দেশের মত সস্তার তিন অবস্থা নয়।
লাক্স এক্সপ্রেস কোচ আরো সুবিধাসমুহঃ
১। ইন্ডিভিজুয়াল টাচ স্ক্রীন মিডিয়া ডিভাইস (চলচ্চিত্র, গেমস, সঙ্গীত, ইন্টারনেট)।
২। গরম পানীর ব্যবস্থা।
৩। বিনামূল্যে পানির বোতল।
৪। এয়ার কন্ডিশনার
৫। সীট বেল্ট সহ প্রতিটি সীট
৬। যারা ভাবেন ইউরোপ মানেই মদ আর মদ, তাদের জন্য দুঃসংবাদ, এই বাসে ধুমপান আর অ্যালকোহল পান করার অনুমতি নেই
তাল্লিন্ন বাস ষ্টেশনে লাক্স এক্সপ্রেসে
– পেয়েছি আরামদায়ক প্রশস্ত বসার সিট
– লেড টিভি
– বাসের ভিতর হাই স্পীডের ফ্রী ওয়াইফাই, নো সাফারিং, নো বাফারিং।
তাল্লিন থেকে রিগা তে ৪ ঘন্টা ২৫ মিনিটের পথ। লাক্স এক্সপ্রেস লাউঞ্জ এ না গিয়ে আপনি যদি লাক্স এক্সপ্রেসে যান, তবে ৫ ইউরোতে ও যেতে পারবেন, যদি সিট খালি পান।
তাল্লিন্ন বাস ষ্টেশনে লাক্স এক্সপ্রেসে ল্যাপ্টপ চার্জের জন্য সিটের পাশে মাল্টি প্লাগ (২২০ ভি )
– বাসের ভিতর পরিষ্কার ওয়াশ রুম (শৌচাগার)
– পেয়েছি দুর্দান্ত স্পীড, কিন্তু সিটে বসে কফি খেলেও আপনার কাপড়ে পরবে না। বুঝতে পেরেছেন !!! কি রকম দক্ষ ড্রাইভার আর কি রকম রাস্তা !
– আর ফ্রীতে পেয়েছি অসাধারন মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য
আমি আগে থেকে টিকেট কেটে রাখিনি, বাস ষ্টেশনে গিয়েই কেটেছিলাম, আর তাই ভাড়াও লেগেছিল একটু বেশি, ২০ ইউরো। কিন্তু আপনি যদি আগে থেকে ( ৩ দিন বা ৭ দিন বা ২০ দিন), কাউন্টারে বা অনলাইনে টিকেট কিনেন, তবে ৮ ইউরো থেকে ১২ ইউরোর মাঝেও পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি হিসেব করেন ২০ ইউরো মানে ১৬০০ টাকা???? এতো অনেক টাকা। কিন্তু না অনেক টাকা নয়। বাল্টিক দেশগুলোতে যারা সবচেয়ে নিম্ন আয়ের কাজ করে্ন, তারাও পায় ঘণ্টায় ২ থেকে ৫ ইউরো, যারা স্কেন্ডিনেভিয়ান আর বেনেলুক্স দেশগুলোতে সবচেয়ে নিম্ন আয়ের কাজ করেন, তারা পায় ঘণ্টায় ১০ থেকে ২০ ইউরো আর যারা সাউথ ও ইষ্ট ইউরোপের দেশগুলোতে সবচেয়ে নিম্ন আয়ের কাজ করে, তারা পায় ঘণ্টায় ৬ থেকে ১৫ ইউরো। তবেই বুঝুন ! ! ! সবচেয়ে নিম্ন আয়ের কাজ করে ২ বা ৪ ঘণ্টার আয়ের টাকা দিয়ে আপনি বাসে করে সস্তায় কিন্তু সবেচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে এক দেশ থেকে আরেন দেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন !!!!!
পারব কি আমি আমার দেশে বা সার্কের কোন দেশে ? সবচেয়ে নিম্ন আয়ের কাজ করে ২ বা ৪ ঘণ্টার আয়ের টাকা দিয়ে বাসে করে সস্তায় কিন্তু সবেচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে এক দেশ থেকে আরেন দেশ ভ্রমণ করতে !!!!!
অথচ একজন খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে, আমাকে আমার দেশেও ট্যাক্স দিতে হয়, আর স্পেনেও আমাকে ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির পার্থক্য একটু বিশালই বটে।
মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এটাই প্রার্থনা করি, ইনশাআল্লাহ্ একদিন আমার দেশ বাংলাদেশেও আমরা, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা সর্বনিম্ন ব্যয় করে সবেচেয়ে বেশি নাগরিক সুবিধা পাব।
ছিলাম বাসের দোতলাতে, একদম সামনে, ড্রাইভারের ঠিক মাথার উপরে, ঘুমিয়ে পরেছিলাম রিগার কাছা কাছি আসার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখি যেন বসে আছি ৫০০” লেড টিভির সামনে। কি অসাধারণ দৃশ্য সূর্য মামা অস্ত যাচ্ছে ! লাল টকটকে নীল আকাশের মাঝে আর নিচে ধূসর সবুজ ! ! ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা সেই মনমুগ্ধকর দৃশ্যটি ! ! !
ভাবলাম সন্ধ্যা হয়েছে সূর্য তো অস্ত যাবেই। আচমকা সাথে থাকা পিডিএ ( এইচটিসি এর ডুপড) এর দিকে চোখ যেতেই ছানাবড়া ! ! !
– রাত ১১ টা বাজে ! সূর্য মামা অস্ত যাচ্ছে ! ! !
– ছোটবেলাতে তো পরেছিলাম উত্তর গোলার্ধ।
– ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি তো এখন উত্তর গোলার্ধের কাছেই, হাহাহাহা নর্থ পোল থেকে মাত্র ১৬০০ কি,মি, দূরে ! ! ! কার ড্রাইভে মাত্র ১৮ ঘন্টা ! ! !
– আর তাইতো সূর্য অস্ত যাচ্ছে রাত ১১ টায় আর সূর্য উঠতে দেখেছি মধ্য রাতে ! রাত ৩ টায়।
তাল্লিনের বাস স্টেশন থেকে চলে এসেছিলাম লাটভিয়ার রাজধানী রিগায়।

আপনদের সময় , সুযোগ আর ইচ্ছে হলে,আমার লাটভিয়া ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরতে পারেন:
অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমার লেখাতে ভুল্ভ্রান্তি গুলোর কারণে, আমি তো আর প্রফেশনাল লেখক নই, এরপর আবার সাহিত্যের শব্দ চয়নে অনেক দুর্বল।

দীর্ঘ পথের এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিনের থেকে লিথুয়ানিয়ার কাউনাস হয়ে, পোল্যান্ডের ওয়ারস আর লজ হয়ে পৌঁছেছি কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই এই রিবনিক এর কাছাকাছি ৬০ কি।মি। দূরে কাতোউচে তে হিচ হাইকিং করেই।
লিথুয়ানিয়ার ভ্রমণ সম্পর্কেও লিখার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ্। চলবে–
Shibly Sadiq , Entrepreneur , Blogger , Activist, Mentor
shiblysadiq@hotmail.com
জাপান- প্রশান্ত মহাসাগরের একদম পূর্ব কোণে ৬৮০০ টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি দেশ; কিন্তু এই দেশটি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের বিস্ময়ের সীমা নেই। প্রযুক্তির মুন্সিয়ানায় গোটা বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে জাপানিরা, কিন্তু তাদের সাফল্যের দৌড় কেবল কাঠখোট্টা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, শিল্প সাহিত্যে চিত্রকলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ঈর্ষণীয় বিচরণ। জাপানের চলচ্চিত্র অস্কার পেয়েছে, কুস্তির জগতে যুক্তরাষ্ট্রের পর তাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি প্রসার, সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের এমনই কিছু বিচিত্র মজার তথ্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
সূর্যোদয়ের দেশ জাপান শুধু একটি অনিন্দ্য সুন্দর দেশই নয়, এর ইতিহাস-ঐতিহ্যও বেশ সমৃদ্ধ। বছরের পর বছর ধরে নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের উন্নয়নের চূড়ায় নিয়ে গেছে।
এ দেশের নারীদের গড়আয়ু প্রায় ৮৭ বছর এবং পুরুষের গড় আয়ু প্রায় ৮০ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী জাপানের লোকেরা ৭৫ বছর পর্যন্ত কোন ধরনের দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই বেঁচে থাকেন। বিজ্ঞানীরা এই দীর্ঘায়ুর কারণ হিসেবে জাপানিদের খাদ্যাভ্যাসের কথা বলছেন।

