মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা কত? সঠিক সংখ্যাটা এখনও জানা না গেলেও, চার হাজারের বেশি ধর্ম রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হদিশ পাওয়া ধর্মের সংখ্যা ৪,৩০০। তবে, সঠিক সংখ্যাটা এর চেয়ে বেশি হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এর মধ্যে শুধু দু’টি ধর্মই দাবি করতে পারে তাদের অনুগামীর সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান রয়েছেন প্রায় ২০০ কোটি। এর পরেই রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। ১৩০ কোটি থেকে ১৫০ কোটি মুসলিম রয়েছেন।নাস্তিক, অধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ১১০ কোটি, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের থেকে বেশি। বিশ্ব হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৯০ কোটি। হিন্দুই তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। চিনা ঐতিহ্যগত ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ৩৯ কোটি ৪০ লক্ষ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন ৩৭ কোটি ৬০ লক্ষ। আদিম-আদিবাসী ধর্মের মানুষের সংখ্যাও ৩০ কোটি।এর মধ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা প্রায় ২৪০ কোটি। মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। বৌদ্ধ জনসংখ্যা প্রায় ৬০ কোটি। হ্যান ধর্ম চীনের সবচেয়ে বড় ধর্ম। এদের সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। শিখ ধর্মের অনুসারী মোট ৩ কোটি। এদের প্রায় সবারই বসবাস উত্তর ভারতের পাঞ্জাবে। ইহুদি ধর্মের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ।যার ৫০ ভাগই ইসরাইলে বসবাস করে। বাহাই ধর্মের মোট ৭০ লাখ অনুসারী বিশ্বের ২০০টির অধিক দেশে বাস করে। জৈন ধর্মের ৪০ লক্ষাধিক লোক বাস করে ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশে। শিন্তো ধর্মের ৪০ লক্ষাধিক লোক জাপানে বাস করে।
আর পৃথিবীতে নাস্তিক জনসংখ্যা প্রায় মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। এর মধ্যে মুসলিম প্রায় ১৪ কোটি ৮৮ লাখ। হিন্দু প্রায় এক কোটি ৪১ লাখ। খ্রিস্টান জনসংখ্যা ৬ লাখের একটু বেশি। বৌদ্ধ জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর অন্যদের সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি । ধর্মের মূল বক্তব্য হল একত্ববাদ। সব ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থই স্রষ্টার একত্ববাদের কথা শেখায় এ কথা ধর্মগ্রন্থে থাকলেও মানুষের মধ্যে তা কতখানি আছে তা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন।
আর আল কোরআন ইসলামের শুরু নয়। ইসলাম ধর্মের প্রথম অধ্যাদেশ শুরু হয়েছিল আদম (আ.)-কে সৃষ্টি ও তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণের মধ্য দিয়ে। আর শেষ অধ্যাদেশ শেষ হয়েছে মহানবী (সা.)-কে প্রেরণ ও আল কোরআন নাজিলের মধ্য দিয়ে।হিন্দু গবেষকদের দাবিমতে, তাদের ঋগ্বেদ ধর্মগ্রন্থ সবচেয়ে বেশি প্রাচীন, যার বয়স সাড়ে তিন হাজার বছর। সুতরাং, তাদের ধর্মই পৃথিবীতে প্রথম ও প্রাচীন।
আর সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানবসভ্যতার বয়স ১ লাখ ৯৬ হাজার বছর। আর এ সভ্যতার প্রথম কারিগর আদম (আ.)। আর তিনি ছিলেন মুসলিম। এ মুসলিমের হাত ধরেই পৃথিবীতে সভ্যতা নির্মাণ শুরু হয় একথা অমুসলিমরা বিশ্বাস করুক আর না করুক মুসলমানদের বিশ্বাস করতেই হবে, তা না হলে সে মুসলিম নয়। অতঃপর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে সভ্যতা আজ একবিংশ শতাব্দীতে মহিরুহ আকার লাভ করেছে। সুতরাং ইসলামই হচ্ছে প্রাচীন ধর্ম। এ ধর্ম প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের মতো কতিপয় আচারসর্বস্ব ধর্ম নয়। এটির আচার, বিধান, সব হুকুম এমনকি অভিবাদন প্রক্রিয়াটিও আল্লাহর শেখানো। ধর্ম যারা অনুশীলন করেন তাঁরা অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী আর সংস্কৃতিবান হয়ে থাকেন। তাই ধার্মিকরা একে অপরের সাক্ষাতের সময় নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী বিভিন্ন বিশুদ্ধ শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করে অভিবাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। মুসলিমরাও তার বাইরে নয়।
