মিন্টু রহমান: বিগত ১০০ বছর নজরুলকে অসম্মান,অবহেলা ও অমর্যাদা করে রাখার প্রেক্ষিতে ও একটি সাম্প্রদায়িক হিন্দু গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে ১৯২১ ঢাকার সালে মুসলিম নবাব সলিমুল্লাহ কতৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও কলকাতা থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হিন্দু শিক্ষকদের একচ্ছত্র আধিপত্যের বদৌলতে শুধুমাত্র রবীন্দ্র সাহিত্য ব্যতীত নজরুল সৃষ্টিকর্মকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়।
অথচ ১৯২১ সালে কবিতা “ প্রলয়োল্লাস “ ও ১৯২২ সালে জানুয়ারীতে ঐতিহাসিক কবিতা “ বিদ্রোহী “প্রকাশিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রদায়িক হিন্দু শিক্ষক গণ পরবর্তীতে এই দুটি কবিতা ও ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হিন্দু+মুসলিম সম্মিলনের নিদর্শণ ও নজরুল রচিত ১ম কাব্যগ্রন্থ “ অগ্নিবীণা “ গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত কবিতা গুলোর মূল্যায়ণ করে তা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্তি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে “নজরুল সাহিত্য” কে একটি বিষয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি, বরং নজরুল কে একজন সাধারণ মাপের কবি হিসাবে গণ্য করে তাদের মৌলবাদী আচরণ প্রদর্শণ করেছেন— অথচ ওই রকম কবিতা রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু কাব্য সাধনায় কখনো রচনা করতে সমর্থন হয়নি-কবিতা গুলের নন্দনতত্ব পর্যালোচনা করলে এর সত্যততা মিলবে।
অপরদিকে স্কুল- কলেজে পাঠ্যসূচিতেও নজরুলের শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত কবিতা গুলো পাঠ্য করা হয়নি-কিন্তু পশ্চিম বংগের হিন্দু কবিদের রচিত অখ্যত-কুখ্যাত কবিদের কবিতা সংযোজন করতে ভুল হয়নি, এমনকি তথাকথিত পন্চকবি ( অখাদ্য) কবিরাও বাদ যায়নি। অমাদেরকে যে বিষয়গুলো খুঁজে বের করে ঐসব কর্মের বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে তা নিন্মে প্রদাণ করা হলোঃ——
(১) ঐ সময় শিক্ষা বোর্ডে পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন কমিটিরে কারা দায়িত্ব পালন তরেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ কাদের দ্বারা পরিচালিত হতো ও কলকাতার কোন কোন ব্যক্তির নির্দেশে বাংলা বিভাগ পরিচালিত হয়েছে। কাদের প্রদত্ত স্বাক্ষরে নজরুল বিষয় বা সাহিত্য পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্তি হয়নি। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত কেন নজরুল সাহিত্যকর্ম আবহেলা ও অমর্যাদা করা হয়েছে , সে সকল শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রণযণ করা।
(২) পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর হিন্দু শিক্ষক গণ কত জন কত বছর বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছে, ওদের নাম ও সময়কাল খুঁজে বের করা ,ওদের সংগে কয়জন মুসলিম শিক্ষক নিয়েগ পেয়েছে এবং তাদের সময়কাল জানতে হবে।সে সময়কার কবি সাহিত্যিক গণ নজরুল কে কতটা মর্যাদা প্রদাণের জন্য কাজ করেছে বা বিরোধিতা করেছে।
বিশেষ করে কবি গোলাম মেস্তফা ও কবি ফররুখ আহমদের এর নিস্ক্রিয়তা কতটুকু নজরুলের অবহেলায় অবদান রেখেছে যা তৎকালীন সাম্প্রদায়েক হিন্দু শিক্ষকদের সহায়ত প্রদাণ ও পেছন থেকে শক্তি জুগিয়েছে। ফলে ২৪ বছর পাকিস্তান সময়কালে নজরুল পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম কবি ও সাহিত্যিকদের দ্বারা নিগৃহিত হয়েছে।
(৩) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ও স্বাধীনতা লাভের পরবর্তিতে এদেশের কবি-সাহিত্যিকদের নজরুলের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা কতটুকু জাতীয় কবি হিসাবে সর্বক্ষেত্রে প্রদাণ করা হয়েছে , কিংম্বা নজরুল অধ্যাপক বা নজরুল চেয়ার প্রাপ্ত ব্যক্তিরা কতটুকু তাদের উপর অর্পিত করণীয় কাজ সম্পন্ন করেছে।
(৪) নজরুলের সৃষ্ট গদ্য ও পদ্য সাহিত্য একেবারে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গান বিষয়ে কেন সকল নজরুল চর্চাকারীরা অন্ধের মতো পড়ে রইলেন বা পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন একটু ভেবে দেখতে হবে।সম্ভবত নজরুলের মহৎ সৃষ্টিকে আড়াল করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।

এ রকম হাজারো জিজ্ঞাসা আজ নজরুল অনুরাগীগের কাছে প্রতিদিন আলোচিত হচ্ছে , তাই সমস্ত অজানা বিষয় গুলো চিহ্নিত করে নজরুলের প্রতি অসম্মান , অবহেলা ও অমর্যাদার কারণ নির্ণয় করে বাংলাদেশের প্রতিটি নজরুল অনুরাগীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে, এবং এ থেকে উত্তরণে এই অবহেলার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পাশাপাশি এই নজরুল বিরোধী দের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব ও ঘৃণা প্রকাশ করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, তবেই দ্রোহের কবি, সাম্যবাদী কবি, মানবতাবাদী কবি, সহ অবস্থানের কবি ও প্রৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি প্রকৃত সম্মান এ মর্যাদা প্রদর্শণ করা হবে।
জাতীয় নির্বাচন-২৪ এর পর দেশব্যপী আন্দোলন+
# তৃণমূল পর্যায়ে নজরুল অনুরাগী, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানকে অংশ গ্রহণের জন্য বিনীত আহবান জানাই- কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, কবিকুল শিরেমনি এবং মহা বিশ্বকবি ।
মিন্টু রহমান, নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এবং নজরুল সংগীতজ্ঞ।