জাপানিরা খুবই খাবার সচেতন। খাবারের জন্যই তারা সুস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন করে। দেশটিতে ঘোড়ার মাংসের আলাদা কদর রয়েছে। রান্না করা ঘোড়ার মাংসকে তারা বলে ‘বাসাশি’। জাপানের রেস্তোরাঁগুলোতে ঘোড়ার মাংস অহরহই মেলে। ১৯৬০ সালের পর থেকে জাপানে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, একসময় দেশটিতে কৃষিকাজ এবং পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ঘোড়ার সংকট দেখা দেয়।
জাপানে কখনোই কোনো দোকানে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে কোনো পণ্য নিয়ে দর কষাকষি চোখে পড়ে না। দেশটিতে পণ্য নিয়ে দামাদামি করার কোনো সুযোগও নেই। সব জায়গায়ই কোনো পণ্যের ওপর তার দরদাম নির্ধারিত থাকে। এমনকি, রাস্তার ফুটপাতের দোকানেও নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে হয়। তাই কোনো পণ্য কেনার পর এটি নিয়ে দ্বিতীয়বার যাচাই করার কোনো সংস্কৃতি দেখা যায় না দেশটিতে।
নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ করার জন্য “ওভারটাইম” নামে একটি শব্দ প্রচলিত দুনিয়াজুড়ে, শুধুমাত্র জাপানে এই শব্দটির কোন অর্থ নেই। জাপানিরা স্বভাবগতভাবেই অফিসের সময় শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে কাজ নিয়ে। ঊর্ধতন কর্মকর্তার আগে অফিস ত্যাগ করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না তারা, যত জরুরী তাড়াই থাকুক না কেন ঘরে ফেরার।“ওভারটাইম” শব্দটি না থাকলেও জাপানি ভাষায় এরচেয়ে অনেক গুরুতর একটি শব্দ আছে- “কারোশী” যার অর্থ “অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু!’’ ব্যাপারটি শুনতে আজব মনে হলেও জাপানের প্রেক্ষাপটে এটি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেখানে প্রতিবছর গড়ে ১০,০০০ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত কাজের চাপে, ডায়াগনোসিসে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়- “কারোশী”!
মুরসালিন হোসাইন: ফিনল্যান্ড, ইউরেশীয় মহাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি সামুদ্রিক এবং মহাদেশীয় জলবায়ু উভয়ের মধ্যে অবস্থিত।
ফিনল্যান্ডের আবহাওয়া জুলাই সবচেয়ে উষ্ণতম এবং ফেব্রুয়ারীতে ঠান্ডা। ফেব্রুয়ারীটি ফিনল্যান্ডের শুষ্কতম মাসেও রয়েছে, তবে আগস্টের আবহাওয়া বছরের সর্ববৃহৎ সময়।
ফিনল্যান্ডের শীতকাল দীর্ঘ এবং ঠান্ডা হয়। বিশেষত ফিনল্যান্ডের উত্তরে, বছরে 90 থেকে 120 দিনের জন্য স্থলভাগে বরফ খুঁজে পেতে পারেন।
সাধারণত ফিনল্যান্ডে শীতকাল শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর থেকে, সামার এর পরে তাপমাত্রা নামতে থাকে, 5 ডিগ্রি থেকে 8 ডিগ্রি মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করে। তারপর ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, এবং মার্চ এই চার মাস – 10 থেকে 15 ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করে। ফিনল্যান্ডে শীতের মধ্যে তাদের প্রধান উৎসব শুরু হয় 24 25 26 ডিসেম্বর যেটার নাম খ্রিস্টানদের বড়দিন। তার জানুয়ারি মাসের 1 তারিখ হ্যাপি নিউ ইয়ার নামে এই দিনটিতে বিশাল উদযাপন করা হয়।

শীত কালীন সময় বাসায় + 25 ডিগ্রি তাপমাত্রা রাখা হয় সে কারণে মানুষের কোন সমস্যা হয় না, অতঃপর বাহিরে রাস্তাঘাট বরফে আচ্ছন্ন থাকে মানুষের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য ভালোভাবে তদারকি করা হয় ।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রাস্তায় ছোট ছোট পাথর ছিটানো হয় যাতে গাড়ি চলাচলের সময় এক্সিডেন্ট থেকে বাচা যায় পাশাপাশি গাড়ি দিয়ে বরফ পড়ার সাথে সাথে বরফ গুলো পরিষ্কার করা হয়। ফিনল্যান্ডের জাতীয় খেলা হল আইস্ হকি, তাই বরফ পড়লে ছোট ছেলেমেয়েরা বাইরে খেলতে চলে যায়। শীতকালীন সময় স্কুল কলেজ খোলা থাকে।
করোনাভাইরাস মহামারির দীর্ঘদিন পর ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ১ নভেম্বর থেকে ১০টি কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য থাইল্যান্ডের দরজা খুলে দেওয়া হবে।
এসব দেশ থেকে পর্যটকরা থাইল্যান্ডে এসে কোয়ারেন্টিনে না থেকেই ঘুরতে পারবেন। তবে তাদের করোনা সনদ থাকতে হবে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু করোনা সনদ থাকলেই হবে না, ১০টি কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের পর্যটকদের সঙ্গে রাখতে হবে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেটও। বিমানবন্দরে ফের তাদের করোনা পরীক্ষা করা হবে। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে থাই নাগরিকদের মতোই তারা দেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও চীন। তবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্রমশ পর্যটনের বিষয়টি আরও সহজ করে দেওয়া হবে। ১ ডিসেম্বর থেকে আরও বেশি দেশের জন্য পর্যটনের দরজা খুলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিনোদন পার্কও খুলে দেওয়া হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। ওই সময় খোলা হবে অ্যালকোহল বিক্রির দোকানও।
ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শুরু হওয়ার পরে যদি দেখা যায় যে, তাতে দেশের করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে, তাহলে ফের পর্যটকদের জন্য দেশের দরজার বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরীক্ষামূলকভাবেই ১ নভেম্বর থেকে পর্যটন শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০২১ সালের প্রথম আট মাসে থাইল্যান্ডে মোট বিদেশি গেছে ৭০ হাজার। তাদের সবাইকে থাইল্যান্ডে নেমে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। অথচ সেখানে ২০১৯ সালে এক বছরে চার কোটি পর্যটক গিয়েছিলেন।
আমীর জাহিদ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ঢাকা থেকে জীপগাড়ীতে চড়ে নেত্রকোণা শহর হয়ে নেত্রকোণার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের ঘাট থেকে জলযানে চড়েছি। সিলেট বেসিনের হাওরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। দু’ধারে দিগন্তবিস্তৃত নীল জল। মাঝে মাঝে জলজ গাছগুলি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো হাঁসের দল, কখনো জলে ভাসা পদ্ম, কখনো মাথার উপর উড়ন্ত পাখী, পানির উপরে দ্রুত ধাবমান নৌকা, বজরা, বা স্পীডবোট পাশ কেটে যাচ্ছি। উদ্দেশ্য হিজল করচের বন। সেখানে একটু জিরিয়ে তারপর যাব নিলাদ্রি। অন্ধকার নামার আগে ফিরতে হবে, নতুবা সাগরের মত হাওরে দিক হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা, কিংবা নলখাগড়ার বনে আটকে ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার। এত সুন্দর প্রকৃতি হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস হতো না। ওয়াচ-টাওয়ার ঘিরে হিজল করচের বনে আনন্দের হাট!

