জাপান- প্রশান্ত মহাসাগরের একদম পূর্ব কোণে ৬৮০০ টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি দেশ; কিন্তু এই দেশটি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের বিস্ময়ের সীমা নেই। প্রযুক্তির মুন্সিয়ানায় গোটা বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে জাপানিরা, কিন্তু তাদের সাফল্যের দৌড় কেবল কাঠখোট্টা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, শিল্প সাহিত্যে চিত্রকলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ঈর্ষণীয় বিচরণ। জাপানের চলচ্চিত্র অস্কার পেয়েছে, কুস্তির জগতে যুক্তরাষ্ট্রের পর তাদের দেশেই সবচেয়ে বেশি প্রসার, সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের এমনই কিছু বিচিত্র মজার তথ্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
সূর্যোদয়ের দেশ জাপান শুধু একটি অনিন্দ্য সুন্দর দেশই নয়, এর ইতিহাস-ঐতিহ্যও বেশ সমৃদ্ধ। বছরের পর বছর ধরে নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের উন্নয়নের চূড়ায় নিয়ে গেছে।
এ দেশের নারীদের গড়আয়ু প্রায় ৮৭ বছর এবং পুরুষের গড় আয়ু প্রায় ৮০ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী জাপানের লোকেরা ৭৫ বছর পর্যন্ত কোন ধরনের দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই বেঁচে থাকেন। বিজ্ঞানীরা এই দীর্ঘায়ুর কারণ হিসেবে জাপানিদের খাদ্যাভ্যাসের কথা বলছেন।

জাপানিরা খুবই খাবার সচেতন। খাবারের জন্যই তারা সুস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন করে। দেশটিতে ঘোড়ার মাংসের আলাদা কদর রয়েছে। রান্না করা ঘোড়ার মাংসকে তারা বলে ‘বাসাশি’। জাপানের রেস্তোরাঁগুলোতে ঘোড়ার মাংস অহরহই মেলে। ১৯৬০ সালের পর থেকে জাপানে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, একসময় দেশটিতে কৃষিকাজ এবং পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ঘোড়ার সংকট দেখা দেয়।
জাপানে কখনোই কোনো দোকানে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে কোনো পণ্য নিয়ে দর কষাকষি চোখে পড়ে না। দেশটিতে পণ্য নিয়ে দামাদামি করার কোনো সুযোগও নেই। সব জায়গায়ই কোনো পণ্যের ওপর তার দরদাম নির্ধারিত থাকে। এমনকি, রাস্তার ফুটপাতের দোকানেও নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে হয়। তাই কোনো পণ্য কেনার পর এটি নিয়ে দ্বিতীয়বার যাচাই করার কোনো সংস্কৃতি দেখা যায় না দেশটিতে।
নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ করার জন্য “ওভারটাইম” নামে একটি শব্দ প্রচলিত দুনিয়াজুড়ে, শুধুমাত্র জাপানে এই শব্দটির কোন অর্থ নেই। জাপানিরা স্বভাবগতভাবেই অফিসের সময় শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে কাজ নিয়ে। ঊর্ধতন কর্মকর্তার আগে অফিস ত্যাগ করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না তারা, যত জরুরী তাড়াই থাকুক না কেন ঘরে ফেরার।“ওভারটাইম” শব্দটি না থাকলেও জাপানি ভাষায় এরচেয়ে অনেক গুরুতর একটি শব্দ আছে- “কারোশী” যার অর্থ “অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু!’’ ব্যাপারটি শুনতে আজব মনে হলেও জাপানের প্রেক্ষাপটে এটি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেখানে প্রতিবছর গড়ে ১০,০০০ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত কাজের চাপে, ডায়াগনোসিসে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়- “কারোশী”!