প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় গ্রিডে আরও বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার ফলে চলমান বিদ্যুতের পরিস্থিতি ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে।
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, মানুষের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। দু-এক দিনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে আরও বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। তখন আর কোনো কষ্ট থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এবার মানুষকে প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হচ্ছে, যা অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রিতে উঠবে, তা আমরা ভাবতেও পারতাম না। বৃষ্টি নেই, এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপায় খুঁজতে আমরা বারবার মিটিংয়ে বসেছি এবং এই কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ একাই শুধু বৈশ্বিক কারণে সৃষ্ট এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে রেখে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি সবকিছুকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। -বাসস
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম সারা দেশে চলমান লোডশেডিং নিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন।
মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে তাকে নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজবেরও জবাব দিয়েছেন মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর ও সদর) আসনের এ সংসদ সদস্য।
লাইভে তিনি বলেন, ‘আজকে যে কথাটা বলার জন্য লাইভে এসেছি। সারা দেশের মানুষ সাময়িক একটা কষ্টের মধ্যে পড়েছি, সেটি হলো—বিদ্যুৎ। এ বিদ্যুৎ নিয়ে যেমন কষ্ট আছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে নানা ধরনের কথা, আলোচনা-সমালোচনা ও প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। যেহেতু আমি এমপি, আমার এলাকায় কী কী কাজ করেছি, কী কাজ করা বাকি আছে, সেগুলো বলার একটি জায়গা হলো সংসদ। সংসদে আমি অনেক বক্তব্য দিই। তার দু-একটি কথা ধরে অনেকেই এটার সমালোচনার ঝড় তুলেছেন, এই কষ্টের মধ্যে। কারণ বিদ্যুৎ থাকছে না, বিদ্যুতের কষ্টটা সবাই পাচ্ছি, সেটা কম-বেশি। সবার ঘরেই আজকে এ সমস্যা আছে।’
মমতাজ বলেন, ‘এটা সাময়িক সমস্যা। আপনারা জানেন, বিশ্বের কী অবস্থা। কিছু দিন আগে করোনা মহামারি গেল। তার পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের অনেক ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে। বড় বড় দেশও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ তো ছোট্ট একটা দেশ। সেখানে সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি। তার পরও আমাদের এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমি বলব—সেটা যেন আমরা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। সরকার কিন্তু চেষ্টা করছে। আপনারা জানেন— গতকালও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। সংসদে আলোচনা হচ্ছে। যে সমস্যাটা এ মুহূর্তে আছে, এটা সাময়িক। সরকার চেষ্টা করছে সাময়িক এ সমস্যা কাটিয়ে আমরা যেন আগামীতে বিদ্যুতের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারি।’
জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে দেওয়া আগের বক্তব্য প্রসঙ্গে মমতাজ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কেন বলেছিলাম সংসদে? তা আপনারা জানেন। এটা তো মিথ্যা কথা নয়, বিদ্যুৎ যে হারে সরকার উৎপাদন করেছে, ঘরে ঘরে লাইন দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে সরকার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই প্রশংসা আমিও করেছি।’
মমতাজ বেগম আরও বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় আগে ৩০ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ ছিল। আমি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনের সময় শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। একসময় এলাকায় গেলে গ্রামের মা-বোনেরা এসে বলতেন—‘আপা, কিছু চাই না। আমাদের বিদ্যুতের লাইন দেন, মিটার দেন। মিটারের অভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’ এই যে একটা সংকট ছিল, তখন সেটা কিন্তু আমরা সমাধান করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ তখন খুশি হয়েছিল। সে জন্য সংসদে বলেছিলাম— মানুষ বিদ্যুৎ চাইত। একসময় এ চাওয়ার ব্যাপারটা আর থাকবে না। সরকার যেভাবে বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে, উৎপাদন করছে, ঘরে ঘরে মিটার পৌঁছে দিচ্ছে। এখন কিন্তু সত্যিকার অর্থে গ্রামে গেলে কেউ বলে না– ‘আপা, দুইটা মিটার দেন, পাঁচটা মিটার দেন।’ মিটার দেওয়ার জায়গা এলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই কিন্তু বাস্তবতা। আর সেই কথাটাই সংসদে আমি বলেছিলাম। সেটার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ভুলভাবে উপস্থাপন করেন অনেকেই। অসাধু কিছু লোকজন খামোখাই দুটো বাজে কথা ফেসবুক-ইউটিউবে বলার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ঢুকে দেখি, হঠাৎ একজন বলছেন মমতাজের বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। কেন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না, সেজন্য ঘেরাও করেছে। এই যে প্রোপাগান্ডা, মিথ্যাচার। এটা নিয়ে আপনাদের বিবেক কি একটুও নাড়া দেবে না? একজন মানুষের বিরুদ্ধে শুধু শুধু এভাবে মিথ্যাচার কেন করছি? আপনাদের বলব–শুধু মানুষকে হয়রানিমূলক কথা বলা, ছোট করা, মিথ্যা বলে তাকে হেনস্তা করা বিবেকবান মানুষের (কাজের) মধ্যে পড়ে না। এ ধরনের প্রোপাগান্ডা থেকে দূরে থাকবেন। মিথ্যাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না। ধৈর্য ধরুন, আমাদের সঙ্গে থাকুন।’
নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জের হবে জানিয়ে নেতাকর্মীদের সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৫ জুন) গণভবনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন, নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ, কারণ নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়।
যারা বাংলাদেশের বদনাম করে তাদের কুলাঙ্গার- আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবন যখন একটু উন্নত হয়, তখনই বাংলাদেশেরই কিছু কুলাঙ্গার আছে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব জায়গায় বদনাম করে বেড়ায়, মিথ্যা বলে বেড়ায়। আর কিছু আছে বিদেশি অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন করেছে, তারা আছে, তাদের আওলাদ আছে, তারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতার সময় আমাদের সমর্থন করেনি, তাদের কাছেই তাদের সব আত্মীয়তা। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য।
নির্বাচনে কারচুপি করা বিএনপির অভ্যাস মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভোট চুরি করা এটাই তাদের রেকর্ড। গণতন্ত্র হরণ করা এটাই তাদের রেকর্ড। তো ওদের মুখে এখন আবার আমরা গণতন্ত্র শুনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে তৈরি দল, তাদের কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। তাদের কাছে ভোটের কথা শুনতে হয়। তো চুরি করা যাদের অভ্যাস, সেই চোরদের কাছে বাংলাদেশের জনগণ কী শুনবে, কী দেখবে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনেও তো কম কারচুপি হয়নি। ১৯৯৬ সালে এই খালেদা জিয়াকেই বাংলাদেশের মানুষ ভোটচুরির অপরাধে বিতাড়িত করেছে। আবার ২০০৬ সালে নির্বাচনে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটচুরি করতে গেছে, তখনও জনগণের আন্দোলনেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে দলটির প্রধান বলেন, আমাদের সংগঠনটা যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠনটা যেন আরও মজবুত থাকে, ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দিনের পর দিন কারাবরণ, অত্যাচার, নির্যাতন, তারপর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধ করে যুদ্ধাহত হয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ- এখানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা, স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা, জয় বাংলা মুছে ফেলা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলা, অনেক অপকর্মই করা হয়েছে। আসলে সত্য এক সময় না এক সময় উদ্ভাসিত হবেই। সত্য কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজ সেটাই হয়ে গেছে।-বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখনো ইউরোপের দেশগুলোর মতো দুরবস্থায় পড়েনি, পড়বেও না।
রোববার সকালে চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন।
ইউরোপের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, গত শীতের সময় ইউরোপের দেশগুলো; তারা গরম পানি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সব কিছু ইলেকট্রিসিটিতে চলে। গরম পানি বন্ধ, হিটিং বন্ধ— এ রকম তাদের দুরবস্থা। এমনকি বাজারে গেলে সীমিতভাবে কিনতে হবে। একটি পরিবার ছয়টির বেশি ডিম কিনতে পারবে না। ১ লিটারের বেশি তেল কিনতে পারবে না, ৩টার বেশি টমেটো কিনতে পারবে না—ঠিক এই অবস্থাটা। বাংলাদেশ এখনো সেই দুরবস্থায় পড়ে নাই, ইনশাআল্লাহ পড়বেও না। তবে সেখানে আমাদের দেশের মানুষকে একটা কাজ করতে হবে, আমি বারবার যেটা বলছি— আমাদের যত অনাবাদি জমি আছে সব জমি চাষ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যত জলাধার আছে সেখানে মাছের চাষ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বাংলাদেশে বাজেট দিয়েছি। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। আর ১ জুন আমরা যে বাজেট দিয়েছি, সেটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট। বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা তা পারব। আওয়ামী লীগ পারবে।
তিনি বলেন, আমি জানি অনেকে অনেক কথাই বলার চেষ্টা করেন; কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে চিনি, জানি, আর এই বাংলাদেশের মানুষের অবস্থাটাও আমাদের জানা। অবশ্য ঢাকা শহরে বসে… আমরা এখন বিদ্যুৎ দিয়েছি, সেখানে এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে; আমি এতগুলো টেলিভিশন বেসরকারি খাতে খুলে দিয়েছি, সেখানে বসে টকশোর সুবিধা পাচ্ছেন। ভালোমতো টকশোও দিচ্ছেন এবং আমরা যা কাজ করি, সেখানেই একটা সমালোচনা, সেখানেই একটা কিন্তু খুঁজে বেড়ানো। আর মানুষকে হতাশ করার কতগুলো কথা বলে বেড়ায়।