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। সিলেটের সুনামগঞ্জে মোট ফসলি হাওরের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩৩টি। তার মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরই সব চাইতে বড়। এ হাওর উপজেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ১৯৯১ সালে গৃহীত রামসার কনভেনশন অনুযায়ী টাংগুয়ার হাওরকে ওয়ার্লড হেরিটেজ রামসার সাইট ঘোষনা করা হয়। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। গভীর পানির মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ অগভীর হাওর যা শুকনো মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে পরিণত হয়, হাওরের পাড় ও গ্রামগঞ্জ। বেশ কিছু টিনের তৈরি ঘরবাড়ি নজরে পড়েছে। বর্ষার সময় গভীর হাওর, কৃষিজমি, বাড়িঘর পানিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে সমুদ্রের আকার ধারণ করে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। স্থানীয় বাংলাদেশী জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিরা আসে। প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, গাঙচিল, বক, সারস, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, কাক, শঙ্খচিল, পাতিকুট ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ হাওরের বিখ্যাত মাছ মহাশোল। হাওরের উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম করচ, হিজল, বরুণ, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলশী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া ইত্যাদি জাতের উদ্ভিদ। ভ্রমণপিয়াসুরা হাওরের লম্বা পানি পথ পাড়ি দিয়ে করচ হিজলের ওয়াচ টাওয়ার বনে একটু থেমে নীলাদ্রিতে যায়। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চারিদিকের দৃশ্য খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়।

আমরা করচ-হিজলের বনে নৌকা বেঁধে, শহর থেকে রেঁধে নিয়ে আসা দুপুরের খাবার খেয়েছি। লম্বা সফরের মধ্যে নৌকার ফেরিওয়ালা থেকে লাল চা পান ছিল বিশেষ স্বস্তিদায়ক। এর পর পুনরায় যাত্রা শুরু করি। হাওরের জল কেটে যতই ভূমির দিকে এগুচ্ছি ততই উত্তেজনা বোধ করছি। সিনেমার দৃশ্যের মতো একটার পর একটা মনোরম দৃশ্য আমাদের মানসপটে চিত্র এঁকে যাচ্ছে। একসময় বোট তাহিরপুরের ভূমির লাগোয়া জলে নোঙর করলো। সদলবলে বোট থেকে নেমে সমতলে গিয়ে দাঁড়ালাম। একদিকে পাহাড় আরেকদিকে জল এবং মধ্যখানে সমতল, প্রকৃতির এই তিন রূপে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় পাদদেশীয় ভূমি (Northern & Eastern Piedmont Plains এর অন্তর্ভুক্ত Northern অঞ্চল)এর এই অংশটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের এক চিলতে ভূমি, এর সীমানা বরাবর ভারতের মেঘালয়।

গত বছর এমনি সময়ে নেত্রকোণার দুর্গাপুর হয়ে এই টিলা সমৃদ্ধ এলাকায় পৌঁছার অভিযানে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে সে অভিযান সফল হয়নি। এবার যাওয়াটাই ছিল অনিশ্চিত, বিশেষ করে পরিবারের সম্মতি পাওয়া। শেষ পর্যন্ত নেত্রকোণা-সুনামগঞ্জের বিশাল হাওরাঞ্চল পাড়ি দিয়ে তাহিরপুরে যখন পঁউছি তখন তার অপার সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য আমাদের হাতে মাত্র এক ঘন্টার সূর্যালোক অবশিষ্ট আছে। নেত্রকোণার দুর্গাপুর থেকে তাহিরপুর হয়ে সিলেটের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত একফালি ভূমি পাহাড়ি সমতল ও টিলাসমৃদ্ধ ভূমি। বর্ষাকালে এই পুরো এলাকা পাহাড়ী ঢলে (flash flood) আক্রান্ত হয়। নিলাদ্রি লেকের পানি, চারিদিকের মনোরম প্রকৃতি ও প্রতিবেশ সত্যি মনোহরণকারী। লেকের পাশ দিয়ে হাওরের বুক চিরে বয়ে চলে যাচ্ছে পাথর ভর্তি নৌকা।
এখানে পাহাড় কেটে কেটে পাথর উঠানো হয়। মাঝের টিলাগুলো আর ওপারের পাহাড়ের নিচের অংশটুকু বাংলাদেশের। নীলাদ্রি লেকটি এক সময় চুনাপাথরের কারখানার কাচামাল সরবরাহের ভান্ডার ছিল যা এখন বিলীন হয়ে গেছে। ছোট ছোট টিলাগুলি দেখতে কি চমৎকারই না লাগছিল। কিন্তু সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, রাজাই মৌজায় বারিক টিলার টুরিস্ট স্পটে যেতে হবে মোটর সাইকেলে করে। অপরিমেয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের আরেক দর্শনীয় স্থান হল বারিক টিলা [a hillock beside Jadukata river with 150 feet of height], স্থানীয়ভাবে যাকে বারিক্কার টিলা বলে। একে বাংলার আইফেল টাওয়ার নামেও অভিহিত করা হয়। এ টিলার নীচ দিয়েই বয়ে গেছে রূপসী নদী যাদুকাটা। স্বচ্ছ সলিলা যাদুকাটা নদী ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি লাভ করে এস্থান দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

এই নদীকে কেন্দ্র করে তাহিরপুর ও পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্বরপুর উপজেলার প্রায় ২০-২৫ হাজার শ্রমিক পাথর, বালু, নুড়িপাথর আহরণ করে কর্মসংস্থান করছে। আহরিত বালু, পাথর ও নুড়িপাথর দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগায়। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে জলের স্রোতধারা বয় আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়ায় দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। টিলার উপর থেকে শান্ত নদীর স্বচ্ছ নীলাভ পানি, পানির নীচে চিকচিকে সাদা নুড়িপাথর আর ধু-ধু বালুর পাড়ের দৃশ্যাবলী যে কারোরই মন কাড়বে। নীলাদ্রি লেক থেকে বারিক টিলা পর্যন্ত সরু পথের দু’ধারে পাহাড়তলির সমতল, ছোট ছোট টিলা, পাহাড় থেকে নেমে আসা সমতলের বুক চিরে মাঝে মাঝে ঝর্ণার প্রবাহ, ধানের ক্ষেত, পাহাড় ক্ষয়ে বা ধ্বসে সমতলে আসা নুড়িপাথর দেখতে দেখতে কখন যে সময় ফুরিয়ে যাবে ঠাওর করা যাবে না।
অতি প্রাচীনকালে সিলেটসহ বাংলার এক বিশাল ভূখণ্ড কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এর রাজধানীর নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষপুর। কামরূপ রাজ্যের শাসক ছিলেন রাজা ভগদত্ত। সুনামগঞ্জের লাউড় পরগণায় রাজা ভগদত্তের উপরাজধানী ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে বিজয় মাণিক্য নামে জনৈক হিন্দু রাজা লাউড় রাজ্যে রাজত্ব করেন। শ্রীহট্রের ইতিবৃত্তে বর্ণিত যে, উক্ত লাউড় রাজ্য সকল সময় স্বাধীন ছিল। ঐতিহাসিক ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের মতে, সম্ভবত ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে লাউড় রাজ্য স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলরা এর নিয়ন্ত্রক হন।

