ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন, ‘আমি বিয়েতে ততটাই বিশ্বাস করি যতটা ডিভোর্সে করি। অশান্তির বিয়ের চেয়ে শান্তির ডিভোর্স শতগুণে ভাল।’ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৭টায় এ কথা লেখেন তসলিমা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তাঁর স্ত্রী সোফি নিজেদের ১৮ বছরের সংসারের ইতি টানার ঘোষণা দেওয়ার পরই বিশ্বজুড়ে বিয়ে ও সম্পর্ক নিয়ে অনেককে কথা বলতে দেখা গেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ফেসবুক পোস্টে ভারতে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘যখন বিল গেটস আর মেলিন্ডা গেটসের ডিভোর্স হলো, মন খারাপ হয়েছিল। এক সঙ্গে ওঁরা মানব সমাজের ভাল’র জন্য কত ভাল কাজ করছিলেন। একই রকম জাস্টিন ট্রুডো আর সোফি ট্রুডোর বিচ্ছেদের খবর শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। জাস্টিনের মতো এমন উদার, প্রাণোচ্ছ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কোনও ভাল মানুষের বিরোধ হতে পারে বলে আমার কখনও মনে হয়নি। কী জানি, হয়তো ব্যক্তিত্ব দুজনেরই প্রখর হলে সংঘাতের আশঙ্কা থাকে। যাদের ব্যক্তিত্বের বালাই নেই, অথবা ব্যক্তিত্ব একজনের বেশি আরেকজনের কম, তারাই হয়তো একসঙ্গে সুখে শান্তিতে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে।’

স্ট্যাটাসের শেষের দিকে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘সুখী হওয়াটাই আসল। নিজের জীবন দিয়ে জানি আমি যখন একা, আমি সুখী।’
১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর গত বুধবার ট্রুডো ও সোফি বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, তিনি ভাবতেন, দুনিয়াতে তিনিই বুঝি খুঁতহীন, নির্ভেজাল সম্পর্ক চান। ছোটলোকির সঙ্গে, প্রভুত্ব ফলানোর সঙ্গে আপস একেবারেই করেন না তিনি। এখন দেখছেন, তাঁর চেয়ে বেশি নিখুঁত সম্পর্কে বিশ্বাস করেন সোফি।
তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, তিনি যদি সোফি হতেন, কোনো দিনই ট্রুডোর মতো এমন সুদর্শন, আদর্শবান, মানবিক ও এমন পাগল করা প্রেমিককে ত্যাগ করতেন না। সোফি আলাদা হয়েছেন ট্রুডো থেকে। এমন নিখুঁত সুপুরুষের কি সত্যিই কোনো খুঁত থাকতে পারে!
তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘পৃথিবীর কত সুখী দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। কত আদর্শবান জুটির তালাক হয়ে গেল। আমরা বাইরে থেকে শুধু কল্পনা করে নিই উপন্যাসের নায়কের মতো, সিনেমার হিরোর মতো একেকজন পছন্দের পুরুষকে, যেন তাঁরা অনৈতিক কিছু করতে পারেন না।
বরেণ্য লেখক-গবেষক, বুদ্ধিজীবী, শিশু-কিশোর আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকাল ৮টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেদিন ঢাকা শহরে কারফিউ ছিল। পুরো দেশ তখন গণআন্দোলনে উত্তাল। শহীদুল্লাহ কায়সারের হাত ধরে তার পরিচয় আধুনিক সাহিত্যের সঙ্গে, রাজনীতির সঙ্গে। তার সংসার জীবন স্থায়ী হয় মাত্র দু’বছর ১০ মাসের মত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি।
এরপর পান্না কায়সার একা হাতে মানুষ করেন তার দু’সন্তান শমী কায়সার এবং অমিতাভ কায়সারকে। এছাড়া তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে শিশু কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৯০-তে তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পান্না কায়সার ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন। পান্না কায়সার ২৫ মে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার আরেক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। তার স্বামী শহীদুল্লাহ কায়সার একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার জন্য তাকে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ তরুণীর বিয়ে হয় তাদের শৈশবে। দেশে শিশুবিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং বিশ্বের মধ্যে অষ্টম। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৪৫ লাখ নারীর বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে। ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগে। গতকাল বুধবার শিশুবিয়ে নিয়ে ইউনিসেফ-এর প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুবিয়ে নির্মূলের ক্ষেত্রে ধীরগতি সবচেয়ে বেশি সাব-সাহারান আফ্রিকায়। ঐ অঞ্চলে শিশুবিয়ের অবসানে ২০০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে। গত এক দশকে শিশুবিয়ে ধারাবাহিকভাবে কমা সত্ত্বেও সংঘাত, জলবায়ুজনিত অভিঘাত ও কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাবসহ একাধিক সংকট এক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্জনগুলো নস্যাৎ করে দেওয়ার হুমকি তৈরি করেছে। বৈশ্বিক বহুবিধ সংকটে শিশুবিয়ে প্রতিরোধ কঠিন লড়াইয়ের মুখে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, শিশুদের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে শিশুবধূর সংখ্যা বিস্ময়কর। লাখ লাখ মেয়ের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মেয়েরা যাতে স্কুলে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে এবং তারা যাতে পরিপূর্ণভাবে নিজের মধ্যে থাকা সম্ভাবনা অনুযায়ী বেড়ে উঠতে পারে, সে সুযোগ দিতে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব মেয়ের শৈশবে বিয়ে হয় তাদের তাৎক্ষণিক এবং জীবনভর এর পরিণতি ভোগ করতে হয়। তাদের স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে এবং তারা অল্প বয়সে গর্ভধারণের বাড়তি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, ফলস্বরূপ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করা মেয়েদের শিশুবিয়ে হওয়ার ঝুঁকি বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। সংঘাতজনিত মৃত্যুর প্রতি দশ গুণ বৃদ্ধির জন্য শিশুবিয়ের হার ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলো মেয়েদের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর চলমান প্রভাবসমূহের কারণে বিগত এক দশকে শিশুবিয়ের অবসান ঘটাতে মূল্যবান অর্জনগুলোও হুমকির সম্মুখীন বা এমনকি তা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মহামারিটি ইতোমধ্যে শিশুবিয়ে প্রতিহতের সংখ্যা ২০২০ সাল থেকে এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, বিশ্ব একের পর সংকটে জর্জরিত, যা ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের আশা ও স্বপ্নকে চুরমার করে দিচ্ছে, বিশেষ করে মেয়েদের, যাদের বিয়ের কনে হিসেবে নয়, বরং শিক্ষার্থী হিসেবে থাকা উচিত। স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পরিবারগুলোকে শিশুবিয়ের মতো মিথ্যা ধারণার আশ্রয় নিতে বাধ্য করছে। বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ বৈশ্বিক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের শিশুকালে। পাঁচ বছর আগে এ বিষয়ে সর্বশেষ হিসাব প্রকাশের পর, এ পর্যন্ত শিশুকালে বিয়ে হয়ে যাওয়া তরুণীর সংখ্যা ২১ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এই অগ্রগতি সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুবিয়ের অবসান করার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তা পূরণের জন্য বিশ্বব্যাপী ঐ কমার গতি ২০ গুণ দ্রুততর করতে হবে।
আজ বুধবার (৮ মার্চ) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ হোল এবারের প্রতিপাদ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্বের সকল নারীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নারী-পুরুষ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