তিনি আরও বলেন, আর বাংলাদেশের বদনাম বিদেশিদের কাছে বলে বলে নিজেরা সেখান থেকে বোধ হয়…কী পায় আমি জানি না। কিছু হাদিয়া-টাদিয়া জোগাড় করে কিনা তাও বলতে পারব না কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলেই তারা যেন তৃপ্তি পায়। যারা এসব বলছেন এবং বাজেট দেওয়ার পরেই তারা প্রতিবারই বলেন, এটা সম্ভব না, এটা করতে পারবে না—আমরা কিন্তু সেটা করি এবং করে দেখাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস এবং বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। তার ওপর স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশনের ফলে সারা বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটা পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। আমাদের জ্বালানির মূল্য বেড়েছে, গ্যাসের মূল্য বেড়েছে, খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে, গম-চিনি যা কিছু আমরা কিনতে যাচ্ছি, সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে, পরিবহণ বেড়ে গেছে, সঞ্চালন বেড়ে গেছে। এমনকি বিদেশে আমরা যে ঋণ নিয়েছি, তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের অর্থনীতির ওপর একটা চাপ আছে। সেটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নিজেদেরও কিছু উদ্যোগ আছে।
তিনি বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দেব— প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম; কিন্তু আজকে সারা বিশ্বব্যাপী গ্যাস-তেল-কয়লা সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়াতে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও কেনা যাচ্ছে না এ রকমই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। যার জন্য… আমি জানি, এই গরমে মানুষের একটু কষ্ট হচ্ছে। একদিকে মূল্যস্ফীতি আর অপরদিকে এখন বিদ্যুৎ নেই— এই দুটি কষ্ট আমার দেশের মানুষ পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর একবার যদি পাংখায় বাতাস খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যায় তারপরে না পেলে তো আরও কষ্ট হয়! এটাও তো বাস্তব কথা। অভ্যাস হয়ে গেছে এখন পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু যুদ্ধটা যদি না বাধতো আর স্যাংশন যদি না থাকত তাহলে আমাদের কোনো অসুবিধাই হতো না। আমরা ঠিকই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। আজকে যুদ্ধের কারণেই কিন্তু সারা বিশ্বব্যাপী…প্রত্যেকটা দেশই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে।
কয়লার অভাবে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। সোমবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে দেশের বৃহত্তম এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়।
১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় আজ।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডলার-সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের। নতুন করে কয়লা এলে চলতি জুন মাসের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আবার উৎপাদনে ফিরতে পারে।
তিন বছর আগে উৎপাদনে আসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারপর এবারই প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। এতে লোডশেডিং আরও বাড়বে।
এর আগে ডলার-সংকটে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন উৎপাদনে রয়েছে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় রয়েছে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসি)।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সে হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আগামী ১২ জুন জাহাজে কয়লা তোলার কথা।
আজ দুপুরে পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম।
তিনি বলেন, বকেয়ার ১০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর আস্থা রেখে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে যাচ্ছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। যত দ্রুত কয়লা আনা যায়, তার চেষ্টা চলছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বা পরামর্শের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে এবার রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী।
রীতি অনুযায়ী (শুক্রবার) ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
আইএমএফের শর্ত মেনে বাজেট হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি তাদের শর্ত বা পরামর্শ মোতাবেক আমরা আমাদের বাজেট করি নাই।
তিনি বলেন, ‘তাদের (আইএমএফ) যে পরামর্শ আছে সেটা আমরা পুরোপুরি দেখি না। তাদের সার্বিক পরামর্শ যা আছে, যা তারা বলে, সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি সেটুকু আমরা গ্রহণ করব, বাকিটা আমরা নিজেদের মতো করে নেব। সেখানে তাদের কোনো আপত্তি নাই।’
তবে আইএমএফের সঙ্গে কাজ করাকে ভালো হিসেবেই দেখছেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘কেবল আইএমএফ না, সবাই দেখে ব্যালেন্স শিট ঠিক আছে কিনা, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কিনা, ট্রায়াল ব্যালান্স ঠিক আছে কিনা, আয়-ব্যয়ের পার্থক্য ঠিক আছে কিনা।’
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু আমাদেরটা না, সবারটাই দেখে, আর এই দেখাটা ভালো। আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমি মনে করি এটা ভালো দিক এজন্য যে, তারা শুধু অর্থ দিয়ে মানে লোন দিয়ে সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের পরামর্শ দেয়। সেগুলো কীভাবে কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, এগুলোও তারা পরমার্শ দেয়। তাই আমি মনে করি, এসব থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে এবং আমরা সমৃদ্ধ হই।’
দুই মাস পর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুন) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫১৫ জনের নমুনা শনাক্ত হয়। এ সময় ৮৯ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮৭। সুস্থ হয়েছেন ১২ জন। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়।
