কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়া তার গানের সুরকার নেই,নেই,নেই।
মিন্টু রহমান: নজরুল সংগীত এর সংখ্যা বিশ্বের সকল গীতকবিদের চাইতে অধিক বলে স্বীকৃত, রবীন্দ্রনাথের গান সর্বমোট ২১৬০ এর মতো। কারে কারো মতে নজরুল ইসলাম প্রায় পাঁচ হাজার গান লিখেছেন, তবে তিন হাজারের বেশি গান নজরুল ইন্সটিটিউট এযাবৎ প্রকাশ করেছে। এতো অধিকও বৈচিত্র্যময় গান সৃষ্টির কারণে কবি’র বাংগালী শত্রুর সংখ্যা ও অধিক, অথচ এই হিন্দু- মুসলমান ও ধর্ম-বর্ণ-গোএ সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য গান সৃষ্টি করার পরও এরাই আবার নানা স্বার্থের কারণে নজরুল ইসলাম কে বিতর্কিত করতে কম চেষ্টা করেনি- নজরুল সাহিত্য ও সংগীত অবলম্বন করে নিজের পেট পূজা, সংসার চালানো, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিউশনি করে পরিবারের খরচ বহন করা ইত্যাদি সব করতে সফল হয়েছে -এ কথা সবাই জানে। অথচ এদের কারো কারো কাজ কারবার যেন নজরুল ইসলাম কে হেয় করতে একটু ও বাধে না। নিন্মে তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলোঃ—
(১) ভারতের পচ্চিম বংগে প্রথম থেকেই যথাক্রমে বেনামে, আধুনিক গান,নজরুলের গান ও সবশেষে নজরুল গীতি বলা হয়েছে–আলাদা দেশ হিসেবে আমাদের বলার কিছু নেই, তবে তাদেরকে অনুরোধ করা যেতে পারে মাএ–রাখা না রাখাটা তাদের রাষ্ট্র বিষয়ক পলিসি ম্যটার।
(২) পাকিস্তান আমলে নজরুল গীতি বলা হতো এবং মিডিয়ায় সেভাবেই প্রচার করা হয়েছে।
(৩) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ কিছুদিন পর কিংবদন্তি শিল্পী জনাব সোহরাব হোসেন ও কিছু নজরুল অনুরাগী শিল্পী ও প্রেমীদের অনুরোধের পর বাংলাদেশ বেতারে নজরুল সংগীত হিসাবে মৌখিক স্বীকৃতি লাভ করে প্রচার শুরু হয় –তবে কাজী নজরুল ইসলাম নামটি লিখিত ভাবে বা সাংবিধানিক রূপে জাতীয় কবি কিম্বা সংশোধিত রূপে নজরুল সংগীত বলার অধিকার কেউ রাখেনা। যদিও ১৯৭২ সাল থেকে জাতির জনক বংগবন্ধুর স্বীকৃতি ও এদেশের জনগনের অন্তরের ভোটে কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি এবং নজরুল সংগীত বলার অধিকার সংরক্ষণ করে—যা কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা বিদেশের পক্ষে রদবদল করা সম্ভব নয়,শুধু কিছু মিডিয়ার মতো বিরোধিতা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই ।
(৪) বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে নজরুল ইন্সটিটিউট তৈরি হওয়ার পর ১৯৯২ সালে নজরুল একাডেমীর আমন্ত্রণে কলকাতার নজরুল গবেষক হিসেবে খ্যাত শ্রী ব্রহ্মমোহন ঠাকুর ঢাকা আসার পর শ্রী সুধীন দাস এর সাথে বন্ধুত্ব হলে তিনি বার কয়েক কলকাতায় তার কাছে নজরুল বিষয়ে পরামর্শ করতে যান।এর পরই নজরুল ইন্সটিটিউট এর কর্মচারী রাশেদুন্নবীর সহযোগিতায় শ্রী সুধীন দাস “আদি গ্রামোফোন রেকর্ড ভিওিক নজরুল সংগীত” গ্রন্থ প্রকাশ করেন–এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সুরকার দের তালিকা প্রনয়ণ মাএ।
