বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অনন্ত জলিলের আলোচিত সিনেমা ‘দিন দ্য ডে’। মুক্তির আগে থেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘দিন- দ্য ডে’। বাংলাদেশ-ইরানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটির বাজেট শত কোটি টাকা বলে প্রচার করেন অনন্ত।
তবে সিনেমার ইরানি নির্মাতার মুর্তজা অতাশ জমজম ইনস্টাগ্রামে দাবি করেন, সিনেমাটির বাজেটের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩০ টাকা।
এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সোশ্যাল মিডিয়া অনন্ত জলিলকে নিয়ে শুরু হয় কটাক্ষ।

শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন অনন্ত। যেখানে একপর্যায়ে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা অনন্ত জলিলকে মেরে ফেলেছেন। ’
চলমান ঘটনাপ্রবাহে দর্শক তার চোখ খুলে দিয়েছে জানিয়ে অভিমানী অনন্ত জানালেন, তিনি নিজেকে বদলে ফেলবেন। এখন থেকে পরোপকারি স্বভাবটা পাল্টে ফেলবেন।
১৪ মিনিটের ভিডিওর এক পর্যায়ে এ অভিনেতা-প্রযোজক বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে গেটের সামনে আমি দাঁড়াই না। আমি একবারে বাসায় ঢুকে পড়ি। আমার কাছে সবসময় মনে হয় আমি বোধহয় ভুল কাজ করছি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, এটা মনে হয় আমার ভুল হচ্ছে। এতদিন আমি যা করেছি ভুল করেছি। সম্পূর্ণভাবে আমি ভুল করেছি এই দেশে। আপনারা আমাকে বদলে দিয়েছেন। এখন আমার মনে হয়, অন্যান্য তারকার মতো আমিও থাকার চেষ্টা করব। এবার বলব, আপনারা অনন্ত জলিলকে মেরে ফেলেছেন। তবে এ ব্যাপারেও আপনাদের ধন্যবাদ, কারণ আমার চোখ আপনারা খুলে দিয়েছেন।’
এছাড়া ভিডিওবার্তায় ইরানি পরিচালকের দাবি উড়িয়ে দেন অনন্ত জলিল।
এসময় ‘দিন দ্য ডে’র বাজেট নিয়ে অনন্ত জলিল বলেন, ‘সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে এবং শেষ হয় ২০২০ সালের মধ্যে। আপনারা আমার ইন্টারভিউগুলো দেখতে পারেন, টেলিভিশন, নিউজ পেপার, সোশ্যাল মিডিয়াতে মুভিটির রিলিজ এর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এবং রিলিজের পরেও একটি ইন্টারভিউতে দেখাতে পারবেন? যে আমি বলেছি এই মুভিটির ইনভেস্টার শুধুই আমি? আমি সব সময় বলে এসেছি, শুধুমাত্র বাংলাদেশের শুটিংয়ের ইনভেস্টার আমি।’
অনন্ত বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই চুক্তিপত্র করি। যেটা সম্পন্ন ইংরেজিতে আমরা করি। যেটা উনি পোস্ট করেছেন সেটা বাংলায়। আসলে এ থেকে বুঝতেই পারছেন এ চুক্তিপত্র সঠিক নয়। সিনেমাটির শুটিং তিনটি দেশে হয়েছে, সেই দেশের শুটিং আর্টিস্ট সবকিছুই মুতর্জা বহন করেছেন। মুর্তজা একটি স্ট্যাটাস দিলেন সেটা দেখে অনেকেই আমার নামে সমালোচনা শুরু করলেন।’
তিনি বলেন, ২০২১ সালে ২৭শে ফেব্রুয়ারি লা-মেরিডিয়ান হোটেলে ‘দিন-দ্যা ডে’ এবং ‘নেত্রী দ্যা লিডার’ মুভির একটি অনুষ্ঠান করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে মিস্টার মুর্তুজা, ইরানের আর্টিসরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস কনফারেন্সের সময় আমাকে বলেন, শুটিংয়ের তিনি যে বাজেট নির্ধারণ করেছিলেন তার চেয়ে তিনি অনেক বেশি অর্থ শুটিং এ খরচ করেন। মুর্তুজার বলা অ্যামাউন্টটাই প্রেস কনফারেন্স এ আমি বলি এবং আমার ইন্টারভিউ গুলোতেও সেম একই কথা বলি, তিনি যে মুভির বাজেটের কথা বলেছিলেন।’
