কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক: সূর্যমুখী (Sunflower) এর বৈজ্ঞানিক নাম Hellianthus annus. যা মূলত তেল জাতীয় ফসল। সূর্যমুখীর বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ উপকারী লিনোলিক এসিড রয়েছে এবং ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশের চাষীরা এর আবাদ শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলাগুলোতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। ইদানিং কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহায়তায় সারা দেশেই ব্যাপক আকারে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে৷ সূর্যমুখী চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।
জমি তৈরি: সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ দিতে হয়। জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
জাত নির্বাচন: সূর্যমুখীর কিরণী (ডিএস-১), বারি সূর্যমুখী-২৷ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি একরে ৬০০-৮০০ কেজি ফসল পাওয়া যায়। বর্তমানে প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ নামে হাইব্রিড বীজ ব্র্যাক কর্তৃক বাজারজাত করন হয়, যা কিছুটা বৃষ্টি সহনশীল৷ যার ফলন একরে ১৫০০ কেজি৷ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ১১০- ১২০ দিন সময় লাগে।

বপন পদ্ধতি ও বীজের হার: সূর্যমুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০/৭৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫/৪৫ সে.মি. রাখতে হয়। এভাবে বীজ বপন করলে একর প্রতি ২-৩ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সার প্রয়োগ: একর প্রতি জৈব সার ৩০০০ কেজিইউরিয়া ৭০ কেজি,একর প্রতি টিএসপি ৫০ কেজি,একর প্রতি এমওপি ৪০ কেজি,একর প্রতি জিপসাম ৪০,একর প্রতি জিংক সালফেট ৩ কেজি,একর প্রতি বোরন ৪ কেজি৷ ইউরিয়া সারের অর্ধেক এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই ভাগ করে প্রথম ভাগ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০-৪৫ দিন পর বা ফুল ফোটার আগে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বীজ বপনের ৩০, ৫০, ৭০ দিনের মাথায় সেচ দিতে পারলে ফলন ভালো হয়৷
রোগবালাই ও প্রতিকার: আমাদের দেশে সূর্যমুখীর বিছা পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়৷ নাইট্রো ২ গ্রাম/১ লি পানি আকারে স্প্রে করলে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
রোগের মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অলটারনারিয়া হেলিয়াস্থি নামক ছত্রাকের আক্রমণে সূর্যমুখীর এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রথমে পাতায় ধূসর বা গাঢ় বাদামি বর্ণের অসম আকৃতির দাগ পড়ে। পরে দাগ মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। অবশেষে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়।
এছাড়াও সূর্যমূখীর আকেটি রোগ হল শেকড় পচা রোগ। সাধারণত স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের গোড়া সাদা তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং গোলাকার দানার মত স্কেলেরোশিয়াম দেখা যায়। প্রথমে গাছ কিছুটা নেতিয়ে পড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে সমস্ত গাছ ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে কমপ্যানিয়ন/রোভরাল-৫০ ডবি্লউ পি (২% হারে)/ডাইথেন এম-৪৫/রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/১ লি পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে যায়। সূর্যমুখীর শিকড় পচা রোগের প্রতিকার হিসেবে প্রোভ্যাক্স বা কার্বেন্ডাজিম এর সাহায্যে মাঠ শোধনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।
ফসল সংগ্রহঃ বপন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১২০ দিন লাগে ফসল সংগ্রহ করতে।

স্বাস্হ্য উপকারিতাঃ সূর্যমুখী তেলে আলফা-টোকোফেরল নামে এমন এক ধরনের উপাদান রয়েছে যেটা গ্রহণের ফলে শ্বাসরোগ কমে আসে।এটি হৃদ্রোগ, অ্যাজমা ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।*সূর্যমুখীর তেলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকে, যা আমাদের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।*এই তেলে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, যা মানসিক চাপ কমায়।*শরীরের ওজন কমানোর জন্য রান্নায় আজকাল এই তেল বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।*আমি নিয়মিত রান্নার তেল হিসেবে গ্রহন করি, সামর্থ্য থাকলে আপনিও খেতে পারেন৷
পরামর্শের জন্যঃ কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি ইউনিট পিকেএসএফ এবং সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা৷ ইমেইলঃ 01717422344s@gmail.com
ড. প্রণয় বালা: পাটের অন্যতম প্রধান শত্রু বিছা পোকা । বিছা পোকার আক্রমণে পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয় থাকে । আসুন জেনে নেয়া যাক এ বিছা পোকা হতে সাবধানতা ও আক্রমণ হলে কী করতে হবে ।
বিছা পোকার জীবন চক্র ও পরিচিতি:
কীড়ার ৬টি ধাপ রয়েছে যার প্রতিটিই পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। মথ সরাসরি কোন ক্ষতি করে না বরং বংশবৃদ্ধি করে। প্রথম ধাপের বয়স ১-৩ দিন, ২য় ধাপের ৪র্থ-৬ষ্ঠ দিন, ৩য় ধাপের ৭ম-৯ম দিন, ৪র্থ ধাপের ১০-১৩ দিন, ৫ম ধাপের ১৪-১৭ দিন এবং ৬ষ্ঠ ধাপের বয়স ১৮-২০ দিন । এরপর পিউপা অবস্থায় ৯-১০ দিন শুকনো পাতা বা মাটির গর্তে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। মধ্য মে ( বৈশাখের মাঝামাঝি) হতে আগস্টের শেষ পর্যন্ত (ভাদ্রের প্রথম) সময়ে এ পোকার আক্রমণ হয়। বিছা পোকা বাচ্চা অবস্থায় হলুদ বা হালকা সবুজ রংয়ের হয়। পূর্ণাঙ্গ বিছা পোকা ১.৫ ইঞ্চি লম্বা, কমলা বা গাঢ় হলুদ রংয়ের। বিছা পোকার গায়ে শুয়ো গুচ্ছাকারে সাজান থাকে। পূর্ণাঙ্গ বিছা পোকা মাঝারি হালকা রং এর মথ এবং এদের পাখায় কালো ফোটা থাকে।
বিছা পোকার ক্ষতির ধরণ:
পাটের বিছা পোকার (Spilosoma obliqua) স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে গাদা করে ডিম পাড়ে। ডিমের রং সবুজ।ক্রমশ এটি বাদামী রংয়ের হয়। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর প্রায় ৬-৭ দিন পর্যন্ত পাতার উল্টো দিকে দলবদ্ধভাবে থাকে।পরে এরা সারা মাঠ ছড়িয়ে যায় । বিছা পোকার কীড়াগুলো পাতার উল্টো পিঠের সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মত করে ফেলে। আক্রান্ত পাতা দূর থেকে দেখে সহজেই চেনা যায় এবং জমির পুরো পাতা খেয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।আক্রমণ ব্যাপক হলে বিছা পোকা পাটের কচি ডগা পর্যন্ত খেয়ে গাছকে পাতাশূণ্য করে ফেলে। গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং আঁশের ফলন কম হয়। আক্রমনের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে একর প্রতি ৫ মন পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে।
দমন ব্যবস্থা:
বিছা পোকার আক্রমণের পূর্বে করণীয়:
পাট ক্ষেতের আশে পাশে বা অন্য আগাছা থাকলে তা পরিস্কার করে ফেলতে হবে । বিছা পোকা যাতে এক খেত হতে অন্য খেতে ছড়াতে না পারে সে জন্য প্রতিবন্ধক নালা তৈরী করতে হবে
বিছা পোকার আক্রমণের পর করণীয়:
প্রাথমিকভাবে পাটের পাতায় ডিমের গাদা বা কীড়া তুলে পায়ে মাড়িয়ে বা গর্তে চাপা দিয়ে মারা বা কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে (১:২০) ডুবিয়ে মেরে ফেলা।
মথ দমনের জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা ।
উপরের উপায় সমূহ অবলম্বন করেও যদি বিছা পোকা দমন করা না যায় তবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
পাট গাছের উচ্চতা ৩ ফুট পর্যন্ত প্রতিগাছে ২টি এবং ৪ ফুট পর্যন্ত ৪টি বিছাপোকা দেখা গেলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।
যেমন: ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন ((Lambda-cyhalothrin) গ্রুপের ক্যারাটে ২.৫ ইসি; অথবা জুবাস ২.৫ ইসি; অথবা ফাইটার প্লাস অথবা রিভা ২.৫ ইসি @ ১ মিলি/লি. হারে পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে;
অথবা ** কার্বারিল গ্রুপের সেভিন ৮০ wp (ap-৩৩৮) ভিটাব্রিল ৮৫ wp @ ৩.৪ গ্রাম/লি. পানি হারে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
অথবা ** সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কট ১০ ইসি (এপি-৬৩৯); অথবা রিপকর্ড ১০ ইসি; অথবা সিমবুশ ১০ ইসি; অথবা শেফা ১০ ইসি (এপি-১০৭৯) @ ১ মিলি/লি. পানি হারে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে ।
কিছু পরজীবী পোকা যেমন-এ্যাপানটেলিস অবলিকুয়া, ইউরিটোমাএবং ট্রাকিনিড মাছি প্রয়োগ করেও বিছা পোকা দমন করা যায়। মাঠে রেজীবী পোকা ব্যবহার করার সময় অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
ড. প্রণয় বালা, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, হাজী লালমিয়াসিটি কলেজ, গোপালগঞ্জ।
মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান: ছেলেমেয়েদের কৃষক হতে বলুনঃ-
অন্য কোনো পেশায় সুখ নাই, শুধুই হয়রানি।
একটা হিসাব করে দেখলাম, দুনিয়া সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত কৃষক কে কেউ টপকাতে পারে নাই। যেমন বড় বড় বৈজ্ঞানিক, বুদ্ধিজীবী, বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়া,সুদখোর, ঘুষখোর, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক নেতা,রাষ্ট্রদূত, রাষ্টপতি, সন্ত্রাসী, সবাই ই কৃষি পণ্য খেয়ে বেঁচে থাকেন।যে যত অকাজ কুকাজ ই করুক না কেন কৃষকের কাছে সবাই ধরা।মোনাফেকরা যেমন মসজিদে যায় তেমনি হারামখোরেরাও ভাত খায় ।
আমি মানুষকে ভালো কথাই বলি তারপর ও ফেইসবুক আমার আইডি বন্ধ করে রাখে। এবার ও তিন দিন বন্ধ রাখলো। পয়সা খরচ করে জনসেবা করি তাও তাদের সহ্য হয় না।
বৈজ্ঞানিকরা কেমন মুর্খ।মানুষ হত্যা করবার জন্য নিজের দেশের টাকাপয়সা খরচ করে অস্ত্র বানায় আবার সারাজীবন বেঁচে থাকে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য খেয়ে। কেন যুদ্ধাস্ত্র খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে না? যে জিনিস কোনো উপকারে লাগে না তা মানুষ কেন বানায়!
