‘মাইগ্রেন সমস্যা’ খুবই পরিচিত। এটি মাথার এমন এক যন্ত্রণা যা আলোতে বাড়ে। ব্যথার সাথে বমি ভাব ও হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া মাইগ্রেনের অন্যতম উপসর্গ। অনেক সময় প্রচণ্ড ব্যথার সাথে জ্বর, অবসাদ ও ক্ষুধা মন্দার মতো লক্ষণগুলোও দেখা দেয়। অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ খান, তবে এতে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই পেইনকিলারের বদলে অনুসরণ করুন ভিন্ন কিছু উপায়; যা আপনাকে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে।
মাইগ্রেনের সমস্যা কেন হয়
মাইগ্রেন কেন হয় তার সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি, তবুও ডাক্তারের ধারণা মতে, কয়েকটি কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা যায়। যদিও এটা বংশপরম্পরায় রোগ।
- মাত্রা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, মশলা এবং নোনা খাবার খাওয়া।
- দীর্ঘক্ষণ ধরে কম্পিউটার সামনে বসে কাজ করা।
- দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের নীচে থাকা।
- মাত্রাতিরিক্ত কফি, পনির খাওয়া।
- অত্যধিক পরিমাণে মানসিক চাপ।
- হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য।
- ঘুম নিদর্শন পরিবর্তন।
- অতিরিক্ত মদ এবং ধূমপান করা।
- প্রবল দুশ্চিন্তার কারনে।
- দীর্ঘক্ষণ বসে টিভি দেখা এবং মোবাইলে কথা বলা।
মাইগ্রেনের সমস্যার লক্ষণ
মাইগ্রেনের সমস্যার কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে, যা দেখলে বোঝা সম্ভব মাইগ্রেনের সমস্যা। মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার আগে মাইগ্রেনের এই লক্ষণগুলি এক বা দুইদিন আগে দেখা যেতে পারে।
- কাজে মনোযোগ নষ্ট হতে পারে।
- বমি বমি ভাব।
- বিষণ্ণতা ভাব।
- বার বার খিদে পাওয়া।
- বিরক্তবোধ হওয়া।
- শব্দ এবং আলোর প্রতি বিরক্তবোধ।
- অতিরিক্ত হাই তোলা।
- মাথা ঘোরা বা দুর্বল বোধ।
- মাথার সামনে, পিছনে অথবা ডানদিকে ব্যথা।
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।
- ক্লান্তি ভাব।
- কোষ্ঠকাঠিন্য।
এই সমস্ত লক্ষণগুলি দেখা গেলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাইগ্রেনের চিকিৎসা
কিছু ঘরোয়া উপায়ে মাইগ্রেনের সমস্যা কম করা যেতে পারে।
- বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। নিয়মিত কাঠ বাদাম জলে ভিজিয়ে রাতে ৪-৫ টি করে খান এবং আপনি চাইলে বাদাম ভেজানো জলও খেতে পারেন।
- এক কাপ জলে এক টেবিল চামচ ধনে বীজের গুঁড়ো নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকাল বেলা এই জলটি পান করবেন। অসুস্থতা ভাব কমে যাবে।
- এক মুঠো দূর্বা ঘাস নিন। এবার ঘাসটি ভালো করে ব্লেন্ড করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘাস থেকে রস বেরায়। এবার দূর্বা ঘাসের রসটি ছেঁকে নিয়ে তার মধ্যে যষ্টি মধুর গুঁড়ো নিয়ে রসটি ভালোভাবে মিশ্রিত করুন। এবার এই রসটি নিয়মিত একমাস বিকালে পান করুন ।
- ডাক্তারের চিকিৎসার পাশাপাশি এই ঘরোয়া উপকরণগুলি অনুসরণ করলে মাথাব্যথা থেকে অনেকটা রেহাই পাবেন।
- মাইগ্রেনের সমস্যায় ফ্যাট-ফ্রি দুধ পান করা খুবই উপকারী। দুধে ভিটামিন-বি পাওয়া যায়, যা কোষকে এনার্জি জোগায়।
- মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই পাওয়া যায়। এ দুটি উপাদান মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- সবুজ শাকসবজিতে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। মাইগ্রেনের ব্যথায় ম্যাগনেসিয়াম খুবই কার্যকর। শস্য, সামুদ্রিক খাবার এবং গমেও প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার টিপস
কয়েকটি নিয়ম অবলম্বন করলে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মাইগ্রেন থেকে দূরে থাকতে নীচে দেওয়া সতর্কতাগুলি মেনে চলার চেষ্টা করুন-
- যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা নেই তারা চা এবং কফি অল্প পরিমাণে খান এবং যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা চা এবং কফি খাওয়া বন্ধ করুন।
- বেশি মানসিক চাপ নেবেন না।
- নিয়মিত সময় করে ঘুমান এবং নিয়মিত সাত- আত ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত সকালে ফ্রেশ মনে হাঁটাচলা করবেন।
- মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- তীব্র ঠাণ্ডা বা কড়া রোদে থাকবেন না।
- বেশি সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করবেন না।
- দীর্ঘক্ষণ টিভি দেখা বন্ধ করুন।
- মাথাব্যথা হলে প্রচুর জল খান এবং বিশ্রাম করুন।
- রোদে বেরানোর সময় সানগ্লাস পড়বেন।
- ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন “ডি” যুক্ত খাবার খাবেন।
- বেশি করে আপেল, কলা, বাদাম, গম জাতীয় খাবার খান।
- সবুজ শাক সবজি খান।
- ঠিকমতো ঔষধ খান।
মাইগ্রনের সমস্যার লক্ষণ এবং তার চিকিৎসা জানা হয়ে গেলেও এবার একটু সতর্কতা মেনে চলুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো চললেই নিজে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।