কলেজে ভর্তি হলাম। কটা দিন ক্লাস করতে না করতেই বন্ধ। এমনকি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে পরিচয় হবার আগেই সব বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন সময়টা আসতে না আসতেই পরাধীনতার দেয়ালে বন্দি। আর ঘরে ভালো লাগে না। সারাদিন কাজকর্মহীন জীবনটা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এভাবেই হতাশা প্রকাশ করছিলেন মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস শান্তা।
তার প্রাত্যহিক রুটিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শুধুই যাপন। জীবন আর কই? এই সকালে ঘুম থেকে ওঠা, খাওয়া।
এরপর শুরু মোবাইলে চোখ রাখা। আবার দুপুরে খাওয়া, ঘুমানো। ফের মোবাইলে চোখ রাখা, আবার ঘুমিয়ে যাওয়া। জীবনে বৈচিত্র্য শূন্য হয়ে গেছে। পরিবারের সঙ্গে থাকাটা ভাগ্যের বিষয় কিন্তু একঘেয়েমি চলে এসেছে কলেজ না থাকায়।
শান্তা বলেন, প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উঠলাম কিছুই টের পেলাম না। মাত্র দুই একটা অনলাইন ক্লাস হয়েছে মাত্র। পরীক্ষার জন্য আগে কিছুটা বই নিয়ে বসতাম। এখন তাও নাই। আমাদের অটোপ্রমোশন দেয়া হলো, এটা ভালো। তবে কোন ক্লাস হলো না, কোন অ্যাসাইন্টমেন্ট হলো না। এই যে ঘাটতি রয়ে গেলো এটা পুষিয়ে উঠবো কীভাবে?
তিনি আরো বলেন, করোনার জন্য কলেজ বন্ধ রাখা হলো। কিন্তু বিকেল বেলা কলেজে প্রাঙ্গণে পা দিতেই দেখা মিলবে হাজারো মানুষের আড্ডা। এই আড্ডায় করোনা নেই? করোনা কী শুধু ক্লাস রুমে ঢুকে আছে? আবার বলা হচ্ছে, টিকা দিয়েই ক্লাস শুরু করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকার কোন তথ্য নেয়া হলো না। আমার কথা করোনা একটা সমস্যা। সমস্যা থাকবে তাই বলে আমাদের মুখ লুকিয়ে থাকতে হবে? আপনি বলেন, কোন সেক্টরটা বন্ধ? দেশে নির্বাচন অব্দি হচ্ছে তবে কেন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ?
শান্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেশ কয়েকটা মুভিতে দেখেছিলাম বিচ্ছিন্ন দ্বীপে একা আটকে যায়। গাছ লতা পাতা খেয়ে টিকে থাকে। কিন্তু অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বা কথা না বলতে পেরে দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরাও যেনো দিনদিন সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কথা বলার মানুষ আছে কিন্তু প্রাণ নেই। কথা যে সব অনলাইনে। আমিও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকে আছি, একটু শ্বাস নিতে চাই।
সংগ্রহীত