শেষ নেই তার উপাধির । কেউ বলেন বিউটি কুইন, কেউ বলেন ঢাকাই সিনেমার সম্রাজ্ঞী।কেউ আবার তাকে চলচ্চিত্রের রাণী বলে, কেউ আবার মহানায়িকা বলে সম্মান করেন।
অভিনয় গুণে নিজেকে তিনি অতুলনীয় করে তুলেছেন। সিনেমার পর্দায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব প্রেমিকের প্রেমিকা, সব স্বামীর আদর্শ স্ত্রী, সব মা-বাবার যোগ্য কন্যা, সব ভাইয়ের আদরের বোন। সিনেমার ব্যবসার জন্য তিনি যেন একাই একশ’ ছিলেন। তার সিনেমা মানেই হিট-সুপারহিট।
তার পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। ১৯৫২ সালের ১৫ জুন শাবানার জন্ম। এর দশ বছর পর শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে অভিষেক। ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী হিসেবে আবির্ভাব, ওই ছবির পরিচালক এহতেশাম তার পর্দার নামটি দেন।
শাবানা সাড়ে তিন দশকের কর্মজীবনে ৩০০টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ষাট দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে ২০০০ সালে হঠাৎ রূপালী জগৎ থেকে আড়ালে চলে যান। এর পর অনেক বছর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেলেও— তাও হাতে গোনা।
জুটি হিসেব আলমগীরের সঙ্গে রেকর্ড গড়েন শাবানা। তারা একসঙ্গে ১৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া রাজ্জাক, ওয়াসিম, উজ্জ্বলের সঙ্গে অভিনয় করে পান জনপ্রিয়তা। পাকিস্তানি নায়ক নাদিমের সঙ্গেও দর্শক তাকে পছন্দ করেছিল।
তিন দশকের ক্যারিয়ারে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে শাবানা উপহার দেন জনপ্রিয় অনেক ছবি। তিনি কাজ করেছেন বলিউডের রাজেশ খান্নার বিপরীতেও।
তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে- ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শাবানা ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। বাংলাদেশের হয়ে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন শাবানা।১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন শাবানা। দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা এসএস প্রোডাকশন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।১৯৯৭ সালে শাবানা অজানা কারণে হঠাৎ বিদায় নেন চলচ্চিত্র থেকে। ২০০০ সাল থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করছেন। এরপর বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে আসলেও জনসম্মুখে দেখা যায়নি এ অভিনেত্রীকে।