বারিক টিলা থেকে ঘাটে ফিরতে আমাদের ফিরতে সন্ধ্যে নেমে গিয়েছিল। যা করা একেবারেই অনুচিত। মাঝি ঝটপট বোট স্টার্ট দিয়ে হাওরের মাঝে নদীতে গিয়ে পড়ল। অন্ধকার, পানির উপরে ভাসমান বোটে আমরা কয়েকটি নিরীহ প্রাণী! আকাশে লক্ষকোটি তারা। সাদা হয়ে আছে। গতবার যখন ধনু নদীর উপর দিয়ে যাই তখনও এমন অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। এখন কাওলাই-গুনাই নদী পথে আসতে একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন! সৃষ্টিকর্তা যে চোখ দিয়েছেন তা যেন ধন্য হলো! সেবারও ক্যামেরায় ব্যাটারির আয়ু ফুরিয়ে গিয়েছিল, এবারও তাই। সিনিয়র অফিসারের কথায় সম্ভিত ফিরে পেলাম। তিনি বললেন, “জাহিদ, দেখো ছায়াপথ দেখা যাচ্ছে।” আমি ভালো করে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। কী অদ্ভুত সুুন্দর দৃশ্য! আকাশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বিশাল ঝালরের ন্যায় ছায়াপথ খালি চোখে দেখতে পাচ্ছি। ইংরেজি যাকে বলে মিল্কিওয়ে।

স্পীডবোট একটানা শব্দ করে পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝপথে বিপত্তি ঘটলো। দেরি করে ফেরার খেসারত হিসাবে মাঝি পথ চিনতে না পেরে এক ঘন্টার মতো আমাদের নিয়ে গোলোকধাঁধায় ঘুরেছে। তারপর একবার নলখাগরার বনে আটকে থেকেছে। সজ্জন আরেক নৌকার মাঝির সাহায্যে এ যাত্রায় উদ্ধার পেয়েছি। অন্ধকার আকাশে তখন বিজলী চমকাচ্ছিল। হাওরে নাকি বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হয়।! জলের কয়েক ফোঁটা গায়ে এসে পড়লো। এভাবে শঙ্কার মধ্য দিয়ে বাকী পথটুকু অতিক্রম করে মধ্যনগর ঘাটে পৌঁছলাম। এক রাশ ভালো লাগা অনুভূতি নিয়ে নেত্রকোণা যখন ফিরেছি তখন রাত ১০টা প্রায়।
বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২১
মোহাম্মদ কামাল আহমেদ: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট- বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, ঐতিহাসিক গুরুত্বে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, নদী, পাহাড়-টিলা, বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি, সুদৃশ্য চা-বাগান,রাবার বাগান, দীঘি-জলাশয়ের প্রাচুর্যে প্রাকৃতিক নৈসর্গ ঘেরা বহুমাত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী বিবেচনায় পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য অতি সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা। এছাড়াও দেশের প্রাচীনতম ভূমি-বৈচিত্রের এক গৌরবময় ঐতিহ্যও রয়েছে এই চুনারুঘাটের, রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক নবোপলীয় যুগের মানববসতির ইঙ্গিতবাহী প্রত্নসম্পদ ।
প্রাচীনকালে অর্থাৎ উপমহাদেশের মুসলমান আগমনের আগেই ‘রাজপুর’ নামে এক ক্ষুদ্র হিন্দুরাজ্যপাটের অস্তিত্ব থাকায় এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে ‘তরফ’ নামে মুসলমান রাজ্যপাটের রূপান্তরের মতো এক বিশাল ঐতিহাসিক ও সুমহান ঐতিহ্য বহন করছে এই অঞ্চল। আশেপাশে আছে মুসলিমসভ্যতা বিকাশকালের স্থাপত্যরীতির পুরাকীর্তি। ধর্মীয় ও মুক্তিযুদ্ধের ভাবগাম্ভীর্যের নিরিখে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট একটি অতি পবিত্রস্থান।
সুফীসাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুগামী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ)এর পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত প্রায় শতকিলোমিটার দীর্ঘ খোয়াইনদী ছাড়াও- করাঙ্গী, সুতাং, কুলিয়াছড়া, লক্ষ্যাছড়া, ইছালিয়াছড়া, ভূঁইছড়া প্রভৃতিবিধৌত চুনারুঘাট একটি ঐতিহাসিক জনপদের নাম। আশেপাশেই রয়েছে ষোড়শশতকের বৈষ্ণবধর্মাবলম্বীদের তীর্থভূমিসমূহ। নিকটবর্তী হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় উচাইল মসজিদ একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
আরও রয়েছে- চুনারুঘাটের ৩ নম্বর ইউনিয়নের চান্দপুর বাগানের পাশে প্রস্তাবিত এক অর্থনৈতিক অঞ্চল, ১নম্বর গাজিপুর ইউনিয়নের বাল্লা-সীমান্ত এলাকায় প্রস্তাবিত স্থলবন্দর, সাদাবালি-সিলিকা-বালির আধিক্যতা। রয়েছে বিশাল বিশাল আয়তনের ১৩টি চাবাগান, রয়েছে সাতছড়ি জাতীয়উদ্যান এবং রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্য- বিরল প্রজাতির পশুপাখিদের অবাধ বিচরণভূমি ও বাংলাদেশের একমাত্র ভার্জিনফরেস্ট।
বর্তমান সরকার ২০২১ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করার লক্ষ্যে কাজ করেযাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাকে পর্যটনে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণকরা হয়েছে । বিশেষ একটি বিষয়ের ব্র্যান্ডিংকরার মাধ্যমে দেশেবিদেশে পরিচিত করার লক্ষ্যে হবিগঞ্জ জেলাকে বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনজেলা হিসেবে গড়েতোলার জন্য জেলা-ব্র্যান্ডিংএর জন্য এ জেলার রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্যকে নির্বাচনকরা হয়েছে। তা আমাদের গৌরবের।
জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ২০১০ এর মাধ্যমে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষনাকরা হয়েছে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পর্যটনকর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্যুরিজমবোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ঢাকা আগারগাঁতে দৃষ্টিনন্দন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নিজস্বভবন নির্মান করেছেন, যা প্রশংসার দাবিদার।
২০১৬-২০১৮ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণাকরে নানা উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা গ্রহণকরা হয়। ২০০৯ সাল থেকে গত ৯ বছরে ৬ হাজার ৬৯৯ দশমিক ১৬ কোটি টাকা পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আয় হয়েছে। বর্তমানে দেশের পর্যটন খাত জিডিপিতে ২ দশমিক ১ শতাংশ অবদান রাখছে।
পর্যটনমন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পর্যটনখাতে প্রত্যক্ষকর্মসংস্থান হয়েছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০জনের। পরোক্ষকর্মসংস্থান হয়েছিল ২৩ লাখ ৪৬ হাজার, যা মোটকর্মসংস্থানের ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ওয়ার্ল্ডট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিল এর পূর্বাভাস হচ্ছে, গড়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে এইসংখ্যা ২০২৬ সালে ২৮ লাখে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্র থেকে জানাযায়, ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট এবং অ্যাভিয়েশন খাতে ২০১৪ সালে যাত্রী ছিলো ৯০ লাখ। ২০৩৫ সালে এইসংখ্যা পৌঁছুবে ২২ কোটি ১০ লাখ। ২০১৪ সালে এইখাতে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১৩ লাখ। ২০৩৫ সালে ১৪৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধিপেয়ে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৩ লাখ। ২০১৪ সালে এইখাত থেকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্ত হয়েছিলো ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০৩৫ সালে ১৪২ শতাংশ হারে বৃদ্ধিপেয়ে দাঁড়াবে ৮ বিলিয়ন ইউএসডলার।
২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তর- এর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া লিখিত প্রবন্ধ-‘পর্যটন শিল্পের বহুমাত্রিকতা ও সম্ভাবনা’তে জানতে পারি- পর্যটন শিল্প পৃথিবীর একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটনের গুরুত্ব সর্বজনীন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত। ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন; যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৩৫ মিলিয়নে।
ধারণা করাহচ্ছে, এবছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারাপৃথিবী ভ্রমণ করবেন। অর্থাৎ বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েথাকে। ২০১৭ সালে বিশ্বের জিডিপিতে ট্যুরিজমের অবদান ছিল ১০.৪ শতাংশ, যা ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে। এছাড়া ২০১৭ সালে পর্যটকদের ভ্রমণখাতে ব্যয়হয়েছে ১৮৯৪.২ বিলিয়ন ডলার।
আর একই বছর পর্যটনে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৮২.৪ বিলিয়ন ডলার। পর্যটনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি খণ্ডচিত্র আমরা এরথেকে পেতেপারি। সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ এশিল্পে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপিখাতে পর্যটনশিল্পের অবদান ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা। এখাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ২৪ লাখ ৩২ হাজার। একই বছর পর্যটনখাতে বিনিয়োগ এসেছে ৪৩ বিলিয়ন টাকা।
তাছাড়া সঠিক তথ্য-উপাত্ত না পাওয়া গেলেও ধারণা করাহয়, গতবছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ বিদেশিপর্যটক ভ্রমণ করেন। একইবছর প্রায় ৪ কোটি দেশীয়পর্যটক সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ান।উল্লিখিত সকল তথ্য-উপাত্তের নিরিখে সহজেই বুঝাযাচ্ছে, বিশ্বে পর্যটনখাত অন্যতম আকর্ষণীয় ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির খাতে পরিণত হচ্ছে দিনদিন।
বাংলাদেশ যদিও এক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে তবুও প্রচেষ্টার কমতি নেই; কেবল স্থান, কাল বুঝে সঠিক স্পট নির্বাচন করে যুতসই উদ্যোগের ও পরিকল্পনার ঘাটতি কাটাতে পারলেই সম্ভাবনার সোনালী-দ্বার খোলে যাবে। এ বিবেচনায় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটসহ আশপাশ নিয়ে অঞ্চলটি অতি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি পর্যটন বিষয়ক উদ্যোগসমূহ চুনারুঘাটকে সম্ভাবনাময় স্পট বিবেচনায় নিলে এবং পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শিল্পের এক বিপুল সম্ভাবনাময় দ্বার উম্মুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাসকরি। চুনারুঘাট- গুরুত্ব পেলে, কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াহলে, পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে-এমন স্পট সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরছি:প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নবস্তু- হাতিয়ার ও চাকলাপুঞ্জী:চুনারুঘাটের মাটি কোটিবছরের পুরনো।
বর্তমানকালের দেশের মোটভূমির অতি অল্পই এতোটা প্রাচীন। ধারণা করাহচ্ছে- নব্যপ্রস্তর যুগে অর্থাৎ ৩৫০০ বছর আগেও চুনারুঘাটে মানুষের বসবাস ছিল, তাও হয়তো অনেকেই জানিনা। আগেই জেনেছি, বর্তমান বাংলাদেশের সমুদয় ভূমির মাত্র ১২ শতাংশ যখন গঠিত হয় তখনই চুনারুঘাটের তরফ ও রঘুনন্দন পাহাড় মাথা উঁচু করে বিদ্যমান ছিল। এপর্যন্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত্বের ভিত্তিতে এবং প্রত্ননির্দশনের রেডিওকার্বন তারিখ নির্ণয় করে ভারতবর্ষে আদি মানববসতির বিভিন্ন ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যার কিছু কিছুতে আমাদের এ অঞ্চলের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজেনেয়া যেতেপারে।
মাত্র কয়েক বছর হল, চুনারুঘাটের চাকলাপুঞ্জিতে প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক শিকারজীবি মানুষের ব্যবহৃত নিদর্শন এ অঞ্চলে প্রাচীন মানববসতির গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত করেছে।মুস্তাকীম আহমদ চৌধুরীর ‘হবিগঞ্জের ইতিহাস’ গ্রন্থে আছে, ‘এ অঞ্চল (চুনারুঘাট) প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত ছিল।… ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে চুনারুঘাটের কাছে অনুসন্ধানকার্যের ফলে একটি প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নস্থল আবিস্কৃত হয়।..চাকলাপুঞ্জির বালুনদী থেকে সর্বমোট ৮৩টি প্রত্নবস্তু সংগৃহীত হয়।…প্রাপ্ত হাতিয়ারগুলোর বৈশিষ্ট্য প্রমাণকরে এগুলো নব্যপ্রস্তরযুগে তৈরি হয়েছিল।’উল্লিখিত বিষয়ে কার্যকর অগ্রগতি সাধিত হলে পর্যটক আকৃষ্ট হবেই।
রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্য :রেমাকালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত গাজীপুর, রাণীগাঁও ও মিরাশী ইউনিয়নে অবস্থিত। এই অভয়ারণ্যটির দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রেমা চাবাগান , পূর্বদক্ষিণ দিকে ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তর ও পশ্চিমদিকে তরফপাহাড় সংরক্ষিত বন অবস্থিত ।