অনন্ত জলিল বলেন, ‘মুর্তুজা তুলে ধরেছেন, আমার ৪-৫ লক্ষ ডলার তাকে শুটিং খরচের জন্য দেওয়ার কথা। এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা দেয় নাই। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, এসপার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের শুটিংয়ে সমস্ত খরচ আমার দেওয়ার কথা, সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শুটিং এর সমস্ত খরচ আমি বহন করি। সেখানে ১ কোটি টাকা লাগলো, বা ৪ কোটি টাকা লাগলো সেটা তো মুর্তুজার দেখার বিষয় না। বাংলাদেশের শুটিং খরচ ছাড়া বিদেশের কোন শুটিং খরচই আমার দেওয়ার কথা না, আমাদের ট্রাভেলিং কস্ট ছাড়া, মিনস ইয়ার টিকিট ছাড়া। সেখানে আমি তাকে ডলার দিবো এই প্রশ্ন উঠবেই বা কেন? তাহলে মুর্তুজা এতগুলো দেশে যে শুটিং করলো তাতে তো তার কোন টাকাই খরচ হয় নাই। তিনি যে এমাউন্ট বলেছেন আমার দেওয়ার কথা সেটাই আপনারা মুভির বাজেট বলে নিউজ করেছেন। তাহলে তিনি কিভাবে বলেন তার পোস্টে যে আমি তাকে এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী টাক দেয় নাই। আর আপনারা তা ফলোও করে প্রচার করছেন মুভিটির বাজেট ৪ কোটি টাকা। তাহলে তো মুর্তুজার শুটিং এ কোন টাকাই খরচ করেন নাই।
এই নায়ক বলেন, ‘আমরা যখন বিদেশে শুটিংয়ে যাই তখন মুর্তুজা আমাদের অনেক সম্মান দিয়ে ফাইভস্টার হোটেলে রেখেছেন। এমনকি তার বাসায়ও দুইদিন আমাদের ফুলটিমকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমি ঠিক একই রকমভাবে ইরানের ১৭ জনের টিমকে সোনারগাঁও হোটেল এ রাখি ১৮দিন এবং অনুরূপ সম্মান আমরাও দিয়েছি তাদের ফুলটিমকে। মুর্তুজার সঙ্গে আমার কখনো কোন মত ভেদাভেদ বা খারাপ সর্ম্পক হয় নাই। কে বা কারা নিজের স্বার্থের জন্য মুর্তুজার সঙ্গে আমার এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন যেটা তারাই ভালো জানে এবং মিস্টার মুর্তুজাই বলতে পারবেন।’
অনন্ত জলিলের কথায়, “দিন-দ্যা ডে’ মুভির সম্পূর্ণ ফুটেজ মুর্তুজার কাছেই ছিল। তিনি নিজেই সাউথ ইন্ডিয়াতে মুভিটি নিয়ে আসেন ডলবি মিক্সিং করানোর জন্য। আমি রিকুয়েস্ট করেছিলাম ডলবি মিক্সিং করার ব্যাপারটি। কারণ, ইরানে ডলবি সাট্রিফিকেট দেওয়ার কোন রাইট নাই। মুর্তুজার সঙ্গে আমার যদি কোন ধরনের লেনদেনের সমস্যা থাকতো তাহলে মুর্তুজা কখনো মুভিটা সাউথ ইন্ডিয়াতে এনে আমাকে দিতো না।”
সর্বশেষ তিনি বলেন, ‘ইরানে মুভি রিলিজে সময় ডলবি সাট্রিফিকেট প্রয়োজন হয় না, তাদের পোস্ট প্রোডাকশন এমনিতেই বেশ উন্নত। মুভি রিলিজের আগ পর্যন্ত আমার ও মুর্তুজার সঙ্গে কখনোই কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না আমি আশা করি আগামীতেও থাকবে না। যাদের স্বার্থের জন্য এই করেছেন তাদের মুখোশ একদিন ঠিকই মিস্টার মুর্তুজাই প্রকাশ করবেন বলে আমার আত্নবিশ্বাস।’