যদিও বর্তমান জমানায় কিছু কিছু ওয়াজ মাহফিলে বক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ নেতিবাচক আচরণ লক্ষ্য করা যায়, যা কি না পবিত্র ইসলামের পরিপন্থী। তাঁরা তাঁদের রব ও নবী (সা.)-এর শেখানো সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ রীতি অনুযায়ী তাঁদের অভিবাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। যেমন কোরআনে উল্লেখ আছে: ‘যেদিন তারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন জানানো হবে ‘সালাম’ বলে। (সুরা আহজাব : ৪৪)। “জান্নাতে পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে ‘সালাম’।” (সুরা ইয়াসিন : ৫৮)। এ সালামের অর্থ হল, সুস্বাগতম, ওয়েলকাম, তোমাদের আগমন শুভ হোক, তোমরা সুখী থাক ইত্যাদি কামনা করা।সুবহানাল্লাহ।
পবিত্র কোরআন এর প্রতিটি ভাষার বিশুদ্ধ উচ্চারণের গুরুত্ব রয়েছে। বিশুদ্ধ উচ্চারণ ছাড়া অর্থ বিশুদ্ধ হবে না। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন আবদুল মালিক বিন মারওয়ান বলেন, ‘ভাষা আর শব্দের অশুদ্ধ উচ্চারণ কাপড়ের ছিদ্র ও মুখে গুটিবসন্তের দাগের মতো।’ (আল ফাখরী, আল আদাবুস সুলতানিয়্যাহ : ১/৪৫)।ইমাম জুহরী বলেন, ‘বিশুদ্ধ ভাষা আভিজাত্যপূর্ণ।’ সুতরাং বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা ও অভিবাদন জানানো মুসলিম ধর্মবিশ্বাসের উন্নত সংস্কৃতির অংশ। হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসীরাও তাদের নিজ ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নমস্কার, গুড মর্নিং ইত্যাদি বিশুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করে তাদের অভিবাদন প্রক্রিয়া প্রকাশ করে থাকেন। এর মধ্যে জঙ্গিবাদ খুঁজে পাওয়া নিঃসন্দেহে এক বিরাট আজব ব্যাপার।অনুসন্ধানে নামলে এর পেছনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে আসবে। পৃথিবীর সব ধর্মই তার বিধানমতে চলতে বলে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ যুগ যুগ ধরে ধর্মের বিধানমতে না চলে ধর্মকে নিজের স্বার্থে ও মতে ব্যবহার করেছে।ব্যাবসার পুঁজি হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করছে।
পৃথিবীতে তিন শ্রেণির মানুষ গড়ে উড়েছে। আর তারা হল- ১. ধর্মপালনে সর্বোচ্চ চেষ্টাকারী আস্তিক। ২. ধর্মবিহীন আস্তিক ও ৩. ধর্মহীন নাস্তিক। আর গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্রসংখ্যক নাস্তিক ধর্ম মানেন না বলে ঘোষণা দিলেও তারা মানবতাবাদের কথা বলেন। অথচ এ মানবতাবাদটা মূলত ধর্মেরই কথা।তাঁরা পবিত্র কোরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে মতবাদ প্রচার করেন, কিন্তু পবিত্র কোরআন এর পরিচয় দেন না। ধর্মবিহীন আস্তিক আর ধর্মহীন নাস্তিকদের বাস্তব জীবনদর্শন অনেকটা কাছাকাছি। এ দুই শ্রেণির মানুষের পরিবারে, সামাজিক আচার-আচরণে, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনে প্রায় একই সুর প্রতিধ্বনিত হতে দেখা যায়। নাস্তিকতার স্লোগান যেহেতু ধর্মীয় সমাজে অচল, তাই তারা ধর্মবিহীন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর আস্তিকদের সহায়ক ও নেয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে।তারা হীন স্বার্থ উদ্ধারে নিজ আদর্শ মাটিচাপা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পদলেহন, চামচামি আর নির্লজ্জ দলবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন। অবস্থা এমন হয়ে পড়ে যে, এর ফলে কখনও কখনও ক্ষমতাসীনরাই লজ্জা ও বেকায়দায় পড়ে যান।মজার ব্যাপার হল, এদের নিজেদের কোনো সংস্কৃতি নেই। এরা যে আস্তিক সমাজে বাস করে, সেই সমাজের বিভিন্ন সংস্কৃতি ধার করে কখনও বিশুদ্ধ, আবার কখনও অশুদ্ধ রীতিতে স্লামালিকুম, গুড মর্নিং ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে থাকে; যার কোনো বিশুদ্ধ সাহিত্যিক বা ব্যাকরণিক রূপ নেই।সুতরাং, আসসালামু আলাইকুম বিশুদ্ধ ভাষায় বলতে ও শিখতে ব্যাকরণগত বাধ্যবাধকতা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাধ্যবাধকতা। যদি এ বাধ্যবাধকতা অমান্য করা হয়,তাহলে হয়তো সে উপহাসের পাত্র ও হতে পারেন।
মূল কথা হচ্ছে মানুষের ধর্ম আছে। হাজার হাজার ধর্ম। কিন্তু ধর্মের মানুষের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য। হাজার হাজার ধর্ম আছে। কিন্তু তথাকথিত কিছু কিছু ধর্মীয় মহাপুরুষেরাও মুখোশ খুলে গেলে দেখি নগ্ন।ধর্ম আছে, সবাই সৃষ্টি কর্তার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন কিন্তু সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি জীবের প্রতি তাদের দয়া নাই। ধর্ম মানেন কিন্তু পরকালের ভয় নাই। ধর্মের কথা বলেন কিন্তু ওজনে কম দেন, খাদ্যে বিষ প্রয়োগ করেন, মানুষের জায়গা দখল করেন, মানুষ কে খেতে দেন না,মসজিদে দান করেন । নামাজ পড়েন আবার নিজের স্বামী কে অপমান করেন।নামাজ পড়েন স্ত্রী কে পেটান। পিতা-মাতা’কে অবহেলা করেন। ধর্ম কি?কাকে বলে? তার সামান্যতম জ্ঞান নাই। আল্লাহ পাক সকলকে সহি বুজ দান করুন।