মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: ।মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আমরা দু’টি রোজা রাখতে পারলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এখনও পর্যন্ত সুস্থ আছি,করোনা মুক্ত আছি । আল্লাহ পাক এই পবিত্র রমজান মাসের উছিলায় মরণ ঘাতক করোনা মহামারী থেকে পরিত্রাণ দিন।আমাদের ক্ষমা করে দিন। আমরা যেন সবগুলো রোজা আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ই রাখতে পারি।আমরা যেন আপনাকে খুশি করতে পারি। হে মহান প্রতিপালক! আপনি আমাদের রব।আমাদের উপর এমন বোঝা দিবেন না, যে বোঝা আমরা বহন করতে পারবো না।মৃত্যু দিলে নিষ্পাপ করেই মৃত্যু দিন।আমরা যারা রোজা রাখি, যেন মনে রাখি পাশের মানুষগুলোর কথা,যাঁরা কষ্টে আছেন। আমরা যেন মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকি।গতকালকের বাসি ইফতার যারা আজকে বিক্রি করলেন তাদের যেন আল্লাহ হেদায়েত দান করেন।
রমজানে অন্তত ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।রমজানের ফজিলত অপরিসীম। এই ফজিলত অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আমল করতে হয়, একই সঙ্গে ছাড়তে হয় বেশ কিছু বিষয়ও।এবাদত কবুল হতে হ’লে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে ই হবে। অনেকে সাহরি খান না, অনেকে আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নাহ পরিপন্থী।অল্প ক’রে হ’লে ও কিছু খেয়ে নিন।পানি পান করুন। ফজরের নামাজ পড়ে বিশ্রামে যান। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক খুশি হবেন। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না।
হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি গ্রহণ। সহিহ মুসলিম: ২৬০৪। রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে।ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে। ’ –সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৫। রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।আমরা যেন সেই রাত্রির তালাশ করি।পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ’ –সূরা ক্বদর: ৪। হজরত মুহাম্মদ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বে-জোড় রাতগুলোতে ক্বদরের রাত খোঁজ। ’ –সহিহ বোখারি: ২০২০। একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। ’ –সহিহ বোখারি: ৬০৫৭।আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নাহ মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে। ’ –মুসনাদে আহমাদ: ৮৮৪৩।ভয়ংকর কথা।
পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ তারা হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। ’ –সহিহ বোখারি: ১৯০২। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে । অনেকে রমজান মাসে ইফতার বা সাহরিতে এমন খরচ করেন যার প্রয়োজন নেই। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। ’ -সূরা আরাফ: ৩১ শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়লে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতমে তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়। ’ –সহিহ বোখারি: ৭৫২৭ রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে।
করোনা কালে ঘরে বসেই নামাজ পড়া উত্তম। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।আজান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করতে হবে । কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী। ’ -সূরা মাউন: ৪-৫।ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহতায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। ’ -জামিউস সাগির: ৩৯৩৩।
আমাদের রোজা নামাজ, এবাদত যদি কবুল হয় আর আমরা যদি আমাদের প্রয়াত পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি তাহলে আল্লাহ পাক হয়তো আমাদের মোনাজাত কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আসুন আমরা কম কথা বলি। আসুন পাশের গরীব মানুষ কে খাবার দেই।ঘরে থাকুন। মাস্ক ব্যবহার করুন। বারবার হাত ধুয়ে নিন। ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করুন।অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। প্রশাসনের মানুষেরা দয়াশীল হোন। নরম ভাষায় কথা বলুন মানুষের সাথে।সবাই এদেশের ই মানুষ ।