বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে তীব্র শ্রমশক্তির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সে জন্য তারা দক্ষ অভিবাসী কর্মী নিতে চায়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির স্থানীয় নিয়োগ সংস্থা ট্যালেন্টেড সলিউশনের কর্মকর্তা সাকু তিহভরেনেন।
ফিনল্যান্ডের শ্রমিকদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। দেশের এই বয়স্ক শ্রমিকরা বেশিদিন কাজ করতে পারবেন না। তাই ফিনল্যান্ড সরকার বিদেশ থেকে অভিবাসী শ্রমিক চায়। সমস্যা হলো, সরকার চাইলেই বিদেশিদের যে সবসময় দু-হাত বাড়িয়ে ফিনল্যান্ডে স্বাগত জানানো হয়, তা নয়। সুখী দেশের এটাই বড় সমস্যা। খবর ডয়চে ভেলের।
ফিনল্যান্ডে এখন কর্মক্ষম অভিবাসী দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, আর এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়তে থাকায় সৃষ্ট ঘাটতি পূরণের জন্য কর্মক্ষম মানুষ দরকার।
সাধারণত ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই জন্মহার কম। ফিনল্যান্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে সেটির প্রভাব দেশটিতে বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। খবর প্রকাশ করেছে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ফিনল্যান্ডে কর্মজীবী মানুষের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনের বয়সই ৬৫ ঊর্ধ্ব। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষই বৃদ্ধ। যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম স্থানে রয়েছে জাপান।
ফিনল্যান্ডের সরকার বলেছে, জনসেবা ও ক্রমবর্ধমান পেনশন ঘাটতি মেটাতে অভিবাসী শ্রমিক দ্বিগুণ করতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় জীবনযাত্রার মান, স্বাধীনতা, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্কোর নিয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ফিনল্যান্ড। দেশটি অভিবাসীদের নিকটও অন্যতম আকর্ষণীয়।
২০৩০ সালে দেশটির বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৭ শতাংশ। সরকার চাইছে, অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়িয়ে বছরে ২০ থেকে ৩০ হাজার করতে। না হলে জনসেবার কাজে অসুবিধা হবে।
চার বছর আগে ফিনল্যান্ড সরকার ‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ কর্মসূচি নিয়েছে। অর্থ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্বে। তাদের বক্তব্য, ফিনল্যান্ডের জন্য আরও দক্ষ শ্রমিক দরকার। সেটা পেতে গেলে অভিবাসীদের ওপরই ভরসা করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ফিনল্যান্ডে কাজ করতে পারেন এমন মানুষের সংখ্যা কমছে। এর সংখ্যাবৃদ্ধি পুরোপুরি অভিবাসীদের ওপর নির্ভর করছে। অভিবসীরা না এলে শ্রমিকদের সরবরাহ বজায় থাকবে না। এর প্রভাব ফিনল্যান্ডের অর্থনীতিতে পড়বে।
বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ফিনল্যান্ডের জীবনযাপনের মান খুবই উঁচু। সেখানে স্বাধীনতা, লিঙ্গসাম্য আছে, দুর্নীতি প্রায় নেই, অপরাধ ও দূষণও কম। ফিনল্যান্ড জিনিসের দাম, প্রবল ঠান্ডা ও জটিল ভাষার জন্য পরিচিত। সেই সঙ্গে ফিনল্যান্ডের মানুষ বিদেশের কর্মীদের নিয়োগ করতে চান না।
এতদিন ফিনল্যান্ডের কোম্পানিগুলো বাইরের মানুষদের নিয়োগে উৎসাহ দেখায়নি। তাদের সেই মনোভাব এখনো যায়নি। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাদের মনোভাব বদলাতে হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, ট্যালেন্ট বুস্ট প্রোগ্রাম ফিনল্যান্ডের লেবার মার্কেটকে খুলে দেওয়া নিয়ে বিতর্ককে জোরদার করেছে। কিন্তু কাজের জায়গায় কর্তৃপক্ষের মনোভাব, বিভেদ, বৈচিত্রহীনতার জন্য বিদেশি শ্রমিকরা ফিনল্যান্ডে আসতে উৎসাহ বোধ করে না।