দেশে ৬৬ দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২৮ মার্চ সর্বশেষ করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল।
দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। সর্বশেষ গত ২২ থেকে ২৮ মে এক সপ্তাহে করোনা শনাক্তের হার এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৩৩ শতাংশ বেড়েছে। তার আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ১৫ থকে ২১ মে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্ত বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭।
দেশে এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৫০৬ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ৬ হাজার ৩১৩ জন। আর মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৪৮ জন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। আর করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ওই মাসের ১৮ তারিখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামের সোনালি যুগে বিশ্বসভ্যতা, জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোল শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানদের অবদান এক গৌরবময় ইতিহাস গড়েছিল। মুসলমানরা সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। সেই মুসলমানরা এখন কেন পিছিয়ে পড়ল, তা আমাদের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (৩০ মে) ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমানে বিনিয়োগ করতে হবে।’
সলমানদের যথেষ্ঠ পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি- আমরা এটা করতে পারব।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি- এ হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, `আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ।’
তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন- যাতে করে তারা এক্ষেত্রে আরো অবদান রাখতে পারেন।’
৪র্থ শিল্প বিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অফ থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসি’র মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কবির পরিবার, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শ্রেণিপেশার সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে নজরুলজয়ন্তী পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সকালে কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। গণমানুষের প্রিয় কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী।
আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে—তাকে সত্যিই ভোলা যায় না। বাংলা সাহিত্যের ধ্রুবতারা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্পে বাঙালি জেনেছে বীরত্বের ভাষা, দ্রোহের মন্ত্র।
বাঙালির সব আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে আছেন তিনি। আজ তার ১২৪তম জন্মজয়ন্তী। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধু চেতনার শানিতরূপ।’
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে। আমি বিশ্বাস করি, নজরুলের রচনা আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে সব কূপমণ্ডূকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেছেন এবং বেশিরভাগ গানেই তিনি সুরারোপ করেছেন।
এ গানগুলো নজরুল সংগীত নামে পরিচিত। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম দুখু মিয়া। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি ১৯০৮ সালে বাবাকে হারান।
অল্প বয়স থেকে কাজী নজরুল লোকসংগীত রচনা শুরু করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কর্মজীবনের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারের পদে উন্নীত হন। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন। ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে তিনি সারা ভারতে সাড়া ফেলেন। একই বছর ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত এবং কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে তাকে কলকাতায় নেওয়া হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে কাজী নজরুল জবানবন্দি দেন। তার এ জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ সাহিত্য মর্যাদা লাভ করেছে।
১৯২১ সালের মাঝামাঝি কুমিল্লার প্রমীলা দেবীর সঙ্গে কাজী নজরুল প্রণয় থেকে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে নজরুল বাকশক্তি হারান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালে তাকে বাংলাদেশে আনা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কর্মসূচি : বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিদ্রোহী কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান বিকাল ৩টায় নজরুল স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে অনুষ্ঠিত হবে। তিন দিনের এ আয়োজন উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। স্মারক বক্তৃতা করবেন প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। সম্মানীয় বক্তা হিসাবে থাকবেন জাতীয় কবির দৌহিত্রী খিলখিল কাজী। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি।
ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। নজরুল মেলা, নজরুল বিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎসবমুখর করতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করবে।
জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ছায়ানটসহ নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।