নারী দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ উপলক্ষ্যে আজ দুপুর আড়াইটায় এক শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে শেষ হবে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে বুধবার সরকারি ছুটি থাকায় এবছর নির্ধারিত সেমিনারটি পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) জানানো হয়, বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলোর জাতীয় মোর্চা সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৯ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার বেলা ২.৩০ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এটি অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডিজিটাল বিশ্ব হোক সবার: নারীর অধিকার সুরক্ষায় ও সহিংসতা মোকাবেলায় চাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন বৈষম্যহীন সৃজনশীল প্রযুক্তি’।
দিবসটি উপলক্ষে বিনামূল্যে নারীদের ‘স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ পরীক্ষা ও সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হেলথ এ্যান্ড হোপ হাসপাতাল। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পান্থপথে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজন করছে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান। ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমানঃ অত্যাচারী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় মুসলিম নারীরা।
২০০ বছরের অধিক সময় অত্যাচারী বৃটিশরা ভারতের মাটিতে অনুশাসন চালিয়েছিল। ২০০ বছরের পরাধীনতার কঠিন জিঞ্জির ভেদ করে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে যে স্বাধীনতার আলো এসে পৌঁছেছিল, তা ছিল শতসহস্র মানুষের ত্যাগ আর প্রাণ বিসর্জনের ফল।শৃঙ্খলতার কঠিন জালকে ছিন্ন ক’রে স্বাধীনতা আনতে যাঁরা ঝরিয়েছিলেন তাঁদের শেষ রক্তবিন্দু। নিঃশেষ করে ছিলেন তাঁদের দেহের অন্তিম শক্তিটুকুও। তাঁদের অবদানকে অস্বীকার করলে ভারতের স্বাধীনতাই আজ সম্পূর্ণ রূপে বৃথা হবে। ভারতকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে নিঃসংকোচে এগিয়ে এসেছিলেন এই সমস্ত মহান ব্যক্তিত্ব। ভারতের প্রত্যেকটি বালুকণায় রয়েছে এই শত সহস্র মানুষের ত্যাগের ছোঁয়া।
“কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী, প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয় লক্ষ্মী নারী।” -কাজী নজরুল ইসলাম
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীরা অধিক সংখ্যায় অংশ গ্রহণ না করলেও তাঁরা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন এটা বলা কোন দিক থেকেই যুক্তিযুক্ত হবে না। কিন্তু অধিক সংখ্যায় পুরুষদের অংশগ্রহণ কেবল নারীদের নিঃস্বার্থ ত্যাগেরই ফলাফল। অগণিত মুসলিম নারী স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সঠিক তথ্য বিশ্লেষণের অভাবে আজ তাঁরা ঠাঁই পায়নি ইতিহাসের পাতায়। তাই তাঁরা আজ রয়ে গেছে দৃষ্টির অগোচরে।
১.বেগম হাজরত মহল:
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলিম মহিলাদের ভূমিকার কথা আলোচনা করতে গেলে প্রথমে যাঁর নাম আসে তিনি হলেন বেগম হাজরত মহল। যিনি ছিলেন আওধারের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের প্রিয়তমা স্ত্রী। বেগম হাজরত মহল স্বামীর কোলকাতাতে নির্বাসনের পর সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে অবশেষে তিনি পরাজিত হন। পরজিত হয়ে ব্রিটিশ সরকারের হাতে বন্দি হয়ে বশ্যতা স্বীকারের পরির্বতে তিনি ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
২.রিজিয়া খাতুন:
রিজিয়া খাতুন ছিলেন বাংলার প্রথম মুসলিম নারী যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন । যার ফলস্বরূপ তাঁকে অন্তিম নিঃশ্বাস পর্যন্ত কালাপানির নির্বাসন ভোগ করতে হয়েছিল।
৩.আবেদী বেগম:
