কবরী একজনই হয়: অভিনেত্রী শাবানা

বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী এদেশের চলচ্চিত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ছিলেন সারাহ বেগম কবরী। জন্মসূত্রে কবরীর নাম ছিল মিনা পাল। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে তার জন্ম। তার বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্যপ্রভা পাল। জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীতে। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব হয় তার।

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু ৷ ‘সুতরাং’ মুক্তি পেলে এই ছবি এবং ছবির নায়িকা হিসেবে কবরী দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হন। এরপর অভিনয় করেছেন হীরামন, ময়নামতি, চোরাবালি, পারুলের সংসার, বিনিময়, আগন্তুক -সহ জহির রায়হানের তৈরি উর্দু ছবি ‘বাহানা’ এবং ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উল্লেখযোগ্য ৷ ‘সুতরাং’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে মিনা পালের ফিল্মি নাম হয়ে যায় কবরী।

১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর কবরীকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি। এই সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যান তিনি। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই। পরবর্তীতে তিনি রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, উজ্জ্বল, জাফর ইকবালের মত অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।

কবরী অভিনয় করেছেন ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘দীপ নেভে নাই’-এর মতো দর্শকপ্রিয় সিনেমাতে। ২০০৬ সালে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘আয়না’মুক্তি পায়। ইদানীং তিনি দ্বিতীয় সিনেমা ‘এই তুমি সেই তুমি’নির্মাণ করছিলেন।

২০০৫ সালে ‘আয়না’ নামের একটি ছবি নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। এমনকি ওই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। এরপর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার ছিল সমান জনপ্রিয়তা। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

কবরী প্রথম বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সেখানে বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী পাঁচ সন্তানের জননী।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোক নেমেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে।