রাজশাহীর বাঘায় মুঘল আমলে স্থাপিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘নারী মসজিদ’। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে মুঘল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। অবহেলা ও অযত্নের কারণে বর্তমানে এই মসজিদটিতে জুম্মার নামাজই শুধু পড়া হয়। ১৫-২০ বছর আগে এই মসজিদে দিনের তিন ওয়াক্ত নামাজ আদায় হত। কিন্তু আগে এ মসজিদে ৫ ওয়াক্তই নামাজই পড়া হত।মসজিদটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরনো নকশা অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ মসজিদ অবস্থিত রাজশাহী শহর থেকে ৪৯ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে বাঘা উপজেলা সদরে হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলার (রহ.) পুত্র হযরত শাহ আবদুর হামিদ দানিশ মন্দ (রহ.) মাজার সংলগ্ন এলাকায় । পর্যটক ও দর্শনার্থীরা নারী মসজিদ দেখতে বছরজুড়ে এখানে আসেন ।
৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটির অবস্থান । বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট, প্রস্থ ১৩ ফুট। চারপাশের দেয়াল ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণে লম্বাকৃতির মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশ পথ। মসজিদের ইট ধূসর বর্ণের।এ ইটের দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৬ ইঞ্চি এবং চওড়া দেড় ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি একেবারেই আলাদা। দর্শনার্থী ও নামাজিদের ওঠা-নামার জন্য মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে প্রবেশ পথ।
সূত্র মতে জানা যায় , প্রায় ৫০০ বছর আগে ৫ জন সঙ্গীসহ সুদূর বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য বাঘায় এসেছিলেন হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহ.)। তিনি বসবাস শুরু করেন পদ্মা নদীর কাছে কসবে বাঘা নামক স্থানে। তিনি আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এই এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন ।
বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের দেয়া তথ্যমতে, হযরত শাহদৌলার (রহ.) পুত্র হযরত শাহ আবদুল হামিদ দানিশ মন্দের (রহ.) মৃত্যুর পর তার তৃতীয় পুত্র মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) বাঘার খানকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওই সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের প্রেরিত শাহী ফরমানযোগে ৪২টি মৌজা মাদদ মাস স্বরূপ দান লাভ করেন (১০৩০ হিজরি)। তখন শালিআনা ছিল ৮ হাজার টাকা।
মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। তবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই মানত করে নামাজ আদায় করতে আসেন। আর রমজান মাসে নারীরা মসজিদটিতে কোরআন তেলাওয়াত করেন। ইবাদাত করেন। বিদ্যুৎ থাকলে নারীরা এখনও আসতেন বলে মনে করেন তিনি।প্রায় ৩০০ বছর আগে মসজিদটি নারীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বলে এলাকায় প্রচলিত। তাই সেটির নাম ‘নারী মসজিদ’ হিসেবেই ছড়িয়ে পড়েছে। সেটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরনো নকশা অক্ষুণ্ন রেখেই মসজিদটির সংস্কার করা হবে।