জনপ্রিয় তারকা দম্পতি মৌসুমী ও ওমর সানীর একমাত্র ছেলে ফারদীন এহসান স্বাধীনের রেস্তোরাঁয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিসা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
রাজধানীর গুলশান ১ ও ২ নম্বর সেকশনের মাঝামাঝি আরএম সেন্টার ভবনে ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ নামের রেস্তোরাঁয় মঙ্গলবার (১৮মে) সন্ধ্যায় অভিযানে চালায় পুলিশ। ওই রেস্তোঁরাটির তিনজন মালিকের মধ্যে একজন ফারদীন। তিনি তারকা দম্পতি মৌসুমী ও ওমর সানীর ছেলে।
গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ‘রেস্তোরাঁটি থেকে দুই প্যাকেট ও আরও কিছু খোলা সিসার উপকরণ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ৬ জন আটক করেছি আমরা। ’
জানা যায়, এর আগে এই লাউঞ্জ ছিল উত্তরায়। করোনার কারণে লস হওয়ায় পরবর্তীতে তা গুলশানে নিয়ে যাওয়া হয়।
‘মন্টানা লাউঞ্জ’ রেস্তোরাঁয় নিষিদ্ধ মাদক সিসা ও সিসা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দসহ ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হওয়া ১১ জনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করেছে গুলশান থানা পুলিশ। তবে ওই মামলায় অবৈধ সিসা বার পরিচালনাকারী ও ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ রেস্তোরাঁর মালিক ফারদিন এহসান স্বাধীনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
পুলিশ বলছে, সিসা একটি নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। সিসা বার পরিচালনা, বিক্রি ও সেবন আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও নিষিদ্ধ। মন্টানা লাউঞ্জ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সিসা ও সিসা সেবনের সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার হওয়া ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন রেস্তোরাঁর সেফ (রাঁধুনি) এবং বাকিরা ওয়েটার হিসেবে সেখানে সিসা লাউঞ্জে কাজ করতেন। তবে অভিযানের সময় রেস্তোরাঁর মালিক ফারদিন এহসান স্বাধীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে, বাবা ওমর সানীর দাবি, ওই রেস্তোরাঁটি মূলত ফুড আইটেম (খাবার) বিক্রি করা হতো। তবে সেখানে ৯০ শতাংশ ফুড আইটেম এবং ১০ শতাংশ সিসা লাউঞ্জ হিসেবে পরিচালিত হতো। রেস্তোরাঁটির মালিক ও তার ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীন কোনো বে-আইনি কাজ করেনি বলেও দাবি করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গুলশানে মন্টানা লাউঞ্জ নামে একটি অবৈধ সিসা বারে অভিযান চালিয়ে সিসা ও সিসা সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ১১ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ’
সিসা বাব পরিচালনাকারী ও রেস্তোরাঁর মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে যাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরই আসামি করা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্তের বিষয়ে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ মিললে রেস্তোরাঁর মালিককেও আইনের আওতায় আনা হতে পারে। তবে মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। ’
এদিকে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওমর সানীর দাবি, তার রেস্তোরাঁ মূলত খাবারের। ‘কিছু সময়’ সিসা ‘সার্ভ’ করা হয়। তিনি বলেন, আমি আইনের সাথেই শতভাগ আছি। আমার প্রশ্ন গুলশানে কি শুধু একটাই লাউঞ্জ আছে? নামকরা সিসা লাউঞ্জগুলো পাঁচ-সাত বছর ধরে চলছে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশে দুই থেকে তিনশ লাউঞ্জ আছে। পুরো বাংলাদেশে আজকের মধ্যেই যদি সব লাউঞ্জ ক্লোজ হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু পার্টিকুলারলি আমাকে টার্গেট করে যদি করা হয়ে (অভিযান) থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাইবো। ’
এ প্রসঙ্গে বুধবার (১৯ মে) দুপুরে ওমর সানী বলেন, ‘সিসা অবৈধ কি-না তা আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি সিগারেটে ১ দশমিক ৬ শতাংশ নিকোটিন থাকে। তবে সিগারেটের চেয়ে কম পরিমাণে সিসাতে নিকোটিন থাকে। আমাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে রেস্তোরাঁয় খাবার বিক্রি করা। এরসঙ্গে মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে সিসা লাউঞ্জ। গুলশান-বনানীর ট্র্যাডিশন (ঐতিহ্য) হিসেবে রেস্তোরাঁয় সিসা রাখতে হয়। এটি রেস্তোরাঁয় একটি সাপ্লিম্যান্ট হিসেবে চলে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এখন পুলিশ যদি আমাদের রেস্তোরাঁয় সিসা অফ (বন্ধ) করে দেয় তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু গুলশান বনানীসহ বাংলাদেশে অন্তত এক-দেড়শ (১০০ থেকে ১৫০) সিসা লাউঞ্জ বা সিসা বার রয়েছে। শুধু গুলশান ও বনানীতেই ৩০-৪০টি সিসা বার চলছে। তবে এগুলো সবই বন্ধ করা উচিত। সিসা বার অবৈধ হয়ে থাকলে আমি এগুলো চালাবো না। চালাতে চাই না। ’
২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ কার্যকর হয়েছে। ওই নতুন আইনে সিসাকে মাদকদ্রব্যের ‘খ’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন আইনে মাদক সম্পর্কিত অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও নগদ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
সিসাকে নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে ও গোপনে সিসা বার পরিচালনা করে আসছে অসাধু রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। আইনে সিসা সেবন, বিক্রি ও সিসা বার পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও কেউ তোয়াক্কা করছেন না। তারা নানা কৌশলে নিষিদ্ধ সিসা কেনাবেচা অব্যাহত রেখেছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অধিদফতরের পক্ষ থেকে গুলশান-বনানী ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে ও রেস্তোরাঁয় এবং সিসা লাউঞ্জে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে নিষিদ্ধ মাদক সিসা ও সিসা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধারসহ অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরও সিসা লাউঞ্জ বন্ধ হয়নি। গোপনে গোপনে বিভিন্ন নামি-দামি রেস্তোরাঁয় চলছে অবৈধ সিসা লাউঞ্জ।- বাংলানিউজ