মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: জেনে রাখুন কেন তাকবীরে তাশরীক ধ্বনি উচ্চারণ না করলে পাপ হবে ————–
বলুন,আজ ২৮ জুন২০২৩ বুধবার ,৯ জিলহজ্জ ১৪৪৪ ফজর নামাজ থেকে — ” আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ ” ।
২ জুলাই ২০২৩, ১৩ জিলহজ্জ রবিবার আসর নামাজ পর্যন্ত বলা ওয়াজিব।
পুরুষরা উচ্চস্বরে এবং নারীরা নিম্নস্বরে পড়ুন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পর।
তাকবীরে তাশরীকের গোড়ার কথা : সহীহ আল-বুখারীর ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. মবসুত ও কাজীখান কিতাবদ্বয় থেকে ‘হেদায়া ’ কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নকল করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম আ. আপন পুত্র ইসমাঈল আ. কে যখন কুরবানী করতে শুরু করলেন, তখন হযরত জিবরাইল আ. আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন।
তাঁর সংশয় হচ্ছিল পৃথিবীতে পদার্পন করার পূর্বেই হযরত ইবরাহীম আ. যবেহ কার্য সম্পন্ন করে ফেলবেন।
তাই হযরত জিবরাইল আ. আকাশ থেকেই উচ্চস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন – الله اكبر- الله اكبر(আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর ) । হযরত ইবরাহীম আ. তাঁর আওয়াজ শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন , উপস্থিত কুরবানীর বস্তু ইসমাঈল আ.-এর পরিবর্তে তিনি একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন।
তাই তিনি স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলে উঠলেন -لا اله الاالله والله اكبر(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার) পিতার মুখে তাওহীদের এ অমূল্যবাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহর মহাত্ম, মর্যাদা ও শান শওকতের উপর হামদ পেশ করে বললেন : الله اكبر ولله الحمد (আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ)।
একজন মহান আল্লাহর ফেরেশতা, একজন নবী ও একজন ভাবী নবী এই তিন মহান ব্যক্তিত্বের খুশীর আবেগে উচ্চারিত এ আমলটুকু ও পবিত্র কালামগুলো আল্লাহর দরবারে এত বেশী কবুল হল যে, কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আয্হায় বিশ্ব মুসলিমের কন্ঠে কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে।
তাকবীর সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসআলা
১. ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে ও মুক্তাদীর তাকবীর বলা ওয়াজিব।(ফাতওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড ৭৭৭ পৃষ্ঠা)
২. পুরুষেরা তাকবীর উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর মহিলাগণ অনুচ্চস্বরে বলবে। পুরুষ উচ্চ স্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না।
৩. মাসবুক তার নামাজ আদায় করে তাকবীর বলবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড-৭৮৬পৃষ্ঠা )
৪. যদি মুসল্লী ফরজ নামাজের পর তাকবীর বলতে ভুলে যায়। এবং কিছু কাজ করে ফেলে যার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায় (যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা) তবে তার উপর থেকে তাকবীর বলা রহিত হয়ে যাবে।(ফাতাওয়া শামী ১ম খন্ড, ৭৮৬ পৃষ্ঠা)
তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম আরাফার দিন নামাজের পর উক্ত তাকবীর বলতেন।(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৬)।
কতবার পড়বে : আর পূর্ণ তাকবীরে তাশরীক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদগণও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়।(আলআওসাত, হাদীস : ২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫)।