যিনি সকলের কাছে ‘বি আম্মা’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন মুহাম্মদ আলী এবং সওকাত আলীর বৃদ্ধা মাতা। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যে বড়সড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তা অকপটে স্বীকার করতে হয়। তাঁর অবদানের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বয়ং গান্ধীজী বলেছিলেন, “তিনি বৃদ্ধা হলেও তাঁর মধ্যে ছিল যুবকদের ন্যায়ে অদম্য প্রাণ শক্তি।” ১৯২১সালে তাঁর দুই পুত্র মুহাম্মদ আলী এবং সওকাত আলীর ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর চারিদিকে গুজব রটে যে তাঁর পুত্ররা ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মুক্ত হয়েছেন। এই গুজবে উত্তেজিত হওয়ার পরিবর্তে দৃঢ কণ্ঠে উদ্ধৃতি দেন যে, তাঁর পুত্ররা হল ইসলামের সন্তান তাই তাঁরা কোনভাবেই ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মুক্তিলাভ করতে পারেন না। যদিও তা লাভ করে তাঁর হাতই তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট ।
৪.আজিজান:
এই মহীয়সী নারী ১৪৩২ সালে লক্ষ্ণৌ এ জন্মগ্রহণ করেন। তথ্যসূত্রে জানা গেছে তিনি উমরাও জানের সাথে সিরিঙ্গি মহলে বসবাস করতেন। ৪ই জুন ১৯৫৭ খ্রীঃ নানা সাহেব যখন যুদ্ধে যোগদানের আহ্বান জানান তখন তিনি গৃহত্যাগ করে তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন। আজিজান অস্ত্র চালনায় যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। তাঁর অধীনে মহিলাদের একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে ওঠে। নির্ভিক এই মহিলা ব্রিটিশদের গোপন তথ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সরবরাহ করতে গিয়ে ইংরেজদের হাতে গ্রেফতার হন। তাঁকে জেনারেল হেভলকের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং তার সামনে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মুক্তিলাভ অথবা শহীদী মৃত্যু এই দু’টির একটি গ্রহণ করতে বললে তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে গ্রহন করেন।
৫.জুবায়দা দাউদী:
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মৌলনা সাফী দাউদীর স্ত্রী জুবায়দা দাউদী। যিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা তাঁদের পঠনপাঠন বন্ধ করে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন তাঁদের জন্য মৌলনা সাফী দাউদী একটি শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করে ছিলেন। এই শিক্ষা কেন্দ্রে জুবায়দা দাউদী একাত্মভাবে অংশগ্রহণ করে নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে উপস্থাপন করার সাথেসাথে নিজেকে মৌলনা সাফী দাউদীর সুযোগ্য স্ত্রী হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন।
৬.সাদাত বানু কিছলু:
উর্দু ও পার্সি ভাষার সুখ্যাত কবি-প্রাবন্ধিক সাদাত বানু কিছলু ছিলেন ডাঃ সাইফুদ্দিন কিছলুর প্রিয়তমা স্ত্রী। যে সময় ভারতীয় সমাজে নারীর মত প্রকাশ ছিল সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ, সেই প্রতিকূল পরিবেশে দাঁড়িয়ে সাদাত বানু কিছলু তাঁর কবিতার জ্বালাময়ী ভাষার মাধ্যমে ভারতীয় জনগণকে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর স্বামী গ্রেপ্তার হন। এহেন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট শান্ত কণ্ঠে জানান, তিনি তাঁর স্বামীর ব্যাপারে যথেষ্ট গর্বিত কারণ, তাঁর স্বামীর এই গ্রেপ্তারী হয়তো সহস্রকোটি ভারতীয় নাগরিকদের পরাধীনতার গ্লানি ঘুচিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে পারবে। তাঁর স্বামীর তৈরি ‘স্বরাজ আশ্রমে’র তিনি একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন।
৭.জুলেখা বেগম:
তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রবীণ শিক্ষানবিশ এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সহর্ধমিনী। ভারতের মাটিতে স্বাধীনতা আনতে যথেষ্ট নির্ভিকতার পরিচয় দিয়ে ছিলেন এই বীরঙ্গনা। ব্রিটিশদের হাতে আবুল কালাম গ্রেপ্তার হলে তিনি মৌলনার যোগ্য স্ত্রী হিসাবে নিজেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে পরিপূর্ণভাবে জড়িয়ে ফেলেন।
৮.নিশাতুন নিশা বেগম:
বেগম হাজরত মোহানী ১৯১৬ খ্রীঃ এপ্রিল মাসে প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে জনসম্মুখে নিজেকে উপস্থাপন করেন। তিনি তাঁর প্রিয়তম স্বামী হজরত মোহানীর সাথে বিভিন্ন আলোচনা সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে দূর করার জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বিক্রি করেন। বেগম হাজরত মোহানী বেগম খুরশিদ খাজার সাথে সক্রিয়ভাবে কংগ্রেসে যোগদানের মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হন।
এছাড়াও মুনীরা বেগম (মওলানা মাজহারুল হকের স্ত্রী), আমিনা কোরেশি, ফাতেমা কোরেশি, আবুল খাত্তাবের স্ত্রী আমিনা তায়াবজী, আব্বাস তায়াবিজীর কন্যা রেহানা তায়াবজী, শামসুদ্দীন তৈয়বীর নাতি হামিদা তায়াবিজি, বেগম সখিনা লুকমান (বদরুদ্দিনের মেয়ে) তিতবি, ফাতেমা তৈয়ব আলী, শফাত তৌহিদ আলী, শহীদ অনাশা বিবি (লুৎফর মওলানা হাবিবুর রেহমানের স্ত্রী), সাফিয়া সাদ, বেগম কুলসুম শায়ানী, আসমত আরা খাতুন, সুঘ্রা খাতুন, বিবি আমাতুল ইসলাম, ফাতেমা ইসমাইল, সুলতানা হায়াত আনসারী, হাজরা বেগম, জুয়ার আনসারি- এই সমস্ত নারীরাও স্বাধীনতা আন্দোলনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন। চার দেওয়ালের মাঝে বদ্ধ থেকে নিজের পুত্র-স্বামীদের সর্বদা আন্দোলনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার সাথে সাথে নীরবতার অবগুণ্ঠনকে ঝেড়ে ফেলে নিজেদের ওতপ্রোতভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে তৎকালীন সামাজে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় রেখেছিলেন।আজ ভারতীয়রা সেই জীবন উৎস্বর্গ করা নারীদের উত্তরসূরীদের ধর্ষণ করছে, হত্যা করছে।
আমি বৃদ্ধাশ্রমে আছি আজ প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। ভালই লাগে এখানে। নিজের মত করে থাকা যায়। মন চাইলে বই পড়ি না হলে গান শুনি। কখনো কখনো এখানকার অন্যান্য বাসিন্দাদের সাথে গল্প করি। আমার ভাল লাগে। আমি ভাল আছি।
দুই ছেলে এক মেয়ে আমার। বড় ছেলে যাওয়াদ, পেশায় ডাক্তার। সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। জহির, আমার ছোট ছেলেটা দেশেই থাকে। পৈত্রিক ব্যবসা দেখাশোনা করে। মেয়েটা ব্যাংকে কাজ করে। বন্ধের দিনে আসে আমাকে দেখতে। কোন সপ্তাহে আসতে না পারলে রান্না করে পাঠিয়ে দেয়, একটু বেশি করেই পাঠায় যাতে করে অন্যদেরও একটু ভাগ দিতে পারি। আমি রাজিয়া খানম। এভাবেই চলছে আমার জীবন গত পাঁচ বছর ধরে।
যাওয়াদের বাবা মারা যাবার বছর খানেক পর হঠাৎ করে আমার কার্ডিয়াক-এটাক হয়। আমাকে প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। কি যে সময় গেছে তখন। অর্থের অভাব নেই, নেই ইচ্ছার অভাবও। অভাব হচ্ছে সময়ের। হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে একজন থাকা, প্রতিনিয়ত ডাক্তারের সাথে কথা বলা, এক্সারসাইজ করানো, ওষুধ খাওয়ানো সময় ধরে, আরো কত কী! বাসায় আসার পর আরেক ঝামেলা। সার্বক্ষণিক দেখা শোনার জন্য একটা মানুষ কোথায় পাওয়া যায়। মেয়েটা অফিস কামাই করছে প্রায়ই, আবার অফিস আর আমাকে সামলে তার নিজের সংসারটা ঠিক খেয়াল রাখতে পারছেনা। একদিন শুনলাম, জামাই বলছে-মা তো তোমার একার নয়, তোমার ভাইদেরও তো কিছু দায়িত্ব আছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কিন্তু কথা গুলো এসে যায়। তাই আমি সহজভাবেই নিলাম।
এরমধ্যে শুনি, ছোট বউমা জহিরের সাথে খুব চিৎকার- চেঁচামেচি করছে। কি, না নাতির রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে। অসুস্থ আমাকে দেখতে আত্নীয়-স্বজনের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল, আবার আমাকেও একটু বাড়তি যত্ন করতে হয়েছে, তাই এ কয়দিন বাবা মা কেউই আর ছেলের পড়াশুনা দেখার সুযোগ পায়নি।
-এই ঘরে বাচ্চা মানুষ হবেনা, কারন এখানে পড়াশোনার কোন পরিবেশ নাই।সারাদিন মেহমান, রান্নাবান্না এইসবের মধ্যে বাচ্চা মানুষ হয়!
বউমার জোর গলা। আমি শুনলাম এবং ভাবলাম , ঠিকইত । আজকালকার এই প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকতে হলে বাচ্চাকে শতভাগ সময় দিতে হবে। এখান থেকে দশ ভাগও যদি অন্য কোথাও দেয়া হয়, ক্ষতি হবে বাচ্চার।
আমি অনেক ভেবে দেখলাম। বিভিন্ন দিক থেকে ভেবেছি। তারপর আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ছেলেমেয়েরা বিরোধিতা করেছে। বড় ছেলেটা বিদেশ থেকে আসল। অনেক কান্নাকাটি করেছিল সে আমাকে এখান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যেতে। মেয়েটা অনুরোধ করেছিল যেন তার সাথে গিয়ে থাকি। কিন্তু আমি সবাইকে না করে দিয়েছি। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছি।
-তাহলে মা তুমি আমাদের ভালবাসনা, আমাদের আপন মনে করনা,তাই আমাদের কারো সাথে থাকতে চাওনা? জহির কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল। তার চোখে জল।
-ভালবাসিরে পাগলা, অনেক ভালবাসি। আর তাই চাই সম্পর্কটা সবসময় এমন ভালবাসাময়ই থাকুক। একসাথে থাকা সম্পর্কগুলোর মধ্যে প্রত্যেশা অনেক বেশিরে। আর যখন প্রত্যেশা আর প্রাপ্তির হিসাব মিলেনা তখনই সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়, পরিবারে অশান্তি বাড়ে।
-মা, তুমি আমাদের সাথে থাকতে চাওনা, আবার আমাদের গ্রামের বাড়িটাত খালিই পড়ে আছে……তুমিত ঐ বাসায়ও থাকতে পার মা। বড় ছেলেটা বলল।
-সেইত বাসা, সংসার,দায়িত্ব-অনেকত করলাম। এবার একটু নিজের মত থাকি। তোদেরও আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবেনা। আমারও একা বাড়িতে মরে পড়ে থাকার ভয় থাকলনা।
-তুমি যাবেই,বুঝতে পেরেছি। ঠিক আছে মা, বাধা দিবনা আর। একটাই অনুরোধ, তোমার খরচটা আমাদের দিতে দিও মা।
-বেশ তো, দিবি। মুচকি হেসে জবাব দিলাম।
এরপরের কাজগুলো খুব দ্রতই গুছিয়ে নিলাম। টাকা-পয়সা, সম্পদের যথাযথ বিলি-বন্টন করলাম। আমার অংশের সম্পত্তিটুকু নিজের কাছেই রেখেছি, নিজের মত ব্যবস্থা করব বলে। এ সম্পদ থেকে সমাজের বয়স্কদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে। এখানে অনেকেই আছেন যারা ছেলেমেয়েদের সাথে একটু সময় কাটানোর বিনিময়ে সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত, কিন্তু ছেলেমেয়েদের সময় হয়না, বৃদ্ধ বাবা মায়ের সাথে দুদন্ড সময় কাটানোর। আবার অনেকে ভাগের মা কিংবা বাবা হয়ে থাকতে চাননা, চলে আসেন এখানে। অর্থাৎ একদম নিরুপায় নাহলে কেউ বৃদ্ধাশ্রমে আসাটা চিন্তাই করতে পারেনা। অথচ বৃদ্ধাশ্রমে থাকাটা যে জীবনের শেষ বেলায় অনেক ধরনের পারিবারিক জটিলতার বিপরীতে কোন সুন্দর বা সম্মানজনক সমাধান হতে পারে এই ধারনাটাই এখনো সমাজে তেমন গ্রহনযোগ্য নয়। যতদিন আমরা মেয়েরা স্বামী, সন্তান পরিবারেরর বাইরে নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে করব,ততদিন এই বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা একটা ঋণাত্মক ব্যাপার হয়ে আমাদের মাঝে থাকবে।
এখানে সবাই আ্মাকে হিংসা করে, ভালবাসা মিশ্রিত হিংসা। বলে, ছেলেমেয়েরা আপনাকে এত ভালবাসে, এত তাদের সাথে থাকতে বলে,আর আপনি এখানে আশ্রমে পড়ে আছেন। আমি হাসি। তাদের আমি বুঝাতে পারিনা, আমি এখানেই ভাল আছি। আমি জানি, আমার ছেলে মেয়েরা আমাকে অনেক ভালবাসে, অনেক সম্মান করে। কিন্তু আমি এটাও জানি, এই ব্যস্ত জীবনে যেখানে দিনের প্রতিটা ঘন্টা হিসাবের, সেখানে আমি তাদের কাছে একটা বাড়তি দায়িত্ব ছাড়া কিছু নই।
