মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: অনেকে মনে মনে রেগে যেতে পারেন। কারণ আমি পৃথিবীর সব মানুষদেরই প্রতিবন্ধী বলেছি।না, আসলে তা নয়। আসলে প্রতিবন্ধী বলতে সাধারণত যা বুঝায় আমি তাদের কথা বলছি না। সাধারণত প্রতিবন্ধী বলতে বুঝায় জন্মগত কিংবা যে কোনোভাবে শারীরিক অথবা মানসিকভাবে অক্ষম। আমি মনে করি পৃথিবীর সব মানুষ ই শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম। কারণ সব মানুষ তো আর সব কাজের কাজি নন।যে মানুষ যে কাজ পারে না সে মানুষ ই সেই কাজে প্রতিবন্ধী।আবার অনেকে প্রতিবন্ধক ও বটে।যেমন আপনি একটি ভালো কাজ করবেন আপনাকে করতে দিবে না। সে হচ্ছে প্রতিবন্ধক। এই বিষয় টা আরেকটু ভেঙে বলবার আগে গোটা পৃথিবীর প্রতিবন্ধীদের হালচাল একটু দেখে আসি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীর আনুমানিক ৬৫ কোটি লোক, যাদের মধ্যে ২০ কোটি শিশু, এরা কোন না কোনভাবে পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী৷ এসব অসহায় মানুষের ৮০ শতাংশের বাস দরিদ্র দেশগুলোতে, যারা স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত বলা চলে৷ বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা আবার জোরালো করে বলার সময় এল৷ পৃথিবী জুড়ে নানা দেশে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আয়োজন চলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ নানা সংস্থা নানা দেশে এ আয়োজনে শামিল হয়েছে৷ কিন্তু এ থেকে কি কোন উন্নতি এসেছে? উদাহরণ হিসাবে আসতে পারে আফ্রিকার কথা৷ সেখান পঙ্গুত্ব বা প্রতিবন্ধী অবস্থাটাকে রোগ কিংবা অন্য কোন কিছু হিসাবে দেখা হয়না৷ দেখা হয় সৃষ্টিকর্তার শাস্তি হিসাবে৷ আর শারীরিক প্রতিবন্ধী অবস্থা নিয়ে বাঁচার জন্য তাদের বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সেখানকার মোট জনসংখ্যার শতকরা দশ শতাংশ মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী৷ তবে বিশ্ব ব্যাংক জানাচ্ছে, এই সংখ্যা হতে পারে দ্বিগুনেরও বেশি৷
আসুন এ ক্ষেত্রে তানজানিয়ার অবস্থা কি তা শুনি৷ তানজানিয়ার রেডিও মিলিমানির সম্পাদক টুমা ডান্ডি৷ যিনি নিজেও চলাফেরা করেন হুইল চেয়ারে৷ বললেন, আমাদের দেশের পঙ্গু এবং প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বেকারত্ব এবং কোন আয় না থাকাটা সবচেয়ে বড় হুমকি৷ চাকুরিদাতারা আমাদের চাকুরি দিতে উৎসায়ী নয়৷ কারণ তারা মনে করে পঙ্গু মানুষের মেধাটাও পঙ্গু৷ রাস্তা থাকে ভাঙ্গা, পাবলিক বাসেও উঠা যায় না৷ আমাদের বাসে নিতে চায়না বাস চালকরা৷ কারণ তারা প্রতিবন্ধীদের মনে করে বোঝা! শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম এসব মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷ কারণ বাড়ছে পৃথিবীর জনসংখ্যা, বৃদ্ধ লোকের সংখ্যাও বাড়ছে৷ এসব কারণে স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার ওপর ক্রমেই বাড়ছে চাপ৷ পঙ্গু মানুষের প্রতি সমাজের দৃষ্টি ও বিবেচনা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে৷ বলা হচ্ছে, এ জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন৷পঙ্গুত্ব হতে পারে দারিদ্র্যের কারণ ও পরিণতি, দুটোই৷ বিশ্বের ৮০ শতাংশ পঙ্গু মানুষ থাকে দরিদ্র দেশগুলোতে৷ তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের অসুবিধার হয় মুখোমুখি, অধিকার থেকে হয় বঞ্চিত৷
দারিদ্র্যের কারণেই তারা স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার আওতার বাইরেই থেকে গেছে৷ ওয়াইট গ্যাব্রিয়েল৷ এসোসিয়েশন অফ ডিসএবিলিটি এন্ড ডেভলপমেন্ট কো-অপারেশনে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷ বললেন,আফ্রিকার প্রতিবন্ধী মানুষ প্রচন্ডভাবে দারিদ্র্যের কষাঘাতের শিকার৷ এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ৮২ ভাগ প্রতিবন্ধী মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে৷সরকারি বেসরকারি উন্নয়নমুখী উদ্যোগগুলোও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষের কথা বিবেচনায় আনে না৷ পঙ্গু এসব মানুষের অধিকার সম্পর্কে তাই জাতিসংঘ কনভেনশন নামের আরো উৎকৃষ্ট প্রতিবন্ধীরা দেশের ক্রম-অগ্রসরমাণ উন্নতির জন্য পঙ্গুত্বের ইস্যুকে কেন্দ্রে রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছে৷ স্বাস্থ্য ও সামাজিক নির্ণায়কগুলোর দিকে নজর দিতে গেলে পঙ্গু মানুষের অধিকার ও স্বাস্থ্য রক্ষা প্রয়োজন, তাহলে মানবাধিকারও পরিপূর্ণ সফল রূপ পেতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।যদিও কাজের নামে ঠনঠন। কেবল বক্তৃতা আর বক্তৃতা।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৭ ভাগেরও অধিক মানুষ নাকি প্রতিবন্ধী।সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮ জন।চিন্তা করা যায়? এ তো গেলো চোখে দেখা যায় এমন প্রতিবন্ধীদের কথা।গোটা দুনিয়ার ক্ষমতাশালী মানুষেরা যদি দেখতে না পান তাহলে আসল প্রতিবন্ধী কারা?অর্থাৎ যাঁরা কর্ম প্রতিবন্ধক, যাদের জ্ঞানে, ধ্যানে, কর্মে,মর্মে,ধর্মে,জন্মে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে আসলে তো তারাই প্রতিবন্ধী। সেই অর্থে তো আমরা সকলেই প্রতিবন্ধী।আর যারা প্রতিবন্ধী কে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তাদেরকে আমরা কী বলতে পারি?