নিদ টুটে গেল তিমির নিশিথে কে যেন এসেছে ঘরে!
শিহরণ লাগে সর্ব অঙ্গে জেগে নাকি ঘুম ঘোরে ।
কার ছোঁয়া পেয়ে দুরু দুরু কাঁপে বক্ষ আমার হায়,
রূপ তরঙ্গ অঙ্গে তাহার থৈ থৈ বয়ে যায়।
সহসা নেত্রে দেখিনু চাহিয়া এ কোন উন্মাদিনী!
ভূ-তলে বসিয়া নত মস্তকে রয়েছে চরণ চুমি ।
অর্ধ গাত্রে ধুসর বসন কন্ঠে মতির হার,
ভূষণ ভেদিয়া অঙ্গ দু’খানি উঁকি মারে বার বার ।
রক্ত বরণ ওষ্ঠ যুগল কাঁপিয়া কাঁপিয়া ওঠে,
অঙ্গ ছাড়িয়ে শাড়ির অঞ্চল কেবলই ভূ-তলে লুটে ।
টানা টানা তার নয়ন দু’টো কৃষ্ণ কাজলে আঁকা,
এলো কুন্তল ছড়ায়ে সে যেন অবগুণ্ঠনে ঢাকা ।
টোল পড়া তার কপোল প্রান্তে ছোট্ট তিলক বিন্দু
কিনার বাহিয়া বহিতেছে যেন প্রলয়ংকারী সিন্ধু ।
ললাটের পরে জাগিয়াছে শত ঘর্ম শিশির কনা,
শ্রান্ত মলিন মুখ খানা দেখে হয়েছি যে আনমনা ।
বক্র চিকন ভ্রু-যুগলের মাঝখানে নাহি ফাঁকা,
সেতু বন্ধনে দু’টোই যেন মিতালী পাতিয়ে রাখা ।
ধবধবে ধবল দন্ত বাহার চাহিতে চমকে আঁখি,
হাস্য না জানি কতই মিষ্টি কাড়িবে পরান পাখি ।
গণ্ডদেশের চর্ম থোকা যেমন পরানো হার,
স্বর্ণের গড়া নাসিকা নোলক কাঁপিতেছে থর থর ।
আকিক, গোমেদ পাথরে খসিত অঙুলির কংকন,
শুভ্র, সরু কোমর দেখিয়া কামনায় উথলে মন ।
আলতা রাঙা পদদ্বয়ে পড়া নূপুরের মৃদু ধ্বনি,
হৃদয় কোনের সুপ্ত পিরিত কেবলই পায় উস্কানি ।
একি অপরূপ রূপসী কন্যা দৃষ্টিতে মোহ মায়া,
হৃদয় কোনের আঙিনায় বুঝি পড়িল মনের ছায়া ।
কে গো তুমি রাখো অক্ষি আমার আঁখির পরে,
তোমার কপোল বাহিয়া কেন জল মুক্তা ঝরে?
থর কম্পনে নাচে কেন তব ক্লান্ত দেহ খানি?
নিশাচর কোন হুর গো তুমি গেলেমান সন্ধানী?
এমন গহীন নীরব নিশিথে কেন তব আগমন?
উষ্ণ স্পর্শে জাগালে আমার অচেতন চিত্তে চেতন!
কন্ঠ মম শ্রবনে কামিনী উর্ধ্ব পানে চায়,
কহিতে নারি আসিয়াছি ওগো কিশের অন্বেষায় ।
ফুপিয়া ফুপিয়া কাঁদিছে লুটিয়া করুন মিনতি তার,
পূঁজিব তোমায় করিয়া উজার যা কিছু আছে আমার ।
চন্দ্র , সূর্য স্বাক্ষী রাখিয়া, করিতেছি মিনতি,
বক্ষান্তরে তোমাকেই আমি করেছি পরম পতি ।
ভালোবাসা নাহি যদি পাই গো আপনা হতে
দাসী হইয়া চীরকাল ওগো রইব বসুমতীতে ।
মস্তকে রাখি হাত —
সুধালাম আমি জানো কি আজি সবে বরাতের রাত?
এই নিবাসে মেহমান হইয়া আগমন যবে মোর,
যাচাই না করিয়া উতলা কেন, হইয়াছো বিভোর?
পিতাজি তোমার ঠাঁই দিল মোরে, প্রিয়জন জানি,
ঘাতকতা করে বক্ষে তাঁহার কেমনে আঘাত হানি?
কূল, মান, যশ গচ্ছিত সব যাইবে জলাঞ্জলি,
তোমার পিতার বিশ্বাসে আমি কেমনে মাখাবো কালি?
পবিত্র নিশি জেনে —
তোমার নিকট আসিয়াছি একা ভাগ্যাণ্বেষণে ।
পদতলে তব এজীবনে যদি নাহি মেলে আশ্রয়
সারাজীবনের কাতরাণী মোর সইবেনা দয়াময় ।
ডুবিতে সূরুজ, করিয়া সিনান, বসিয়া এবাদতে
তোমার চরণ ধুলির আশিস চাহিয়াছি বরাতে ।
প্রিয়া বলে করুণা করে একবার কথা কও,
আলতো ছোঁয়ায় চিত্ত আমার শীতল করিয়া দাও ।
আকুতি সহিতে নারি —
দুরু দুরু বুকে চিবুকে তাহার হস্ত প্রসার করি ।
হেরে গেছি , হেরে গেছি আমি চাহিয়া নয়নপাতে,
ধূম্র ধুসর কুণ্ডলী যেন গুমরিয়া মরে তাতে ।
হাতে হাত রাখি, চোখে চোখ আর ওষ্ঠতে ওষ্ঠ,
নিস্তব্ধ নিশিথে যেন কাঁপিল সেই প্রকোষ্ঠ ।।
হা হা হা
7
“প্রেম” -মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান
