বাংলাদেশও বিপর্যস্ত করোনাভাইরাসের তান্ডবে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এই ভাইরাসে। করোনাভাইরাসের এই বিস্তার ঠেকাতে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। এর মধ্যেও দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিগত এক বছরেরও বেশি সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পরিস্থিতিতেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি ডিউটিরত অবস্থায় তিনজন চিকিৎসকের একটি নাচের ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে প্রশংসায় ভাসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেই তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক।
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার তুমুল জনপ্রিয় ‘নয়া দামান’ গানটি অনেকেই গেয়েছেন। তবে কিছুদিন আগে এই গানে কণ্ঠ দেন তসিবা ও মুজা।
ভিডিওতে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারের অ্যাপ্রোন পরে হাসপাতালের করিডরে ‘নয়া দামান’ গানের সঙ্গে নাচছেন তিন চিকিৎসক। তাদের একজন তরুণ, বাকি দুজন তরুণী।
এ জুটির গাওয়া গানের সঙ্গেই পারফর্ম করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. শাশ্বত চন্দন, ডা. কৃপা বিশ্বাস, ডা. আনিকা ইবনাত শামা। মনোমুগ্ধকর এই নাচের উদ্দেশ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাওয়া চিকিৎসকদের অনুপ্রেরণা দেওয়া।
এর মধ্যেই হঠাৎ নাচের ভাবনা কেন এল তাদের মাথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানালেন, হাঁপিয়ে ওঠা হাসপাতালের বন্দিজীবনে চিকিৎসকদের কিছুটা স্বস্তি দিতেই এই ভিডিও। অনেক ভাবনা-চিন্তা নয়, কাজের ফাঁকে কথা প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের তিন চিকিৎসক সহকর্মী এই নাচের পরিকল্পনা করেন।
মাত্র ১৫ মিনিটের ভাবনা, এরপরই নাচ। ওটি বয়ের করা ভিডিওটি ছড়িয়ে গেছে সারা দুনিয়ায়। বাকিটা সবারই জানা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মূল ধারার গণমাধ্যম, প্রশংসায় ভাসছেন ঢাকা মেডিকেলের ওই তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক।
সম্মুখসারির কোভিড যোদ্ধাদের একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি দিতেই এমন উদ্যোগ, জানালেন ভিডিওটিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা। তবে ব্যক্তিগত ফেসবুকের জন্য তৈরি সেই ভিডিও এভাবে সাড়া ফেলবে স্বপ্নেও ভাবেননি তারা।
ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক শাশ্বত মিস্ত্রি চন্দন জানান, নিজেরাই আমরা কোরিওগ্রাফার, নিজেরাই আমরা নাচের সঙ্গে হাত-পা দোলাব। সেখান থেকেই আমরা নাচটা করি। আর ওই নাচের ভিডিও বড় কোনও ক্যামেরা দিয়েও নয়, সাধারণ মোবাইল দিয়েই রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানা তিনি।
অপর ইন্টার্ন চিকিৎসক আনিকা ইবনাত শামা বলেন, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। ডাক্তাররা যে শুধু রোগীর সেবা করবে তাদের মধ্যে অন্য কোনো প্রতিভা থাকতে পারে না, বিষয়টি এমন নয়। চিকিৎসকদের মাঝেও যে প্রতিভা থাকতে পারে এটা তার প্রমাণ। মাত্র কয়েক মিনিটের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওটি করি আমরা। ভিডিওটি এতোটা ভাইরাল হবে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি। সবাই ভিডিওটিকে পজিটিভভাবে নিয়েছে। সামান্য একটি ভিডিও চিকিৎসকদের মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মূল ভূমিকাটা কিন্তু চিকিৎসকদেরই পালন করতে হবে।
প্রতিদিন কোনো না কোনো মৃত্যু, পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা, পিপিই পরে অদৃশ্য ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মধ্যেও হাসিমুখে বেঁচে থাকাই সত্যিকারের বিজয় সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, তারা নিজেরাও কিন্তু যেকোনও মুহূর্তে ধাবিত হতে পারেন মৃত্যুমুখে। সব মায়া মমতাকে বাদ দিয়ে এই হাসপাতালে কাজ করছেন তারাও যে এমন একটা দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে নেচে উঠতে পারেন, গেয়ে উঠতে পারেন সেটা বিশাল উদ্দীপনার কাজ।
এর আগে ১২ এপ্রিল ভারতের কেরালা রাজ্যে দুই মেডিকেল শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঘৃণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রাজ্যটির মেডিকেল শিক্ষার্থী নাভিন কে রাজাক ও জানাকি এম ওমকুমার ভিডিওটি পোস্ট করেন।