পায়ের সমস্যার কারণে সোজা হয়েই দাঁড়াতে পারেন না। দুই হাতে ভর দিয়ে পথ চলেন। তবু কারও কাছে হাত পাতেন না রুবেল। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় দিন ধইরা অটোরিকশা রাস্তায় বন্ধ। কাজ না করলে খাব কী? ঘরে চাল নাই।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আজ শনিবার সকালে রুবেলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর ঘোষণা দেওয়া হোক।’বিজ্ঞাপন
প্রেসক্লাবের সামনে আজ সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। প্রতিবন্ধী ঐক্য সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশাচালক জড়ো হন। কেউ কেউ নিজেদের বাহন নিয়ে আসেন সঙ্গে। এ সময় তাঁরা ‘ভিক্ষা চাই না, কর্ম চাই, কর্ম করে বাঁচতে চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, সড়কে তাঁরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে চান। এটি বন্ধ হওয়াতে শত শত চালক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।বিজ্ঞাপন
২০ জুন ইঞ্জিনে রূপান্তর করা ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে ইজিবাইকও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যা ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়ার কথাও তিনি জানান। এরপর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা শুরু হয়।
প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তেমনই একজন কামরাঙ্গীর চরের মুসলিমবাগের বাসিন্দা মো. বাবুল। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ চার বছর আগে বাঁ পা হারান। দুই বছর ধরে তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু জমানো টাকা ছিল, তা শেষ। ঋণের টাকা নিয়ে অটোরিকশা কিনেছি। সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। সেটাও দিতে পারছি না। এভাবে চললে বাঁচতে পারব না।’
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের দাবি, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কথা বিবেচনা করে সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলতে দেওয়া হোক। করোনাকালে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
জীবিকার তাগিদে সড়কে ২২ জুন ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হন উজ্জ্বল হোসেন। পল্টন এলাকায় তাঁর রিকশা জব্দ করা হলে তাঁকে ১ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা গুনতে হয়। র্যাকার খরচের সেই স্লিপ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিসহ সেদিন ৯ জনকে একইভাবে জরিমানা দিতে হয়। এরপর থেকে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামি না। কারণ, দিনে আয় করি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর জরিমানা দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। বেকার ঘরে বসে আছি।’
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।