মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: সংযত থাকা এবং সংযত রাখার মধ্যে বিরাট ফারাক। এ কথা তাঁরাই বুঝবেন যাঁরা পরিপূর্ণ ইসলামিক, মনে প্রাণে আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিশ্বাস করেন।বেপর্দা বেহায়া নারী পুরুষ হচ্ছে করোনা ভাইরাস এর মত। যেমন মাস্ক পড়া কেবলমাত্র নিজেকে নিরাপদে রাখা নয়। মাস্ক না পড়লে আপনার পাশের জনও অনিরাপদ। তেমনি ছতর ঢাকলে দু’টি উপকার। একদিকে আপনার লজ্জাস্থান আপনি নিরাপত্তায় রাখলেন, অপরদিকে আপনার লজ্জাস্থান দর্শন করে অন্যদের লজ্জিত কিংবা পুলকিত হওয়া থেকে বিরত রাখলেন। এখন কথা হচ্ছে যে,আমি বলতে পারি আমি আমাকে ঢেকে কেন রাখবো? তা ও ঠিক, আপনি আপনাকে কেন ঢেকে রাখবে? আপনি তো স্বাধীন দেশের অধিবাসী! আপনার আপনাকে ঢাকতে হবে না। এই নিয়ম আপনার জন্য নয়। এই নিয়ম ইসলাম ধার্মিকদের জন্য। আপনি আপনার মত করে চলুন। কিন্তু যাঁরা পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে চলেন, আল্লাহ কে ভয় করেন, মৃত্যুর কথা চিন্তা করেন এসব কথা তাঁদের জন্য।
নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত সহ ইসলাম ধর্মীয় বিধিনিষেধে প্রত্যেকটি কাজের সঙ্গে পর্দা জড়িত। যেমন একজন পুরুষ একটি জাকাতের কাপড় একজন নারীকে দান করবেন। ঐ নারীর গায়ে ছিন্ন বস্ত্র। পুরুষ লোকটি যদি কাপড় টি দেয়ার সময় সেই নারীর খোলা অঙ্গে দৃষ্টিপাত করে, তাহলে কি তার সেই জাকাত দেয়া শুদ্ধ হবে?কবুল করবেন কি না তা মহান রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। মানুষের বিবেক কি বলে? তেমনি সারাদিন ছতর উদলা রেখে ঘরে এসে সারা শরীর আবৃত ক’রে নামাজ আদায় করলে তার এবাদত কেমন এবাদত তা আমার জানা নাই।
পবিত্র কোরআন শরীফে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩} রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তির আগমনকে কেন্দ্র করে তাঁর স্ত্রীদের আড়ালে যেতে বললেন।স্ত্রীগণ জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কেন ভেতরে যাবো, উনি তো অন্ধ? আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উনি অন্ধ, তোমরা তো দেখতে পাও!
রোজা রেখে নারী দর্শন কিংবা অঙ্গ প্রদর্শন করলে তার রোজা হবে কি না আমরা হাদিস কোরআান থেকে দেখে নিতে পারি। হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}।
পর্দা মানে শুধু কালো কাপড়ে লুকিয়ে থাকা নয়। সে কাজ পতিতারাও করে। পর্দা মানে নিজে সংযত থাকা আর অন্যকে সংযত রাখা। সুতরাং নিজের অঙ্গ আচ্ছাদন আর চক্ষু সংবরন না করলে অকারণে এবাদত করলে তা আল্লাহর কাছে পছন্দসই হয় না। মহান রাব্বুল আলামিন সকলকে বোঝার তাওফিক দান করুন।