এটি মূলতঃ তরফপাহাড় সংরক্ষিত বনের অংশ । অভয়ারণ্যটি বন্যপ্রাণীসংরক্ষণ আইন অনুসারে ১৯৮২ সালে ১০৯৫.০০ হেক্টর এলাকাকে নিয়ে প্রথমেই প্রতিষ্ঠা করাহয় । পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে একে সম্প্রাসরণ করে ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর করা হয় । একাধিকবার সম্প্রসারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ বর্তমানে এর আয়তন ৬০০০ হেক্টর। রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্যটি বিরলপ্রজাতির পশুপাখিদের বিচরণভূমি ।
সীমান্তবর্তী রেমাকালেঙ্গা টাওয়ার থেকে ভারতের ত্রিপুরারাজ্য ও বনের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কোথাও কোথাও এটিকে বাংলাদেশের একমাত্র ভার্জিন-ফরেস্ট হিসেবে বলাহয়েছে। এর বিশাল আয়তন ও জীববৈচিত্র্য পর্যটককে বিশেষ আকর্ষণ দিতে সক্ষম। রেমা-কালেঙ্গার বর্তমান অভয়ারণ্যের ভিতর প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালার পরিমান ৯১% এবং রোপিত গাছপালার পরিমান প্রায় ৯% । অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা ও লতাপাতার আবাসস্থল রয়েছে।
জীববৈচিত্রপূর্ণ এ প্রাকৃতিক বনে চিরহরিৎ,পর্ণমোচি, বাঁশ ও গুল্মলতা ইত্যাদি বিভিন্নস্তরের গাছ মিশ্রঅবস্থায় রয়েছে । স্থানীয়প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে, এদেরমধ্যে আওয়াল, কাকরা, নেউর, হারগাজা,গন্ধরাই, হরিতকি, ,বহেরা, জাম, ডুমুর, জারুল, কাউ, কদম, রাতা, গামার, বনাক চিকরাশি, গর্জন, চাপালিশ, নিম, সিভিট, শিমুল, কড়ই প্রভূতি উল্লেখযোগ্য বৃক্ষদ্বারা এ প্রাকৃতিকবন সমৃদ্ধ।
অভয়ারণ্য ১৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, যেমন- ভিমরাজ, পাহাড়িময়না, কাওধনেশ, বনমোরগ/মুরগী, লালমাথা ট্রগন, ফেটাকন্টী ,সাতভায়লা, টিয়া, ঘুঘু, শ্যামা ইত্যাদি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে বেজি, বড়কাঠবিড়ালি, বনশুকর, বানর, চশমাপড়া হনুমান, মায়াহরিণ, গন্ধগোকুল, মেছোবাঘ, চিতাবাঘ,মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতীবানর উল্লেখযোগ্য ।
৩৭ জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও বিলুপ্ত প্রায় শকুনপ্রজাতি রয়েছে এখানে। বাংলাদেশে ২টি শকুনের নিরাপদ এলাকা চিহ্নিতকরা হয়েছে । এর একটিহলো এই রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চল। রেমা-কালেঙ্গার মতো সমৃদ্ধবনাঞ্চল দেশেরমধ্যে বড় গৌরবের কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেই গৌরবের স্থান ম্লান হয়ে আছে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান: ২০০৫ সালে প্রায় ২৪৩ হেক্টর জায়গা নিয়ে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় রঘুনন্দন পাহাড়ে সাতছড়ি জাতীয়উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা সাতছড়ি জাতীয়উদ্যানে অবস্থিত সাতটি পাহাড়িছড়া বা ঝর্ণা থেকে এই স্থানের নামকরণ করাহয় সাতছড়ি। পূর্বে সাতছড়ি জাতীয়উদ্যান ‘রঘুনন্দনহিল রিজার্ভফরেস্ট’ নামে পরিচিত ছিল।
সাতছড়ি জাতীয়উদ্যানের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৪৫ প্রজাতির নানাজাতের গাছপালা। এছাড়া এই বনভূমিতে ৬ প্রজাতির উভচরপ্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং প্রায় ১৪৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। প্রাণীর মধ্যে সাতছড়ি জাতীয়উদ্যানে দেখামিলে মেছোবাঘ, উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, শুকুর, লজ্জাবতী বানর, চশমা হনুমান এবং নানা প্রজাতির সাপ। পাখিদের মধ্যে রয়েছে লালমাথা ট্রগন, ধনেশ, ঘুঘু, টিয়া, ঈগল, ময়না ইত্যাদি।
সাতছড়ি জাতীয়উদ্যানের চারপাশে ৯টি চাবাগান, আদিবাসী ও স্থানীয়গ্রাম এবং ফসলিজমি রয়েছে।রেমা-কালেঙ্গার মতোই এখানে পর্যটক আকর্ষণের মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। রেমা-কালেঙ্গার তুলনায় যোগাযোগ ভালো থাকায় এখানে পর্যটক অনেক বেশি।
খাসিয়াদের পানপুঞ্জি: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের তরফপাহাড়, রঘুনন্দনপাহাড় ও এর পার্শ্ববর্তী বাহুবল উপজেলায় পানির ছড়াগুলোকে কেন্দ্র করে খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের বসবাস। এদের জীবনযাপন বৈচিত্রপূর্ণ। এ নৃ-গোষ্ঠী মূলত: পান, সুপারি, বিভিন্নজাতের মসলা, কমলালেবু চাষাবাদ করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত করছে।
খাসিয়া পুঞ্জিকে কেন্দ্রকরে পযটনশিল্প বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। খাসিয়া পান পযটকদের আকর্ষনীয় একটি বিষয় হতেপারে । এ উপজেলার পাহাড়ের ছোট ছোট টিলায় খাসিয়ারা বসবাস করে থাকে। টিলার ভাঁজে ভাঁজে খাসিয়ারা উৎপাদন করে এই পান। বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলায় ১৪.০ হে: জমিতে ৩৫৯৯ কুড়ি পান উৎপন্ন হয়।
চুনারুঘাট-বাহুবল ও হবিগঞ্জ জেলার অন্যান্য এলাকায় রয়েছে খাসিয়া পানের শতাধিক পুঞ্জি।চা-বাগান:চুনারুঘাটেই রয়েছে ১৩ টি চা-বাগান; যা উপজেলার মোট আয়তনের বিশাল এক অংশ। ১৩টি চা বাগানের উঁচু-নীচু টিলা, সর্পিল ভঙ্গি, নয়নাভিরাম সবুজের ঢেউ- সব মিলিয়ে উপজেলার নৈসর্গিক শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। চাবাগান গুলোতেও প্রতিদিনই পর্যটক আসেন। মুড়ারবন্দ: চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাব্দীর তরফ-যুগের বহু স্মৃতিচিহ্ন এখনো এখানে বিদ্যমান; যা তৎকালীন মুসলিম শাসকদের, ধর্মপ্রচারকদের, দিব্যশক্তিধারী মহানপুরুষদের চিন্তা-চেতনা, কর্ম ও ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয়।
সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:) এর সঙ্গী বারো আউলিয়াদের কেউ কেউ, সৈয়দ বংশীয় বহু ওলি আউলিয়া, বহু কামেল পুরুষগণ এই মুড়ার বন্দের সুশীতল জামের ছায়ায় শুয়ে আছেন। এখানে এখনো প্রতিদিন সারা দেশ থেকে বহু ভক্তগণ আসা-যাওয়া করেন। বাৎসরিক ওরশ আরো ঝাঁকজমকপূর্ন হয়।
প্রাচীন পূণ্যসলীলা খোয়াইনদী: অচ্যুতচরন চৌধুরীর ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ তে আছে, প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র- বায়ুপুরাণ, তীর্থচিন্তামনি প্রভৃতি গ্রন্থে শ্রীহট্টের যে ৩টি প্রাচীন নদীকে পূণ্যসলিলা আখ্যা দেয়া হয়েছে তা হলো, বরবক্র (বরাক), মনু ও ক্ষমা (খোয়াই)। এই প্রাচীন খোয়াই নদী ত্রিপুরা থেকে চুনারুঘাটের ভেতর দিয়ে হবিগঞ্জের নবীন প্লাবন সমভূমিতে পতিত হয়েছে; যা প্রায় শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম তরেছে।
ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বা ও চা শ্রমিক: কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাসও আছে। সাতছড়ি ও কালেঙ্গা পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু আদিবাসী আছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৪০ সালের পর চা শ্রমিক ও রেললাইন স্থাপনের জন্য কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে চা বাগান এলাকায়। চুনারুঘাটের ১৩টি চা বাগানে এদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। এরা উড়িষ্যা, নাগাল্যাণ্ড, নাগপুর, ছোট নাগপুর, বিহার, সাঁওতাল পরগণা, উত্তরপ্রদেশ, ভোজপুর, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি দরিদ্র অঞ্চল থেকে এসেছিল।
তবে চাবাগানে বসবাসরত চুনারুঘাটের যে সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস তাদের মধ্যে খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, তেলেগু, খাড়িয়া, বাউরী, বাগতি, রিকমন, রিকিয়াসন, মাহাতি, ওঁরাও, মুণ্ডা, রাজবংশী, তাতী, ভুমিজ, গোয়ালা, ঝরা, বাড়াইক, সাধু, ঘোষ, কৈরি, কালিন্দী, চৌহান, রবিদাস, উড়িয়া, তন্তুবায়, রুদ্রপাল, কন্দ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এদের বিচিত্র জীবনধারাও পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে বলে মনেকরি। মনিপুরী জীবন ও সংস্কৃতি:এছাড়া চুনারুঘাটের আবাদগাঁও, উসমানপুর, গাজীপুর, ছয়শ্রী, ইকরতলি, ঘনশ্যামপুর প্রভৃতি গ্রামে ক্ষুদ্রজনগোষ্ঠী মনিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। চুনারুঘাটের সাথে এদের আত্মিক সম্পর্ক ১৬০৬ সাল থেকে। চুনারুঘাটে তাদের আগমন অনেক পরে।
জানা যায়, ১৮১৯ থেকে ১৮২৬ খ্রিঃ পর্যন্ত মনিপুর-বার্মা যুদ্ধ কালিন সময়ে চুনারুঘাটে তাদের আগমন।এরা এক বিচিত্র ও উন্নত গীত-নৃত্য সংস্কৃতির ধারক।
চুনারুঘাট পুরাতন খোয়াই: চুনারুঘাট পৌরসভায় পুরাতন খোয়াইনদী ঘিরে মফস্বল শহর পার্শ্বে চমৎকার এক পার্ক, ক্ষুদ্র নৌ-বিহার, লেক তৈরি করা যেতে পারে। যা শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে। গ্রীণল্যান্ড পার্ক: ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা গ্রীণল্যাণ্ড পার্কও চুনারুঘাটে বিনোদনের একটি কেন্দ্র হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে। পরিচর্যা পেলে তা আরো আকর্ষনীয় হতে পারে।

