সাঈদ মাহমুদ আলী রেজা: জ্ঞানগর্ভ লেখা পোস্ট দেবার মত জ্ঞানী মানুষ আমি নই। দেশ জাতি নিয়ে ভাবার যোগ্যতাও আমার নাই। তাবৎ দুনিয়ায় প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীতে ব্যক্তির নামকরনের নিজস্ব প্রচলিত প্রথা থাকলেও আমাদের নেই। সুদীর্ঘকাল বিদেশে থাকার কারনে সন্তানদের আর নিজের পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন চেকিং এ দাঁড়িয়ে অনেকবারই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমার বিশ্বাস অনেকেরই হয়েছে। তাই বিবেকের তাড়না থেকেই লেখা। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসাটা জরুরি। আমার বিশ্বাস একটি ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরী করে, যুগ যুগান্তরের অনিয়ম ভেঙ্গে, আমাদের দেশেও একটি উপযুক্ত নেইমিং কনভেনশন প্রচলন করা সম্ভব। অবশ্যই সরকার, সামাজিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসতে হবে, আমাদের প্রয়োজনেই।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে নেইমিং কনভেনশন বা নামকরন প্রথা এবং আমাদের প্রেক্ষাপটঃ
(১ম পর্ব)
প্রায় প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীতে ব্যক্তির নামকরণের একটি নির্দিষ্ট রীতি রয়েছে। এটাকে বলে নেইমিং কনভেনশন। নেইমিং কনভেনশন বা নাম করন প্রক্রিয়া কোন একটি জাতির ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। এমনকি অনেক দেশে নামকরনের বিষয়ে সরকারী নিয়মনীতি এমনকি নানান ধরনের বিধিনিষেধও রয়েছে। জার্মানীতে সম্ভবতঃ সবচেয়ে কড়া বিধিনিষেধ, যেখানে ‘সিভিল রেজিষ্ট্রেশন অফিস’ কর্তৃক বাচ্চার নামের রেজিষ্ট্রেশন করাতে হয়। বিধি মোতাবেক না হলে বাবা মা তার সন্তানের জন্য পছন্দ করা নাম নাও পেতে পারে।
যদিও ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে নামকরণ প্রথা অনেক বিশদ আলোচনার দাবী রাখে, খুব সংক্ষেপে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
নাম ছোট বড় যাই হোক না কেন, নামের দুটো বা তিনটি অংশ থাকে;
১. প্রদেয় নাম বা ব্যক্তিগত নাম (Given name/ Personal name) এই অংশটিই ব্যক্তির পরিচিতিমুলক নাম। অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীতে নামের এই অংশ প্রথমে থাকে তাই একে নামের প্রথমাংশ (First name/Forename) ও বলা হয়। কারো এক বা একাধিক Given name থাকতে পারে।
২. পারিবারিক বা বংশগত নাম (Surname): প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীতেই এটি নামের আবশ্যকীয় অংশ।
৩. মধ্যাংশ (Middle name): অনেক জাতিগোষ্ঠী নামের মধ্যাংশ বা Middle Name ব্যবহার করে থাকে। এই অংশে সাধারণত প্রদেয় নামের (Given name) দ্বিতীয় বা বর্ধিত অংশ, বাবার নাম অথবা মায়ের বংশগত নাম ব্যবহার করা হয়।
নামকরণ প্রক্রিয়া দেশে দেশেঃ
১. এ্যাংলো অস্ট্রেলিয়ান জাতি সমুহঃ
ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ সকল ইংরেজী ভাষাভাষী জাতি সমুহে প্রধানত ২টি বা ৩টি অংশ থাকে। প্রথম অংশ বা প্রথম দুটো অংশ প্রদেয় বা ব্যক্তিগত নাম, শেষাংশ পিতার বংশগত নাম। দ্বিতীয় অংশ ঐচ্ছিক।
যেমনঃ প্যাট্রিক ডেনিয়েল হিগিন্স Patrick Daniel Higgins (আইরিশ নাম)
প্যাট্রিক ডেনিয়েল প্রদেয় বা ব্যক্তিগত নাম ( First name) হিগিন্স বংশগত নাম (Surname)। দ্বিতীয় অংশ (Middle name) ডেনিয়েল কাগজে কলমে বা পরিচিতিতে ইদানীং খুব কমই ব্যবহৃত হয়। কাজেই ভদ্রলোক প্যাট্রিক হিগিন্স (Patrick Higgins) নামেই পরিচিতি পান। রীতি অনুযায়ী মহিলারা বিয়ের পর স্বামীর বংশগত নাম ধারন করেন। যেমন এমিলি স্মিথ (Emily Smith), প্যাট্রিক হিগিন্সকে বিয়ে করে হয়ে যান এমিলি হিগিন্স (Emily Higgins)
আইরিশ ছেলে মেয়েদের ব্যক্তিগত নাম (Given name) বাবা ও মায়ের পরিবার সদস্যদের নামে রাখা হয়, একটি বিশেষ প্রচলিত ক্রম ব্যবহার করে। যেমন পরিবারে প্রথম ছেলের নাম দাদার নামে, প্রথম মেয়ে নানীর নামে হয়ে থাকে।
২. আরবদেশ সমুহ ও মধ্যপ্রাচ্যঃ