একজন মায়ের জীবন শুধু ছেলেমেদের বড় করে তোলা আর বৃদ্ধ বয়সে তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা নয়। বড় হওয়ার সাথে সাথে সন্তানদের নিজের জগত তৈরি হয়, নিজের পরিবার। তাদের ঘিরেই চলে জীবনের আবর্তন। সেইখানে বৃদ্ধ মা বা বাবা তাদের সেই জীবনের অংশ হয়না। এটাই সত্য। অনেকেই হয়ত এই সত্যটা ধরতে পারেনা কিংবা ধরতে পারলেও না বোঝার ভান করে। হয়ত তাদের আর কোন উপায় নেই অথবা তারা যেকোন মুল্যে সন্তানের কাছে থাকার লোভ সামলাতে পারেনা। আমি যেকোন ভাবেই হোক এই লোভ সংবরণ করে নিলাম। আমি শেষ বয়সটা আমার নিজের মত করে কাটাতে চাই।
এরপর থেকে আছি আমার ঠিকানায়। হ্যা, এখন এটাই আমার ঠিকানা, আমি নিজে এই ঠিকানা বেছে নিয়েছি, একটু আমি হয়ে বাঁচার জন্য।
অজানা লেখকের জীবন দর্শন (সংগৃহীত)
কোনো মেয়ের দিকে একটানা ১৪ সেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে থাকলে হতে পারে জেল। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এনসিআইবি) এ ধরনের একটি টুইট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছে।
২৭ নভেম্বর করা ওই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার নজর কেড়েছে।
এনসিআইবির ওই টুইটে বলা হয়েছে- কোনো পরিচিত বা অপরিচিত নারীর দিকে ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত কিংবা মজার ছলে কেউ যদি ১৪ সেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে থাকেন, তবে তা ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ এবং ৫০৯ ধারায় গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি নারী নিগ্রহের দায়ে সেই ব্যক্তির জেলও হতে পারে।
এনসিআইবি আরও জানিয়েছে, এক্ষেত্রে কোনো অভিযুক্ত যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার ৩ মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড হবে। তাকে জরিমানাও দিতে হতে পারে।
এনসিআইবির এই পোস্ট ঘিরে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। একেকজন একেক ধরনের মন্তব্য করেছেন।
তবে শুধু পুরুষের জন্য কেন, নারীদের জন্য একই রকম নিয়ম রয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করল মেয়ে।
রোববার (৬ নভেম্বর) পরীক্ষার প্রথম দিনে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় মাজিদা বেগম মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন শারমিন আক্তার, ঘটে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ।
পরীক্ষার্থিনী শারমিন আক্তার উপজেলার ৭নং গৌরীপুর ইউনিয়নের উত্তর পৈকখালী গ্রামে ফারুক ফকিরের কন্যা। তিনি ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী।
মেয়ের চাচা আ. মালেক ফকির জানান, শারমিনের মা শিউলি বেগম দীর্ঘদিন ধরে লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে ঢাকা প্রাইম হাসপাতালে মারা যায়। সকাল ১০টায় লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে এইচএসসি পরীক্ষায় বসে শারমিন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি এলেই দুঃখজনক। সহপাঠী ও পরীক্ষাকেন্দ্র সচিবদের সহযোগিতায় সে পরীক্ষা দেয়।
তিনি ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী কানিজ ফাতেমা রিপা। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে (২৫ অক্টোবর, ২০২১) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
