বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা গেছেন। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচিত ব্যক্তিত্ব মওদুদ আহমেদ।
তিনি একসময় দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সরকারের আমলে উপ রাষ্ট্রপতি থেকে মন্ত্রী পদেও ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের পথ ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পরে তিনি ছিলেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। ১৯৯৬ থেকে তিনি যুক্ত ছিলেন বিএনপির রাজনীতিতে। রাজনীতি ছাড়া লেখক হিসেবেও তার অবস্থান গুরুত্বপূর্ন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি মওদুদ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চার্লস থোর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার স্ত্রী হাসনা মওদুদও সিঙ্গাপুর রয়েছেন।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস ও বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মওদুদকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে চিকিৎসা নেন। হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তার হৃদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়। এরপর ১৩ জানুয়ারি হাসপাতালটির সিসিইউ থেকে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
পরে ২০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়। এরপর আবার ২১ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন মওদুদ আহমদ।
মওদুদ আহমেদ বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম, সাবেক সাংসদ ও অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে মওদুদ আহমেদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এরশাদ তাঁকে প্রধানমন্ত্রীও করেন।
মওদুদ আহমেদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করে লন্ডনের লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলনে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মওদুদ আহমদ। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। এরশাদের আমলে ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬ এ তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পাঁচবার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে শিল্প, তথ্য, পরিকল্পনা, আইনসহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিএনপির স্খায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এই রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসজুড়ে তাঁর রাজনৈতিক উপস্থিতির কারণে তিনি কখনো নন্দিত, কখনো নিন্দিত হয়েছেন।
রাজনীতি ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের গতি প্রকৃতি নিয়ে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন বই লিখেছেন। এসব গ্রন্থে তিনি নির্মোহ অবস্থানে থেকে রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিশ্লেষণ করছেন।
তার গ্রন্থের মধ্য আলোচিত হচ্ছে, চলমান ইতিহাস, কারাগারে কেমন ছিলাম, শেখ মুজিবুর রহমানের শাষনকাল বাংলাদেশের গনতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের চ্যলেঞ্জ।
সূত্র -ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