দমদমিয়া বিল: এটি চুনারুঘাটের ভারত সীমান্ত ঘেঁষেই নালুয়া বাগানের একটি বিল। এর স্বচ্ছজল, পদ্মফুল, সৌন্দর্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রতিদিন বহু পর্যটক সেখানে আসে।
পানছড়ি লেকভিউ: রঘুনন্দন পাহাড়ের কূলঘেঁষে এটি গড়েউঠছে। কাজ সম্পন্নহলে আশাকরি বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠবে এটি।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল : চান্দপুর চা বাগানের পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে এক নয়নাভিরাম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে। বাস্তবায়ন হলে এলাকার আর্থিক গতিময়তার সাথে পর্যটক আকর্ষণও বাড়বে।
বাল্লা স্থলবন্দর: বাংলাদেশ -ভারত সীমান্ত বাণিজ্য প্রসারে বিশেষ একটি কেন্দ্র হিসেবে বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। বিবেচনায় রাখলে সেটাও পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে। অনেক আশাবাদ যে, বক্তব্য বিষয়ের প্রত্যেকটি পর্যায়ে সরকারি পর্যটন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গুলোর সুদৃষ্টি আকৃষ্ট করতে পারলে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলে চুনারুঘাটকে নবরূপে সাজানো সম্ভব। বিশ্বে ভারত সহ বহু দেশে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন নগরী ও শৈলনিবাস গড়ে উঠেছে।