পরিকল্পিত ভাবে তিনি “নজরুল সংগীত” ব্যপারটি সংশোধন না করে কৌশলে নজরুল ইসলাম কে স্রেফ গীতিকবি বানানোর অপচেষ্টায় সবার নজর ফাঁকি দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একধাপ অগ্রসর হয়। এই উদ্দেশ্যে তিনি নজরুল এর বাণী ১২/১৩ পয়েন্টে ছেপে সুরকার দের নাম ১৪/১৫ পয়েন্টে ছাপানো হয়– যাতে বই খুললেই প্রথমে সুরকার দের নাম সবার চোখে পরে ও সবাই নজরুল ইসলাম কে একজন গীতিকার ভাবতে শুরু করেন।
উল্লেখ্য করা দরকার যে তিনি কথাঃ কাজী নজরুল ইসলাম, সুরঃ হরিপদ দাস মুদ্রণ করে সাধারণ গীতিকার দের বরাবর করতে চেষ্টা করেছেন , তার স্পর্ধা ও ধৃষ্টতা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়না–যদিও গ্রন্থটির দ্বীতিয় সংস্করণ আর হয়নি। এখান থেকেই বাংলাদেশে নজরুল ইসলাম কে আর দশজব সাধারণ গীতিকারের মতো অবস্থানে নামানোর বিফল চেষ্টা করেণ সুধীন বাবু। না বুঝে জাতীয় ও বেসরকারি মিডিয়ার সংগীত অজ্ঞ কমিটির সদস্যরা সহযোগিতা করেন ।
এরপর একটি “প্রসদ” গোষ্ঠীর সুধীন গোএেীয় শিয্য-সামন্তরা মঞ্চে,মিডিয়ায় মুখে বা টেলিভিশনের স্ক্রীনে কথাঃ কাজী নজরুল ইসলাম, সুরঃ হরিপদ দাস ইত্যাদি ব্যবহার করার সুকৌশল ও চিরস্থায়ী বন্দবস্ত করার পরিকল্পনা প্রোজেক্ট হাতে নেয়, যা মিডিয়ার কিছু নজরুল সংগীত অজ্ঞ দের কারণে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। এভাবেই বাংলাদেশে নজরুল সংগীত প্রায় ৭০ বছর পর এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এই সূযোগে দু’একজন নিজেদের ও নজরুল সংগীত এর গানের সুরকার হিসাবে দাবী করে বিভিন্ন সময় FB তে উল্লেখ করে চলেছে ।
(৫) এবার নজরুল সংগীত প্রেমী ও অনুরাগী দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, এসমস্ত সুরকার যদি সত্যি থেকে থাকে তবে “নজরুল সংগীত” বলার যুক্তি নেই অথবা কিছু বলার প্রশ্নই ওঠেনা–তাই ঘোষনায় বলতে হবে যে একটি আধুনিক গান/লোকগীতি/রাগপ্রধান/ কির্তন/ শ্যামা/ ভজন/ দেশাত্মবোধক/সাঁওতালি/ঝুমুর/জাগরণী মূলক/এ্যরাবিয়ান সুরে/গজল/ বিদেশী সুরে/হাসির গান/দক্ষিণ ভারতীয় সুরে/ইসলামি গান ইত্যাদি শুনবেন গিয়াসউদ্দিনের কন্ঠে । লিখেছেনঃ কাজী নজরুল ইসলাম সুরঃ হরিপদ দাস। ওনারাই তো রীতিমতো নজরুল সংগীত নিয়ে Conflict তৈরী করে চলেছেন। অতিসত্বর এই অমার্জনীয় অপরাধ থেকে সবাইকে দূরে থাকতে অনুরোধ করাছি, নচেৎ সময় খুব দূরে নেই যে আপনারা শ্রী সুধীন দাস এর মত ডাষ্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়া তার গানের সুরকার নেই,নেই,নেই। সহকারী কখনোই সুরকার হতে পারেনা-অনুকরন বা, অনুসরণকারী হতে পারে, তাও কবির সুস্থ অবস্থায় নয়। উল্লেখ্য যে শ্রী বিমান মুখোপাধ্যায়, শ্রী সুকুমার মিএ পর্যন্ত কোনদিন সুরকার হিসাবে নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করেনি, এমনকি ১৯৩০-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আকাশবাণী বিগত ৮৫ বছরে কোনদিনও সুরকার হিসাবে কারো নাম উল্লেখ করেনি কলকাতায় ও কারো মুখে শোনা যায়নি–কেবলমাএ শ্রী সুধীন দাস এর কাছে যেন ওহি নাজিল হয়েছে।
মিন্টু রহমান
সাধারন সম্পাদক, নজরুল একাডেমি, ঢাকা