মিন্টু রহমান: <<< শুভ জন্মদিন >>>নজরুল একাডেমী ঢাকা গভীর শ্রদ্বা জ্ঞাপণ করছে । ১১ আগষ্ট কিংবদন্তি শিল্পী ও নজরুল সংগীত এর জাদুকরী কন্ঠের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাধক-শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর শুভ জন্মদিন । জানা মতে, তার প্রায় ৩০০ নজরুল সংগীত গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছে, এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু গান তিনি ভিন্ন সুরে গেয়েছেন–তবে অাদি সুরে তার গানের সংখ্যা ও কম নয়, কিন্তু একদল নিন্দুক তাকে ব্যর্থ বানাতে ঘৃনিত কৌশল এর আশ্রয় নিয়েছে বললে হয়তো ভুল হবে না–এর পেছনে তার মেধা, যোগ্যতা,রেওয়াজি কন্ঠ,মেজাজ গায়কী,গানে অলংকরণ,উপস্থাপন,পান্ডিত্ব সর্বোপরি সংগীত সাধনা মূলত ক্ষোভের কারণ–এ রকম সর্ব গুনে গুনান্বিত finished কন্ঠশিল্পী পৃথিবীতে খুব কম জন্মায়।
নজরুল একাডেমী ঢাকা, সব সময় এই মহান শিল্পীকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে এসেছে,তিনি নজরুল একাডেমী তে স্বাধীনতা লাভের পরপরই এসে গান করেছেন দরাজ গলায়, মজরুল একাডেমী তার গান এর ব্যপারে উদার ও শ্রদ্বাশীল, কারণ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগে’র পরবর্তী তে কলকাতা’য় নজরুল সংগীত বিলিন হওয়ার অবস্থা হয়েছিল, প্রায় সকল শিল্পী নজরুল সংগীত গাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল, আংগুরবালা, ইন্দুবালা,শচীন দেব বর্মন সহ সকল নজরুল সান্নিধ্যধন্য শিল্পী’রা কেন জানি কৌশলে এড়িয়ে চলতে চাইতো, যদিও আংগুরবালা দেবি’র তত্বাবধানে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় গান গেয়েছে তবুও কেমন যেন একটা গা’ছাড়া ভাব লক্ষণীয়। পরবর্তীকালে HMV co.এর ট্রেইনার ও বাংলা সংগীতের অগাধ পান্ডিত্যে’র অধিকারি বলে স্বীকৃত শ্রী বিমান মুখার্জী মানবেন্দ্র কে দিয়ে প্রচুর নজরুল সংগীত রেকর্ড করিয়ে বাজারজাত করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান গ্রহন করেন।

সংগীত প্রিয় জনতা মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর গানে পাগলপারা হয়ে শুধুই নজরুল সংগীত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন–তদ্রূপ ঢাকা সহ সারা দেশে মানবেন্দ্রে’র কন্ঠে নজরুল সংগীত ছাড়া কোন গানই পছন্দ হতোনা, এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় স্বাধীনতা উওরকালে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর ঢাকা সফরকালে ঢাকা স্টেডিয়ামে সংগীত রজনীতে-তিনি পরপর অনেকগুলো নজরুল সংগীত গেয়ে মাঠে উপস্থিত লাখো জনতা কে পাগল করে ছেড়েছিল যে ঘোর আজো কাটেনি নজরুল অনুরাগী শ্রোতাদর্শকের–তাই মানবেন্দ্র কে ভুল সুরে গাওয়ার অপরাধে এ দেশের কিছু গন্ডমূর্খ ও সংগীত না জানা ব্যক্তিদের নিষিদ্ধ করার পরও মানবেন্দ্রে’র গাওয়া গান শোনা একচুল বন্ধ করতে পারেনি, সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউট কতৃপক্ষ মানবেন্দ্র কে নিষিদ্ধ করলেও আম-জনতাকে ধরে রাখতে পারেনি, কিন্তু নজরুল একাডেমী মানবেন্দ্রে’র গাওয়া গান শোনতে কাউকে বারণ করেনি, তবে শুদ্ব সুরে অাস্তে অাস্তে ধারণ করতে উপদেশ দিয়েছে, এ ছাড়া যে গানগুলো’র রেকর্ড খুজে এখনো পাওয়া যায়নি সে ক্ষেত্রে মানবেন্দ্রে’র গাওয়া গান কে স্বীকৃতি দিয়েছে ।

একটি কথা বলা খুবই দরকার যে, সে সময় মানবেন্দ্র বাবু নজরুল সংগীতের হাল না ধরলে যে কি হতো এক আল্লাহ্ জানেন, নজরুল সংগীত হয়তো মহা বিপদের মধ্যে পতিত হতো। অামরা নজরুল একাডেমী শিল্পীবৃন্দ একাডেমী’র প্রতিষ্ঠাতা কবি তালিম হোসেন এর নেতৃত্বে,অগ্নিবীণা’র আমন্ত্রণে আশির দশকে প্রথম “দুই বাংলা’র সংগীত সম্মেলন” এ অংশগ্রহণ করি, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ঐ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট, রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য ড. রমা চৌধুরী তখোন সভাপতি, মৌলালী ইয়থ সেন্টার অডিটোরিয়াম এ দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান এ প্রথম মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর সাথে পরিচয়,বন্ধুত্ব ও বড় ভাই সম্পর্ক স্থাপন, এমন একজন মহান শিল্পীকে মনেই হলোনা তিনি মানবেন্দ্র বাবু–কি সহজ-সরল উদার, সদা হাসিমুখ এক নিরব সংগীত সাধক, ধন্য হয়ে গেলাম ।

এর পর দীর্ঘ একটানা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বারবার কলকাতা যাওয়া-অাসা, মানবদা’র সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও গানের আসর, আজো নজরুল একাডেমী অগ্নিবীণা একসাথে কাজ পরে চলেছে, কিন্তু আমাদের প্রাণপ্রিয় নজরুল সংগীত সম্রাট আর আমাদের মাঝে নেই, এক বুক অভিমান নিয়ে চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
মিন্টু রহমান
সাধারন সম্পাদক, নজরুল একাডেমি, ঢাকা