আরবদের নামে সাধারনত নামের ৩ টি অংশ থাকে। প্রথমাংশে ব্যক্তিগত বা নিজস্ব (First name) নাম, দ্বিতীয়াংশে (Middle name) বাবার নাম, তৃতীয়াংশে (Surname) পিতার বংশগত নাম। যেমনঃ আহাম্মাদ সাইদ কালবানী (পুরুষ), নুরা আব্দুল্লাহ আলমামারী (মহিলা)। ভদ্রলোকের নিজ নাম আহাম্মাদ বাবার নাম সাইদ এবং পিতার বংশগত নাম কালবানী। মেয়েদের নাম বিবাহের পরও অপরিবর্তিত থাকে। কোন কোন আরব দেশে (সৌদী, সুদান) পিতার নামের পর পিতামহের নাম জুড়ে দেয়া হয়। যেমনঃ ইয়াসির সীদ-আহমেদ আবু-নুর আলখালিলি। নিজ নাম ইয়াসির, বাবা সীদ আহমেদ, দাদা আবু নুর, আল খালিলি বংশগত নাম।
৩. পুবের দেশ সমুহ ( চীন, জাপান, কোরিয়া, ইত্যাদি) অন্য জাতিগোষ্ঠীর মতো এদের (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) নামের ২টি অংশ থাকে। কিন্তু মজার ব্যপার, ক্রমবিন্যাসটা অন্যান্যদের ঠিক বিপরীত। যেমন জ্যাং চেন (Zhang Chen) (চাইনিজ) ; কিম মিনসু (Kim Min-su) (কেরিয়ান), ইয়ামামোতো ইয়োকিয়ো (Yamamoto Yukio) (জাপানী)। এক্ষেত্রে জ্যাং, কিম কিংবা ইয়ামামোতো পিতার বংশগত নাম আর চেন, মিন-সু, ইয়োকিয়ো যার যার ব্যক্তিগত নাম। কাজেই এদের নামের ক্রমবিন্যাস [Family name] [Given Name]
৪. পর্তুগাল, স্পেন ও তাদের কলোনীভুক্ত দেশ সমুহঃ
এদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত এক বা একাধিক নামের (First/ Given name) এর পর বাবা এবং মা দুজনের বংশগত নাম (প্রথমাংশ) ব্যবহার করে।
i) এক্ষেত্রে স্পেন বা স্পেনের কলোনীভুক্ত দক্ষিন আমেরিকার দেশ সমুহে (আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরু, চিলি, কলোম্বিয়া, কোষ্টারিকা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, পানামা, ইকুয়েডর, কিউবা ইত্যাদি)
এরা নিজস্ব নামের পর প্রথমে বাবার বংশগত নাম পরে মায়ের বংশগত নাম ব্যবহৃত হয়।
স্প্যানিশ নামঃ [Given Name(s)] [Father’s Surname] [Mother’s Surname]
* উদাহরনঃ জুয়ান রডরিগেজ জাপাটেরো (Juan Rodriguez Zapatero)
* ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত নাম (First/ Given name) জুয়ান। বংশগত নামের (Surname) দুটো অংশ। রডরিগেজ বাবার বংশগত নাম, জাপাটেরো মায়ের বংশগত নাম।
* মনে করি এই ভদ্রলোকের বিয়ে হলো সোনসোলেস এস্পিনোসা ডিয়াজ (Sonsolese Espinosa Diaz) নামের মহিলার সাথে।
* তাদের ছেলের নাম রাখা হলো (Given name) এলবা (Alba)
কাজেই ছেলের পুরো নাম হবে Alba Rodriguez Espinosa অর্থাৎ Given name এর পর পিতামাতা ২ জনের Surname এর প্রথমাংশ।
ii) পর্তুগাল বা পর্তুগীজ কলোনীর দেশ সমুহে (ব্রাজিল, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ইত্যাদি)
* পর্তুগীজ নামঃ [Given name(s)] [Mother’s Surname] [Father’s Surname]
এদের নিজস্ব নাম ( Given name) এক বা একাধিক থাকে। Sur name এর ক্ষেত্রে এরা বাবা মা এর বংশগত নামের একটি করে অংশ রাখে কিংবা এক একজনের দুটো দুটো করে পুরোটাই নামের সাথে জুড়ে দেয়, কিন্তু স্প্যানিশদের সাথে পার্থক্য হলো, এরা মায়ের বংশগত নামটি আগে রাখে, পিতারটি পরে।
* উদাহরনঃ লুইজ-জোয়াও অলিভিয়েরা সিলভা (Luiz Joao OLIVIERA SILVA) এক্ষেত্রে লুইজ জোয়াও নিজ নাম, ওলিভিয়েরা মায়ের বংশগত নাম এবং সিলভা পিতার বংশগত নাম।
* এদের কোন middle name থাকে না।
* মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর বংশগত নামেও ভাগ বসায়। তাই পর্তুগীজ মেয়েদের নাম অনেক লম্বা হয়ে থাকে। যেমন Maria do Carmo Mao de Ferro e Cunha de Almeida Santa Rita Santos Abreu
* সুদুর অতীতে অনেক অনেক নিজস্ব নাম (Given name) ব্যবহার করে বিশাল নাম রাখা পর্তুগীজদের আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশ ছিলো। পর্তুগালের রাজা ৪র্থ পেড্রোর নাম ছিলো
‘পেড্রো ডি এলসান্ট্রা ফ্রান্সিস্কো এন্টোনিও জোয়াও কার্লোস জেভিয়ার ডি পাওলো মিগুয়েল রাফায়েল জোয়াকুইম জোসে গনজাগা প্যাস্কেল ক্যাপ্রিয়ানো সেরাফিম ডি বরবোন ড্রাগাংকা।’
(পরবর্তী পর্বে, আমাদের প্রেক্ষাপট)
লেখকঃ সাঈদ মাহমুদ আলী রেজা, আয়ারল্যান্ড থেকে
2 Comments
gate io nedir
At the beginning, I was still puzzled. Since I read your article, I have been very impressed. It has provided a lot of innovative ideas for my thesis related to gate.io. Thank u. But I still have some doubts, can you help me? Thanks.
M.O.F. Rumi
Dear, How can I help you..plz contact me rumi99@gmail.com