স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় তার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। মঙ্গলবার (১৮ মে) রিমান্ড শুনানি শেষে এজলাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
এদিন দুপুরে রিমান্ড শুনানিকালে এজলাসকক্ষে আইনজীবীদের নির্ধারিত বেঞ্চে রোজিনাকে বসানো হয়। বিচারক এজলাসকক্ষে প্রবেশ করলে তিনি দাঁড়িয়ে যান। এসময় আইনজীবীর মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে ফের তিনি বেঞ্চে বসেন।
তার পক্ষে বেশ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। তবে এ সময় রোজিনাকে বিচারক কিছু জিজ্ঞাসা করেননি এবং তিনি নিজ থেকেও কিছু বলেননি।
তবে সিএমএম আদালতের এজলাসকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে, আমার সাথে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করায় আমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে।’
আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে পুলিশ তাকে সরিয়ে নেয়।
অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
‘প্রথম আলো’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তার পরিবার তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও তা দেয়নি পুলিশ। রাতে শাহবাগ থানায় অফিশিয়াল সিক্রেট আইনের (১৯২৩) ৩ ধারায় তার নামে মামলা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী।
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে। ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না। ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩৭৯/৪১১ এই ধারার অর্থ হলো,যদি কোন ব্যক্তি অন্যের অজান্তে কোন জিনিস চুরি করেন তবে ৩৭৯ ধারায় মামলা দেওয়া হয়,আর যদি উক্ত মালামাল সহ ঐ আসামিকে ধরা হয় বা গ্রেফতার করা হয় তবে ৪১১ ধারায় রিকভারি দেখানো হয় । এ ক্ষেত্রে আসামির সাজা হবেই বলে আইনে আছে ।
সোমবার (১৭ মে) বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান রোজিনা ইসলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, করোনার ভ্যাকসিন ক্রয়, সংগ্রহ সংক্রান্ত গোপনীয় নথি নাড়াচাড়া ও শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। এ সব নথি জনগণের সামনে এলে অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
তবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম দাবি করেছেন, সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অপেক্ষা করছিলাম, এসময় পিএস সাইফুল ইসলাম নথিপত্র গায়েবের অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ কনস্টেবল ডেকে তার শরীরে হাত দেন। তাকে সাজানো অভিযোগে পিএস আটকে রাখে বলে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি কোনো নথিপত্র নেননি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান পরে রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য দেখে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা নিয়ে যেতে পারেন না। তখন পুলিশকে জানানোর পর মহিলা পুলিশ এসেছে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব সিব্বির আহমেদ শাহবাগ থানায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি নথিপত্র সরানোর অভিযোগ দায়ের করেছেন।