শিশুর লেখাপড়া ও চারিত্রিক উন্নয়নে তাকে শাসনের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। তবে কঠোর শর্তারোপ করা হয়েছে শিশুদের শাসনের ব্যাপারে। যার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না সাধারণ ও ইসলামী ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষক।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক : শিক্ষক পিতৃতুল্য শিক্ষার্থীর জন্য । পিতার মতো স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো, আমি তোমাদের শিক্ষা দিই। তোমাদের কেউ শৌচাগারে গেলে কিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ করে বসবে না, ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৮)
শাসনের মানে শুধু প্রহার নয় : শিশুসুলভ দুষ্টুমি এবং পারিপার্শ্বিক কারণে শিক্ষার্থীর ভেতর নিয়মভঙ্গের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনের প্রয়োজনে শাসন করা যেতে পারে। তবে শাসনের অর্থ শুধু প্রহার নয়। ইসলামী আইনজ্ঞদের অভিমত হলো, ‘ছাত্রদের আদর-যত্নের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পড়াশোনা ও সচ্চরিত্র গঠনে উৎসাহিত করাই শিক্ষা ও দীক্ষার উত্তম পন্থা। এ ক্ষেত্রে সাজা দেওয়ার প্রয়োজন হলে প্রহার ছাড়া অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।’ (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৭/৫০০)
প্রহারসংক্রান্ত হাদিস ও তার ব্যাখ্যা : সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য ইসলাম অভিভাবককে শিশুদের মৃদু প্রহারের অনুমতি দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাত বছর বয়সে উপনীত হলে তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামাজের নির্দেশ দাও এবং তাদের বয়স ১০ বছর হলে তাদের নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
উল্লিখিত হাদিসের আলোকে ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, শিশুর চরিত্র গঠনের জন্য অভিভাবকের জন্য এবং অভিভাবকের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষকের জন্য মৃদু প্রহার করা বৈধ। তবে তারা কিছু শর্তারোপ করেন। তাহলো—
১. সাত বছর বয়স তথা শাসন বোঝার মতো বয়স হওয়ার আগে শিশুর সঙ্গে সব ধরনের কঠোর ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
২. শিশুর বয়স ১০ অতিক্রম করলে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার মতো অন্যায় করলে তাকে শাসন করা যাবে।
৩. হাত দ্বারা শাস্তি দেওয়া, লাঠি, বেত ইত্যাদি দ্বারা শাস্তি দেওয়া যাবে না। কেননা বেতের ব্যবহার ইসলামী শরিয়ত হদ-তাজির বাস্তবায়নের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
৪ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি তিনের বেশি আঘাত করা থেকে বিরত থাকো। তুমি যদি তিনের বেশি প্রহার করো, তবে আল্লাহ তোমার কাছ থেকে হিসাব নেবেন।’ (তাজরিদু আসমায়িস-সাহাবাতি : ২/৬৯)
৫. শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলো, যেমন—মাথা, চেহারা ইত্যাদিতে শাস্তি না দেওয়া।
৬. শরীরে ক্ষত বা দাগ পড়া কিংবা হাড়ে আঘাত লাগার মতো এমন শাস্তি না দেওয়া।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীর অভিভাবক অথবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে প্রহার করতে নিষেধ করা হলে উল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষেও প্রহার করার অনুমতি নেই। (বিস্তারিত দেখুন : ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৭/৫০১)