স্যার আমার পা টা বাঁচান।” আমার পা পঁচে গেল ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকার জন্য”বলছিলেন সেই রোগী ।” আমরা অনেকেই জানিনা ডায়াবেটিস হল পৃথিবীতে পা হারানোর একটি বড় কারণ । খালি পায়ে হাঁটে এমন মানুষ এবং স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে তা বেশি হয়। রোগের নাম ডায়েবেটিক ফুট “।
পায়ের রক্ত নালীর বেজায় ক্ষতি হয়। যে কোন ডায়াবেটিক রোগীর হতে পারে টাইপ ১ বা ২ বা গর্ভ কালীন ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে ডায়াবেটিক ফুটের রোগী আছে প্রায় অর্ধকোটি যার সিংহভাগই চিকিৎসার বাইরেই রয়ে গেছে।ডায়াবেটিস দেহের সব রক্ত নালীর ক্ষতি করে । এক সময় রক্তে খুব বেশি সুগার রোধ করে রক্ত নালী। পায়ে এমন হলে সেখানে রক্ত সরবরাহ কমে যায় । পুষ্টিও কমে যায় পায়ে।
ডায়াবেটিসের জন্য পায়ের স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। আঘাত পেলেও পায়ে টের পাওয়া যায় না। ফলে পায়ে ছোট খাট যে কোন আঘাতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।সাধারণত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে পায়ে ব্যথা বা ক্ষত জাতীয় রোগ হয়ে থাকে। দেখা গেছে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল বা অন্যান্য আঙ্গুল ও গোড়ালীর দিকে এধরণের সমস্যা বেশী হয়।গবেষণায় দেখা গেছে ১৫-২৫% বা তারও বেশী ডায়াবেটিসরোগীদের এ ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। তবে অবহেলা না করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষতটা কমানো সম্ভব। পায়ে ফোলা, লালচে ভাব, দুর্গন্ধ, কাল দাগ, ক্ষত,পঁচা, গ্যাংগ্রীন,অবশ ভাব অনুভূত হওয়া জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি দেখা দিলেই ফুট কেয়ার চিকিৎসককে দেখাবেন।
কারণঃস্বল্প রক্ত প্রবাহ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশী থাকা,নার্ভের ক্ষতে সাধিত হওয়া বা আঘাত পাওয়া।রক্ত সরবরাহ কম হলে ঘা সহজে শুকায় না। রক্তে শর্করারমাত্রা বেশী থাকলে ঘা শুকায় দেরীতে। নার্ভেরক্ষতি হলে আপনি টের পাবার আগেই দেখবেন পায়েআঘাতজনিত ক্ষত তৈরী হয়ে গেছে। তাই সাধু সাবধান!!!
ডায়াবেটিক ফুট আলসারের রিস্ক ফ্যাক্টরঃ আনফিট বা কম গুণগত মানের মোজা, পুওর হাইজিন, পায়ের নখ ঠিকমত কাটতে না পারা, অ্যালকোহল, চোখের রোগ, হৃদরোগ, কিডনী রোগ, ওবেসিটি, তামাক চিকিৎসাঃপায়ের ব্যথা ও ক্ষত কমাতে অফ- লোড পদ্ধতি ব্যবহারকরতে হয়। পায়ে প্রেসার পরিহার করতে হবে।অতিরিক্ত চাপ থাকলে সেটাও পরিহার করতে হবে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো একটু পরিহার করুনঃ
ডায়াবেটিক জুতা কাস্টফুট ব্র্যাস মোড়ানো কম্প্রেশন সর্বদা জুতা পরে থাকা ইনফেকশন কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়ঃ
ফুট বাথক্ষতের চারপাশ জীবাণুমুক্ত রাখাক্ষত শুকনা রাখা এনজাইম চিকিৎসা ক্যালসিয়াম অ্যালজিনেট দিয়ে ড্রেসিং ঔষধঃ এন্টিবায়োটিক এন্টি প্লেটলেট এন্টি ক্লটিং আনুসঙ্গিক চিকিৎসা অন্যান্যঃ
সিলভার বা সিলভার সালফাডিয়াজিন সমৃদ্ধ ড্রেসিংপলিহেক্সামিথাইলিন বাইগুয়ানাইড ( পিএইচএমবি)জেল অথবা সলিউশন আয়োডিনমধুর জেল বা মলম
সার্জারীঃযথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সাধারণত পায়ের ক্ষতের জন্য কোন সার্জারীর প্রয়োজন হয় না। তবে কখনও ইনসিশন, ডেব্রাইডমেন্ট বা অ্যাম্পুটেশনের মতঅপারেশন দরকার পড়ে।এমনকি কখনও কখনও সিরিয়ালসার্জারীর প্রয়োজন পড়ে।
প্রতিরোধঃআমেরিকান পোডিয়াট্রিক মেডিকেলএসোসিয়েশন এর মতে আমেরিকার ১৪-২৪%ডায়াবেটিক রোগীর অ্যাম্পুটেশন প্রয়োজন পড়ে। ঠিক মত চিকিৎসা নিলে ৮৫% এম্পুটেশন প্রতিরোধ করা সম্ভব।এজন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
রক্তেশর্করার মাত্রা খালিপেটে ৭ এর নীচে এবং ভরাপেটে ১০ এর নীচে রাখতে হবে। সমস্যা দেখা দিলে দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিক ফুট চিকিৎসককে দেখান।ডায়াবটিক ফুট সমস্যার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেনঃপ্রতিদিনই আপনার পা পরিষ্কার করবেনঠিকমত পায়ের নখ কাটবেনসবসময় পা শুকনা এবং ময়শ্চারাইজ রাখবেনমোজা ঘন ঘন পরিবর্তন করবেন কর্ন বা কেলাসের জন্য ফুট কেয়ার সার্জনের সাহায্য নিবেন যথাযথ মাপের মোজা পরবেন।তবে আগে চিহ্নিত হলে আর চিকিৎসা হলে একে ঠেকানো যায়। ডায়াবেটিক রোগীদের বছরে কমপক্ষে একবার পায়ের ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেন ।
ডা. অসিত মজুমদার কাজ করছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিতে। ২০০৮ সাল হতে ডায়াবেটিস, ফুট কেয়ার এবং জেনারেল এন্ড ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারীতে কাজ করছেন। পাঁচ লক্ষাধিকের বেশীবার ডায়াবেটিক রোগীর পা দেখার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই চিকিৎসক বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বে জানামতে সম্ভবত প্রথম শুধুমাত্র ডায়াবেটিক ফুট চিকিৎসার ফ্রি ক্যাম্প করেছেন।
ডা. অসিত মজুমদার
মোবাইলঃ ০১৯২৩২৮৫১১০