মিন্টু রহমান: কাজী নজরুল ইসলাম একমাএ বাংগালী সংগীতজ্ঞ যিনি একাধারে উস্তাদ মস্তান গামা,কাদের বক্স ও উস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁ’র কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তীতে গীতিকবি, সুরকার ও কন্ঠ শিল্পী হিসাবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করতে সমর্থ হয়। এমনকি রবীন্দ্রনাথ এর জনপ্রিয় ধ্রুপদী ধারায় সৃষ্ট সংগীত কে অতিক্রম করে নিজস্ব ভংগীতে উচ্চাঙ্গ ধারাকে সংযোজন করে বৈচিএপূর্ণ নানা ধরণের গান সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন- যা আজো পর্যন্ত বহমান।
উল্লেখ্য যে বহুদিন ধরে ডি এল রায়, অতুল প্রসাদ ও রজনী কান্ত অনেক চেষ্টা করে রবীন্দ্র সংগীতের প্রভাবমুক্ত হয়ে গান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি , কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম নিজস্ব গায়কী ও বাণী সৃষ্টি করে রবীন্দ্র বলয় ভাংগতে সমর্থ হয়েছেন। এ সময় নজরুল সংগীত এর চাহিদা উপলব্দি করে বিদেশী বেনিয়া গ্রামফোন কোম্পানি গুলো ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্বারে রেকর্ড করে বাজারজাত করতে নজরুল ইসলাম কে আর্থিক বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ করে। নজরুল অভাবগ্রস্ত হওয়ায় তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।তৈরী হতে থাকে নতুন নতুন গান, নজরুল তাঁর সহকারী হিসাবে কমল দাসগুপ্ত কে প্রথম নিয়োগ দেন- পরবর্তীতে চিও রায়, প্রণব রায় ও শেষে গীরিন চক্রবর্তী সহকারী ও সাহায্যকারী হিসাবে যোগ দেয়। এরা সবাই ভাল কন্ঠ শিল্পী হিসাবে ও পরিচিত ছিলেন।
মজার ব্যপার যে তাঁরা সহকারী,সহযোগী বা কন্ঠ শিল্পী হয়ে এলে ও নজরুলের গান সংরক্ষন, স্বরলিপি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা কিছুই করেনি বা রেকর্ড প্রকাশের সময় নজরুল কে এক নজর দেখাবার প্রয়োজন মনে করেনি।কিন্তু ঐ সময়ই তাঁরা সুরকার হিসাবে রেকর্ড লেবেলে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করতে একটুও ভুল করেনি- এতে কি বোঝা গেল,রবীন্দ্র বলয় শুধু কাজী নজরুল ইসলাম ভাংগেনি, এরাও ভেংগেছে বলে পরোক্ষভাব দাবীদার- তাই কমল দাসগুপ্ত গং নজরুল ইসলামের সাথে সাথে নতুন ধারার গান সৃষ্টি করেছেন বলতে চায়- যা বহুদিন ধরে ডি এল রায় , অতুল প্রসাদ ও রজনীকান্ত পারেনি।

এছাড়া তাঁরা কেউ কেউ গীতিকবি রূপেও রেকর্ড লেবেলে আত্মপ্রকাশ করেছেন। অথচ কোন কিছুই প্রত্যক্ষ করেনি নজরুল ইসলাম বা তাঁকে এই বিষয়ে অবগত করা হয়নি।এমনকি কোন প্রমাণপএ/evidence উল্লেখিতদের হাতে নেই যা আজ পর্যন্ত প্রদর্শন করা হয়েছে।একজন সংগীতজ্ঞের সহকারী হলে অবশ্যই তিনিও একদিন উস্তাদের কাছে শুনতে শুনতে একজন ভাল সুরকার/গীতিকার হওয়াটা কোন ব্যপার নয়, কিন্তু নজরুলের গান প্রকাশের সময় থেকেই তারা কি করে না জানিয়ে সুরকার হিসাবে রেকর্ড লেবেলে তাঁদের নাম লিপিবদ্ব করতে সাহস পায় তা অবিশ্বাস্য।
নজরুল এর ইসলামী গানের সুর জনপ্রিয় ও বিখ্যাত, এখানেও কমল দাসগুপ্ত কে ইসলামী গানের সুরকার হিসাবে পাওয়া যায়, অথচ একজন হিন্দু ব্যক্তির পক্ষে সেসময় ইসলাম শব্দটি ছিল ঘৃনিতও নিন্দিত, কাসেম মল্লিক,আব্দুল লতিফ ও আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ছাড়া কোন মুসলমান শিল্পী খুঁজে পাওয়া যায়না, কারণ মুসলিম সমাজে গান গাওয়া হারাম বলে গণ্য হতো।একবার ভেবে দেখুন তো রবীন্দ্র বলয় ভেংগেছে নজরুল নাকি কমল দাসগুপ্ত গং ? গজল , আধুনিক, ভজন , কীর্তন, শ্যমা, লোকগীতি, ঝুমুর,কাজরী, তরুণে্যর গান ও জাগরনীমুলক গান কে সৃষ্টি করেছে , নজরুল নাকি কমল দাসগুপ্ত গং ? গানে আরবী, ফার্সী,উর্দু,হিন্দী অর্থাৎ বিদেশী শব্দ ব্যবহার কে করেছে?
মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রায় তিনশত নজরুল সংগীত গেয়েছেন, ট্রেইনার ছিলেন বিমান মুখোপাধ্যায়, কিন্তু তাকে কেন সুরকার বলা হয়না? বর্তমানে অঁখাদ্য-কুখাদ্য,অপদার্থ দের কেন সুরকার মানতে হবে, যার সাথে নজরুলের কোন সম্পর্কই নেই । নজরুল সান্নিধ্যধন্য সিদ্বেশ্বর মুখোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিএ মহাশয় তো কোনদিন এরকম উদ্ভট দাবী করেনি, সুকুমার মিএ তো “ফিরিয়া যদি সে আসে” গানটি নিয়ে কোন বক্তব্য দেয়নি- এরা কারা যে অত সহজে নিজের নাম রৌওশন করতে প্রতিদিন বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের নামজারি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ?

কথায় আছে ভরা কলস নড়েনা, খালি কলস শুধু বাজে- ভাংগা রেকর্ড শুনতে আর ভাল লাগেনা, ভারতের দাবীদার সুরকাররা বা তাদের ছেলেমেয়ে দের আজ পর্যন্ত তো এরকম দাবীর কথা কোথাও বলেনি বা প্রকাশ করেনি- তবে নতুন আতেল এরা কারা, কি তাদের যোগ্যতা বা মেধা আছে যে নজরুল এর নাম ভাংগিয়ে সওদা করতে চায়?
উপসংহারে সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে চাই যে, নজরুল সংগীত শুধুই নজরুল সংগীত ভাবতে চাই- এর সংগে কারো সম্পৃক্ততা কোন ভাবেই হওয়ার সূযোগ নেই, কেউ দাবী করলেও আমরা জাতীয় কবির মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে দিতে পারিনা বা কবির অমর্যাদা করতে নারাজ।
মিন্টু রহমান
সাধারন সম্পাদক, নজরুল একাডেমি, ঢাকা