শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে প্রকৃতি। বর্ষণে তেমন কোনো তেজ না থাকলেও রয়েছে হিমহিম ভাব। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বৃষ্টি লঘুচাপের প্রভাবে। থাকবে দু-তিন দিন।
আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুছ জানিয়েছেন, উত্তর তামিলনাড়ু ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থারত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে একই এলাকায় লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এ অবস্থায় রোববার (১৪ নভেম্বর) রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রী সে. হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৫-১০ কি.মি.।

এদিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আর ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, লঘুচাপটি ১৫ নভেম্বর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে মধ্য বঙ্গোপসাগরে। এটি আগামী ৩ থেকে ৫ দিনে ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেওয়ার সম্ভাবনা খু্ব বেশি। এক্ষেত্রে এর নাম হবে জোয়াদ, নামটি দিয়েছে সৌদি আবর।
বৃষ্টি, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে শনিবার (১৩ নভেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সে.) রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়।
দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমী বায়ু। তবে আভাস রয়েছে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের। বুধবার (১৩ অক্টোবর) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমী বায়ু। মৌসুমী বায়ু দেশের অন্যত্র কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বরিশাল, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায়। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তিনি বলেন, ‘সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় উত্তর-পশ্চিম/পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৬-১২ কিলোমিটার।’
বৃহস্পতিবার নাগাদ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশ থেকে বিদায় নেওয়ার আবহাওয়াগত অবস্থা অনুকূলে রয়েছে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
আগামী দু’দিন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার রাতে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, এখন বর্ষাকাল, যেকোনো সময়ে বৃষ্টি হতে পারে। তাই কোথায় কোন সময়ে বৃষ্টি হতে পারে এটা সঠিক করে বলা মুশকিল। তবে আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ও ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা বলছে, আগামীকাল সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান খান জানান, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু স্থানে এবং রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারীবর্ষণ হতে পারে।
পূর্বাভাস বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর বেশ সক্রিয়। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
রাজধানীর অনেক রাস্তায় সংস্কারকাজ চলায় নগরে বৃষ্টি সীমাহীন ভোগান্তি বয়ে এনেছে । পা ফেললেই যেন অপেক্ষায় দুর্ঘটনা। অধিকাংশ রাস্তায় যান চলাচল করাই যেন দায়।
রাজধানীবাসী ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে জলজটে নাকাল । দুর্ভোগ ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারের কাজ আরও বাড়িয়েছে । অফিসগামী মানুষকে পোহাতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি। জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণে আবারও দাবি জানালেন নগরবাসী।
মঙ্গলবার (২২ জুন) সকালে ঘণ্টাখানেক মুষলধারে বৃষ্টি। তাতেই ডুবে গেছে রাজারবাগের মূল সড়ক। অলিগলিতে হাঁটু পানি।রাজধানীর অনেক রাস্তায় সংস্কারকাজ চলায় বৃষ্টি সীমাহীন ভোগান্তি বয়ে এনেছে নগরে। অধিকাংশ রাস্তায় খানাখন্দে যান চলাচল করাই যেন দায়। মানুষ এসব গর্তে পড়ে যাচ্ছে।
সকাল থেকে ভারী বর্ষণে অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে নগরবাসী। মুষলধারে বৃষ্টির ফলে অনেক সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অফিসগামী মানুষদের।
মঙ্গলবার ভোর থেকেই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। ফলে অনেকে ছাতা নিয়ে বের হয়েছেন, অনেককে আবার বৃষ্টিতে ভিজে কর্মস্থলে যেতে দেখা যায়। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট হাঁটু কিংবা কোমর পানিতে তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর শাহজাহানপুর, রাজারবাগ ও মালিবাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া মগবাজার ওয়ারলেস গেট থেকে মধুবাগের রাস্তায়ও একই দৃশ্য। পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কও তলিয়ে গেছে বৃষ্টিতে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা শুরু হয় মাজেদ সরদার রোড, নাজিরা বাজার চৌরাস্তা ও সিক্কাটুলী এলাকায়। এতে অনেক দোকানপাট ও বাসা-বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে যায়।
পুরান ঢাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে যায়। এই পানি সরতে এক থেকে দুদিন সময় লাগে। পানি জমলেই ড্রেনের ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে যায় সড়কটি, ফলে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এছাড়া রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় গণপরিবহনও অনেকটা কম ছিল। তাই ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন কর্মস্থলে যাওয়া মানুষদের। অনেকে আবার হাঁটু পানি মাড়িয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন। অফিসগামী যাত্রীরা জানান, গণপরিবহন কম থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সায় যেতে হচ্ছে অফিসে। এছাড়া নিরুপায় হয়ে বাসেও গাদাগাদি করে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে ও ভেতরে পানি আটকে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া শাহজাহানপুর থেকে মগবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটিতে ছিল তীব্র জানযট। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, মগবাজার ওয়ারলেস থেকে মগবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত ড্রেন সংস্কারের জন্য সড়কটি কেটে ফেলায় তীব্র জানযট লেগেই থাকে প্রতিদিন।
বর্ষার মৌসুমে রাজধানীর সড়কগুলোতে চলা কঠিন তারপরেও অনেক জায়গায় কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করায় ভোগান্তি যেন আরও চরমে পৌঁছেছে।
এছাড়া ঢাকার সেন্ট্রাল রোড, মিরপুর রোড, কারওয়ান বাজার এলাকাতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ দিনভর রাজধানীতে বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। রাজধানীর বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।
তবে ২দিনের মধ্যে বৃষ্টির মাত্রা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস দেশের আট বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে । বলেছে, দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া, আগামী দুই দিনেও বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা অব্যহত থাকবে এবং পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হবে বলে জানানো হয়েছে।
আজও ভোর থেকে দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বেশ কিছু স্থানে এবং দেশের অন্যত্র কিছু কিছু স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ চলছে যা পরবর্তিতে চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের অন্যান্য কিছু স্থানে বিস্তৃত হতে পারে।
আগামি ১৬ জুন থেকে পরবর্তী প্রায় ৫/৬ দিন চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় আকস্মিক জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের সকল সমুদ্রবন্দরে ৩ নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত অব্যাহত আছে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় ৩৪.৩ ডি. সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলায় ২৪.৫ ডি. সেলসিয়াস।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলায় ৪৭ মিলিমিটার।
সূত্র:বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আষাঢ়‘ কবিতায় বলেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’
হ্যাঁ, সত্যিই তাই। কবিগুরুর কবিতার মতোই বর্ষা এসে গেছে।
তৃষিত হৃদয়ে, পুষ্পে-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে নতুন প্রাণের নতুন গানের সুর নিয়ে বর্ষা এসেছে ধারায়। আজ মঙ্গলবার বর্ষার প্রথম দিন।যারা হঠাৎ করেই ভাবতে বসেন- মুষল ধারে বৃষ্টি হবে আর শুকিয়ে যাওয়া শহর আবার বসে ভিজবে, আজ তাদের বলে দেওয়ার দিন- শুধু শহর নয়, নগর-বন্দর-গ্রাম সব ভিজবে এবার। কেননা বর্ষা এসে গেছে।
বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বেজেছে বর্ষায়। বর্ষা মানেই আবেগ, অনুভূতির জোয়ার। এ জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক পাওয়া যায় না। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ-কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনে বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বর্ষা ঋতুকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গল্প, গান লিখেছেন। তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কখনো কখনো বর্ষার কবিও বলা হয়। তিনি বর্ষাঋতু এবং বৃষ্টিকে তার কবিতায় সাজিয়েছেন বিচিত্রভাবে।
গ্রীষ্মের অগ্নিঝরা দিনগুলো যখন প্রকৃতিকে করে বিবর্ণ ও শুষ্ক এবং জনজীবনকে করে অসহনীয়, তখনই বর্ষা রিমঝিম বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতিকে করে তোলে সজীব। বর্ষার মুষলধারার বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তাই তৃষিত অপেক্ষাতুর প্রকৃতি উন্মুখ। সেই তৃষ্ণা কাটিয়ে বাংলা বর্ষপরিক্রমায় বর্ষা এলো। আষাঢ়ের প্রথম দিন শুরু হয়ে এই ঋতু চলবে শ্রাবণের শেষ দিন পর্যন্ত। কারণ আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল।
বর্ষার ভারী বর্ষণে শরীর ধুয়ে নেয় প্রকৃতি। পরিচ্ছন্ন হয়, নতুন করে জেগে ওঠে। বেলী, বকুল, জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। আর ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’-এর হাসি তো ভুবন ভোলানো! কী গ্রাম, কী নগর, সর্বত্রই বর্ষার আগমনীবার্তা দেয় কদম। যেন একই কথার জানান দিতে পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির জল গায়ে নিয়ে নৃত্য করে তারা।
বর্ষা কখনো প্রকৃতির রূপ বর্ণনার, কখনো নিরেট প্রেমের অনুঘটক। আবার কখনোবা বর্ষা স্বয়ং নারী।
এত কিছুর পরও এই মুগ্ধকর ঋতুরও রয়েছে সর্বগ্রাসী রূপ। অতি বৃষ্টিতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হয়েছে এ জনপদের মানুষকে। তাই তো গবেষকদের কাছে বরাবরই মোহমুগ্ধ হয়ে উঠেছে নানা রূপের এ ঋতুটি।
রিমঝিম বৃষ্টিতে বিরহে রোদন হয়। টুপ টাপ বৃষ্টির নুপুর সারা দুপুরজুড়ে খেলা করে মন জোয়ারের ঢেউয়ে। তাইতো ভাবুক মন এই বর্ষায় নিরভাবনায় বলে ওঠে- ‘ওগো, বর্ষা এলো। এই বর্ষায় ধুয়ে যাক জীবনের সব ক্লেদ। ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে উঠুক প্রকৃতি আর মানব মন’। বর্ষাকে ঘিরে এমন প্রত্যাশা যেন সবখানে। আবার ভারি বর্ষণে, পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম যে ভাসিয়ে নেয় সেও বর্ষা! বন্যাকবলিত নিচু এলাকার মানুষ তাই আতঙ্কে পার করে বর্ষা। একই কারণে সারা বছরের অর্জন ফসল তলিয়ে যায়। শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়। শহরে বর্ষায় রাস্তা ঘাট পানি জমে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পরে কর্মজীবী মানুষরা। সুখ স্মৃতিগুলো মনে রেখেই প্রতিবছর বর্ষাকে বরণ করে নেয় বাঙালি।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে সামান্য থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। আজও দেশের সবগুলো বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর , ময়মনসিংহ , রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।