ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন ঢালিউড নায়িকা পরীমনি। তার অভিযোগ, এক ব্যবসায়ী তাকে রেস্টুরেন্টে মদ খাইয়ে ধর্ষণ করতে চেয়েছে। গত চার দিন ধরে এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নায়িকা। কেউ তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসেননি।
পরীমনির অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকেও বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন। শিল্পী সমিতির নেতা হিসেবে তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাননি নায়িকা পরীমনি।
শুধু তাই নয়, ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে নিয়ে গেলে শুধু যে থানা পুলিশ সহায়তা করেনি তা নয়, পরেও যারা ঘটনাটি জেনেছেন তাদের অনেকেও উল্টো তাকেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিনয় শিল্পী পরীমনি।
রোববার রাতে বনানীর বাসায় দফায় দফায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন পরীমনি। এসময় তিনি বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের কাছে বিষয়টি নিয়ে গেলে তিনিও ‘দেখতেছি, দেখতেছি’ করে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জায়েদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার পরীমনি তাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন এবং পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
জায়েদ খানের ভাষ্য, তিনি পরীমনিকে রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, ‘স্থানীয় থানায় নিয়ে যেতেও’ চেয়েছিলেন। কিন্তু পরীমনি তাকে বলেছিলেন যে পুলিশ তার কথা শুনছে না।
ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার পরও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখালেন না- জানতে চাইলে জায়েদ খান উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, শিল্পী সমিতি কি কোনো আদালত?
তিনি বলেন, আমি তাকে (পরীমনি) শিল্পী সমিতিতে একটা লিখিত দিতে বললাম। বললাম যে আইজিপি রাজশাহীতে গেছেন। উনি ফিরুক, তারপরে রোববার দেখা হতে পারে। পরীমনি থানা পুলিশের কাছে যেতে চাচ্ছিলেন না।
জায়েদ খান আরও বলেন, ‘আমার কাছে পরিমনি কোনো অভিযোগই করেননি, তাহলে শিল্পী সমিতির নেতা হিসাবে কিসের বিচার করব?
কার বিচার করব? সমিতি বিচার করেনি, পরিমনির এসব অভিযোগ অবান্তর। যদি সত্যিই তার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমিও চাই, তিনি সুষ্ঠু বিচার পাক।’
এদিকে পরিমনির স্টেটাসের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায় বিচারের জন্য কাজ করব।
প্রসঙ্গত, নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি চলচ্চিত্রে পরীমনি নাম নিয়ে ২০১৫ সালে নামার পর দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ইতোমধ্যে দুই ডজন চলচ্চিত্রে নায়িকার চরিত্র রূপায়ন করেছেন তিনি।
রোববার রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে এক স্টেটাসের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেন তিনি। তবে শুরুতে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেটা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি পরীমনি এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এরপর রাতেই রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করেন পরিমনি। তার অভিযোগ নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিমনি বলেন, ‘একটা কাজে আমার পূর্ব পরিচিত অমি নামে একজনের অনুরোধে তার সঙ্গে আমি উত্তরায় নাসির উদ্দিনের কাছে যাই।
তিনি নিজেকে তখন উত্তরা বোট ক্লাবের সভাপতি বলে পরিচয় দিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে মদ্যপান করতে বলা হয়। আমি সেটা না করলে এরপর আমাকে নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়। এমনকি হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। ঘটনাটি ঘটেছে চার দিন আগে।’
এদিকে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে সরাসরি স্টেটাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন বিচার চাইছেন, সংবাদ সম্মেলনের আগে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে পরিমনি বলেছেন, ‘আমি অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। থানা, শিল্পী সমিতি, সবখানে গেছি। কিছু হয়নি।’