দিবসটি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাদ এশা মরহুমার লালবাগের বাসভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, কানিজ ফাতেমা রিপা বিগত বিশ বছর যাবৎ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোকে নিয়ে এসেছেন নতুন আঙ্গিকে, নতুন পরিবেশনায়। পাশাপাশি লিখেছেন এ রন্ধন কৌশল। তিনি দৈনিক যুগান্তর, আমাদের সময়, মানবকন্ঠ, পাক্ষিক আনন্দ আলো, বিনোদন বিচিত্রা, সাপ্তাহিক আনন্দলোক, ছায়ালোক, আনন্দভুবন, চিত্রজগত ম্যগাজিনে নিয়মিত লিখতেন।
রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান করেছেন দিগন্ত টিভি, বাংলা ভিশন, মাছরাঙ্গা, এটিএন, এনটিভি সহ বিভিন্ন চ্যনেলে, এছাড়া তিনি একটি রন্ধন বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল “রন্ধন জগৎ” নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করতেন।
এসিআই পিওর, চ্যানেল আই, আনন্দ আলো জাতীয় ভর্তা প্রতিযোগিতায় একাধিকবার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন কানিজ ফাতিমা রিপা। দায়েমী ফাউন্ডেশনের রন্ধন বিষয়ক অনুষ্ঠানেও গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন আমেরিকার প্রখ্যাত শিশুবিষয়ক এনজিও “ফর কিডস সেক” এর সম্মানিত সদস্য।

রন্ধনশিল্পের বিশেষ অবদানের জন্য বেগম রোকেয়া, পল্লী কবি জসিমউদ্দিন, বাংলা সংগীত স্টার এওয়ার্ড, চিত্রজগত বিশেষ সম্মাননা, বাবিসাস, পাঠক সংবাদ, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী এওয়ার্ড, বিএমকেসি স্টার এওয়ার্ড, ময়ুরপঙ্খি ফাউন্ডেশন সহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।
গত ৮ অক্টোবর ২০২১ সালে কক্সবাজার বার্মিজ মার্কেট থেকে সন্ধ্যায় হোটেলে ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় গূরুতর আহত হলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকের পরামর্শে রাতে এম্বুলেন্সযোগে রাজধানীর একটি প্রইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে তার ডান পায়ে সফল অস্ত্রপোচার সম্পন্ন হয়। এর সপ্তাহ খানেক পর পুনরায় অসুস্থ হলে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু বরণ করেন।
বুধবার দেশে ফিরে ছাদখোলা বাসেই বিমানবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়ন যাত্রা করবে বাংলাদেশ নারী দল।
আক্ষেপ নিয়েই মিডফিল্ডার সানজিদা ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।’

গত সোমবার রাতে প্রথমবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠে চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দলকে বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে করে সংবর্ধনা দেওয়ার।
এই আলোচনার মধ্যেই বিজয়ীদের ঘরে ফেরাটা রাঙাতে ছাদখোলা বাসের ব্যবস্থা করছে সরকার। রাতেই যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জানান, ছাদ খোলা বাসেই সাফ চ্যাম্পিয়নদের সংবর্ধনা জানাবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
এবার, বাফুফে আর ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলার বাঘিনীদের সেই ছাদখোলা বাসেই অভ্যর্থনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক সাফজয়ী নারীদের বরণ করতে আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ছাদখোলা গাড়ি সাজানোর কাজ চলছে বিআরটিসির কমলাপুর ডিপোতে।
নেপাল থেকে সাবিনারা দেশে ফিরবে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে। নেপাল থেকে দুপুরে সোয়া ১২টার ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়ে দুপুর সোয়া ১টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে তাদের।