আমি মনেকরি হবিগঞ্জ জেলার প্রাচীনতম ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক এই চুনারুঘাট উপজেলাকে সরকারের পর্যটন বিষয়ক উদ্যোগ ও নীতিমালার আওতায় এনে, বিশ্বপর্যটন শিল্পের নতুন নতুন ধারণার আলোকে সাজিয়ে তোলা হলে চুনারুঘাটকে একদিন সারা পৃথিবী চিনবে। চুনারুঘাট হয়ে উঠতে পারে এক আধুনিক শৈলশহর ও শৈল্পিক পর্যটন নগরী। এমন উঁচু-নীচু, পাহাড়-সমতল, নিকটেই সমূদ্রসদৃশ নিম্নাঞ্চল ও বহুজাতিক জীবনবৈচিত্র এক জায়গায় এভাবে পাওয়া বিরল।
ভেবেছিলাম প্রথম যেদিন/ ফুটবে তোমায় দেখব/ তোমার পুষ্প বনের গাঁথা/ মনের মতো লেখব। কাশফুল দেখার এই আকুতি কবিতায় প্রকাশ করেছেন নির্মলেন্দু গুণ।
কবির মতো এই শুভ্র কাশফুল দেখার ইচ্ছা হয়তো অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু নগরায়নের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে কাশফুল, সঙ্গে শরতের স্নিগ্ধতাও।
এক সময় গ্রামের সব জায়গায় শরতে কাশফুল দেখা যেত। শরৎ মানেই ছিল বিস্তৃত ভূমিতে, বিলে ও নদীর তীরে কাশফুল। ধীরে ধীরে সেই সৌন্দর্য বিলীন হচ্ছে। এরপরও শরতের সুন্দর সেই রূপের দেখা মিলছে কোথাও কোথাও। এখন নগরজীবনে বিভিন্ন হাউজিং ও পরিত্যক্ত জমিতে শরতের বাতাসে দোল খেতে দেখা যায় কাশফুল।

বসুন্ধরা ৩০০ ফিট: কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচল যেতে হয় ৩০০ ফিট রাস্তা ধরে। এই রাস্তার দুই ধারেই রয়েছে অসংখ্য কাশবন। চাইলে হেঁটে হেঁটেই ঘুরে দেখা যায়। রিকশা করেও ঘুরতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঘণ্টায় প্রতি ভাড়া গুনতে হবে ১০০ টাকা। কালো কুচকুচে পিচঢালা রাস্তার দুইপাশে শুভ্রতার সমারোহ মনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে।
আফতাবনগর: রাজধানীর আফতাব নগরের ফাঁকা জমিতে শরতের সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে কাশফুল। পরিবার নিয়ে এই ঋতুতে ঘুরে আসতে পারেন আপনিও। তবে বিকেলে যাওয়াই ভালো।
দিয়াবাড়ি: উত্তরা দিয়াবাড়িতে প্রচুর কাশবন রয়েছে। কাশবনের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ফটোসেশনে জন্য দিয়াবাড়ি একটি আদর্শ জায়গা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বিনোদনপ্রেমীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। আর কাশবনের পাশে নদীর তীরের হিমেল বাতাস আলোড়িত করে দর্শনার্থীদের।

কেরানীগঞ্জ: বাবুবাজার বুড়িগঙ্গা সেতু অতিক্রম করে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে ধরে যেতে থাকলে দেখা পাওয়া যাবে কাশবন। এখানে কাশবনের পরিমান এতই বেশি যে পুরো এলাকা কাশফুলে সাদা হয়ে থাকে।
মায়াদ্বীপ: মেঘনার বুকে কাশফুলের মায়া ছড়িয়ে আছে মায়াদ্বীপ। এই দ্বীপে শুধু কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগই নয়, বোনাস হিসাবে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গেও পরিচিত হতে পারবেন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে চড়ে বৈদ্দের বাজার এসে সেখান থেকে মেঘনার ঘাট হয়ে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে মায়াদ্বীপ যাওয়া যায়।
কাশফুল বেশিদিন থাকে না, তাই কাশফুলের ছোঁয়া পেতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যান আপনার সুবিধা মতো জায়গায়।
রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু পানিতে ডুবে গেছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। এতে মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক পর্যটক।
জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়েছে। এতে তলিয়ে গেছে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে অবস্থিত ঝুলন্ত সেতুর পাটাতন। ফলে সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, প্রতিবছরই আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ঝুলন্ত সেতু ডুবে যায়। বর্তমানে প্রায় এক ফুট পানির নিচে এ সেতুর পাটাতন। এ কারণে সেখানে পর্যটকদের প্রবেশে অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হ্রদের পানি কমে সেতুটি ভেসে উঠলে আবারও চলাচলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এদিকে ঝুলন্ত সেতু ডুবে যাওয়ায় আকর্ষণ হারিয়েছে রাঙামাটি। পর্যটকরা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পর্যটকরা জানান, ঝুলন্ত সেতু উপভোগ করতে এখানে আসেন তারা। কিন্তু সেই সেতুর এই অবস্থা দেখে খুবই খারাপ লাগছে তাদের। তবে ডুবন্ত সেতু দিয়েই স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকসহ অনেককে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

১৯৭০ সালের দিকে সরকার রাঙামাটি পার্বত্য জেলাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে। ১৯৮৬ সালে জেলা সদরে সরকারি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্স স্থাপন করা হলে সেখানে ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। বর্তমানে দেশে-বিদেশে সেতুটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। ঝুলন্ত সেতুর পূর্বদিকে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশিসহ রয়েছে ছোট-বড় নৈসর্গিক সবুজ পাহাড়।-যুগান্তর
তিব্বতকে আসলে দেশ বলা হলেও এটা মূলত কোন দেশ নয়। অধিকাংশ তিব্বতীরা নিজেদেরকে স্বাধীন বলে মনে করলেও মূলত এখনো এই অঞ্চলটি চীনেরই অংশ। কিন্তু কি আছে এই দেশটিতে যা একে এতটা রহস্যময় করে তুলেছে? তিব্বতের রাজধানী লাসাকে বলা হয় বিশ্বের নিষিদ্ধ নগরী। কিন্তু কেন? তিব্বত গণচীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। তিব্বতীয় মালভূমির গড় উচ্চতা প্রায় ১৬,০০০ ফুট। যার কারণে এই অঞ্চলকে পৃথিবীর ছাদও বলা হয়ে থাকে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই দেশটির আয়তন ১২,২৮,৪০০ বর্গকিমি, যা কিনা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৯ গুণ বড়। আয়তনে বিশাল হলেও দেশটির জনসংখ্যা খুবই কম।
বিরূপ আবহাওয়া এবং পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের জনসংখ্যা খুবই কম। বর্তমানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লক্ষের মতো। এখানে পশুপালন ছাড়া তেমন কোন পেশা নেই। শিক্ষিতের হার খুবই নগণ্য। জীবন যাত্রার মানও অতি নিম্ন। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান তিব্বতীয় মালভূমিতেতে অবস্থিত। নেপালের সাথে তিব্বত সীমান্তে মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত।

তিব্বতকে পৃথিবীর জলাধারও বলা হয়ে থাকে। কারণ তিব্বত থেকে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদ এবং নদী। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নদী আবার কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে।
কিন্তু কেন তিব্বত নিষিদ্ধ দেশ জানেন কি? এ নিষিদ্ধের পেছনের রহস্য অনেকেরই অজানা। কেন তিব্বতকে নিষিদ্ধ দেশ বলা হয়? কী এমন গাঢ় রহস্যের কুয়াশায় আবৃত তিব্বতের অবয়ব?
১৯১২ সালে ১৩তম দালাই লামা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি স্ব-শাসিত অঞ্চল তিব্বত। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এ অঞ্চলটি তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। এ অঞ্চলটিকে চীনের অংশ বলা হলেও এখানকার বেশির ভাগ তিব্বতি জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলকে চীনের অংশ মানতে রাজি নয়। এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিরা স্বাধিকার আন্দোলন করলে, তা ব্যর্থ হয়। তখন দালাই লামার নেতৃত্বে অসংখ্য তিব্বতি ভারত সরকারের আশ্রয় নিয়ে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্বাধীন তিব্বতের নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু তিব্বতের নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনের মূল রহস্য এর দুর্গম এবং পাহাড়ি অঞ্চল। পৃথিবী থেকে তিব্বতের দূরত্ব যেন মঙ্গল গ্রহ থেকেও বেশি। বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ, সাংবাদিক, কিংবা ক্যামেরা তিব্বতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। এজন্য শত শত বছর ধরে তিব্বত থেকে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। নিষিদ্ধ এ শহরে এক সময় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণেই ধীরে ধীরে তিব্বত হয়ে ওঠে এক নিষিদ্ধ শহর।
তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোবি মরুভূমি। মরুভূমির নিষ্ঠুর ও কষ্টদায়ক পরিবেশ এসব এলাকার মানুষকে কাছে আনতে নিরুৎসাহিত করে। তিব্বতের স্থলভাগ বছরের প্রায় আট মাস তুষারে ঢেকে থাকে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই তিব্বতকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে অনেক রহস্য ও কল্পকাহিনী। তিব্বতের রাজধানী লাসা বিশ্বব্যাপী ‘নিষিদ্ধ নগরী’ হিসেবে পরিচিত ছিল অনেক আগে থেকেই। সেখানে বসবাস করা পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি কষ্টকর। দেশটিতে বাইরের বিশ্ব থেকে কারও প্রবেশ করার অনুমতি না থাকায় এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে সবার কাছে একটি রহস্যময় জগৎ হিসেবে পরিচিত ছিল। কী আছে লাসায়—তা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত সমগ্র বিশ্ব। লাসার জনগোষ্ঠী, শহর, বন্দর, অট্টালিকা সবকিছুই ছিল সবার কাছে একটি রহস্যঘেরা বিষয়। লাসা নগরীতে ছিল বিখ্যাত ‘পোতালা’ নামক একটি প্রাসাদ। এই প্রাসাদ প্রথমবারের মতো বহির্বিশ্বের মানুষেরা দেখতে পায় ১৯০৪ সালে। আমেরিকার বিখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকায় এই বিখ্যাত অট্টালিকার ছবি ছাপা হয় সে সময়।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী।

১। শ্রীমঙ্গলঃ ( sreemangal )
চায়ের রাজধানী খ্যাত এই অঞ্চল বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি উপজেলা। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের অন্তর্গত। পাহাড়, রেইন ফরেস্ট, হাওর আর সবুজ চা বাগান রয়েছে এ অঞ্চলে। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে চা বাগান। দেশের ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে এ উপজেলায় ৪০ টি চা বাগান। তাছাড়াও রাবার, লেবু ও আনারস চাষ হয় শ্রীমঙ্গলে। পাহাড় ও ঘন বনাঞ্চল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয়, এজন্য শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে কালাপুর ইউনিয়নের গ্যাসক্ষেত্র, শ্রীমঙ্গলের বালিতে খনিজ পদার্থ জাতীয় সিলিকা বালি, মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র।
আপনি জানেন কি, ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন গভীর রাতে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে ড্রিলিংয়ের সময় অগ্নিবিস্ফোরণে আশপাশের খাসিয়াপুঞ্জি, চা বাগান, রেললাইন, সবুজ বনাঞ্চল সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই গ্যাসকূপটি এখন পরিত্যক্ত এবং সংরক্ষিত এলাকা। এ অঞ্চলে কিছু প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।

২। জাফলংঃ ( jaflong )
জাফলং প্রকৃতির কন্যা হিসাবে আমাদের সবার কাছে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং আমার অনেক পছন্দের। সিলেট এর গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা এই জাফলং। সিলেট থেকে জাফলং এর দুরত্ব মাত্র ৬২ কিলোমিটার। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে সবার কাছে প্রিয়। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ করে।

৩। বিছনাকান্দিঃ ( bisnakandi )
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিছনাকান্দি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এক বিন্দুতে এসে মিলেছে। পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে সুউচ্চ ঝর্ণা। এই স্পটের মূল আকর্ষণ হলো পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পানি প্রবাহ। পূর্ব দিক থেকে পিয়াইন নদীর একটি শাখা পাহাড়ের নীচ দিয়ে চলে গেছে ভোলাগঞ্জের দিকে। পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথরের এক সম্মিলিত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বিছনাকান্দি।

৪। রাতারগুল: ( ratargul swamp forest )
রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest) বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চিরসবুজ এ জঙ্গলে আছে নানান রকম বন্যপ্রাণী। পানিতে অর্ধেক গা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বনের গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। সারা পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। ভারতীয় উপমহাদেশে আছে দুটি। একটি শ্রীলংকায়, আরেকটি বাংলাদেশের রাতারগুল। সুন্দর বিশাল এ বনের তুলনা চলে একমাত্র আমাজনের সঙ্গে। আমাজনের মতো এখানকার গাছ বছরে ৪ থেকে ৭ মাস পানির নিচে থাকে।

৫। লালাখালঃ ( lala khal sylhet )
মেঘালয় পর্বত শ্রেনীর সবচেয়ে পুর্বের অংশ জৈন্তিয়া হিলসের ঠিক নীচে পাহাড়, প্রাকৃতিক বন, চা বাগান ও নদীঘেরা একটি গ্রাম লালাখাল, সিলেট জেলার জৈন্তিয়াপুর উপজেলায় অবস্থিত। লালাখাল থেকে সারীঘাট পর্যন্ত নদীর ১২ কি.মি পানির রঙ পান্না সবুজ হয়ে থাকে। পুরো শীতকাল এবং অন্যান্য সময় বৃষ্টি না হলে এই রঙ থাকে। জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবাহমান পানির সাথে মিশে থাকা খনিজ এবং কাদার পরিবর্তে নদীর বালুময় তলদেশের কারনেই এই নদীর পানির রঙ এরকম দেখায়। এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা এখানে রাত্রিযাপন করতে পারেন।

৬।ডিবির হাওরঃ ( dibir haor sylhet )
সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি মেঘালয়ের পাদদেশে ঝর্ণা বেষ্টিত ডিবির হাওর লাল শাপলার বিল নামে পরিচিত। আমাদের জাতীয় ফুল লাল শাপলার বিল ডিবির হাওর। প্রতিবছর অসংখ্য পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। ভোরের লাল শাপলা,পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে, সাথে পাখির কিচির মিচির এ যেন আসলেই এক প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।