অথচ এসব বাজে খরচ না ক’রে যদি শুধুই কৃষিকাজ করতো তা হ’লে মানুষের কোনো অভাবই থাকতো না।
যে লোকটা বাহাত্তর ঘন্টা টানা মোবাইল টিপাটিপি করে তার ও ওয়াক্তমত খেতে হয়। অর্থাৎ কৃষি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।
আমাদের দেশের মানুষগুলো কেমন বোকা, নিজের দেশের জমিজমা,স্ত্রী, শ্যালিকা,ভাবী সব ফেলে রেখে বিদেশে চলে যায় বিদেশী জমিজমা চাষ করতে।সেই খাদ্য আবার সেই দেশের পারিশ্রমিক হিসেবে পাওয়া ডলার দিয়ে আমরা আমদানি করে খাই। সারাজীবন গায়ে খেটে টাকা পাঠান স্ত্রীর নামে। নিজের তো জৈবিক চাহিদা বলতে কিছুই থাকে না কামলা খাটতে খাটতে।এদিকে স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা খালি বাড়তে ই থাকে।বাড়বে না কেন, বিদেশী পয়সায় বসে বসে খাওয়া। গতরের গোস্ত তো কন্ট্রোল করা যায় না ।কেউ কেউ গোপনে আরো কয়েকটা পরোকিয়াও করেন,ফেইসবুকে যা নিয়মিত দেখতে পাই। কাজকাম তো নাই, কি করবে। শরীরের একটা চাহিদা আছে না!মনে চাহিদা সবকিছু মিলিয়ে এক্কেবারে জগাখিচুরি।
মানুষের যদি বোধ শক্তি থাকতো তাহলে সবাই ই কৃষি কাজ করতো। পড়াশোনা করতো কৃষি নিয়ে। কারণ আপনি একমাত্র কৃষি কাজ করলেই নিজে ভালো খেতে পারবেন। এ ছাড়া যত বড় বড় কাজ করেন না কেন তার সুফল ভোগ করবে পেটি বুর্জোয়া, সুদখোর, ঘুষখোরেরা।
যারা নির্মাণ শ্রমিক, তাঁরা দালান তৈরী করেন কিন্তু বসবাস করেন বুর্জোয়ারা। আপনি কম্পিউটার বিজ্ঞানী কিংবা ইঞ্জিনিয়ার , ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিংবা ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, রিকশাচালক কিংবা বিমানচালক ; লাভ নাই। আপনার স্ব-শ্রমের সুফল ভোগ করে বুর্জোয়া, সুদখোর, মুনাফাখোরেরা।এসব কোনটা ই না করে যদি কৃষি কাজ করতেন তাহলে আপনার শ্রমে উৎপাদিত পণ্য আপনি আগে ভোগ করতে পারতেন।

সামনে দুর্ভিক্ষ হবে। সেই দুর্ভিক্ষে দুর্ভাগারা আগে মরবে,যাঁরা কামলা খেটে বাটপারদের হাত মজবুত করে দিচ্ছেন। এখনো সময় আছে কৃষি কাজ করুন। আমি নিজেও তাই ভাবছি। যাদের জমিজমা কিছু আছে এখনই নেমে পড়ুন অন্তত প্রাণে বেঁচে যাবেন। আপনার টাকা কেউ মেরে খেতে পারবে না। স্ত্রী ও আপনার সঙ্গে কাজবাজ করতে পারবেন।কৃষকের স্ত্রী স্যার হওয়ার স্বপ্ন ও দেখবেন না কিংবা কোনো স্যার ও কৃষক কে বিবাহ করতে আসবেন না। আপনার শ্রমের মর্ম বুঝতে পারবেন আপনার স্ত্রী। রান্না করে খাওয়াবেন হয়তো। পরকীয়া টরকীয়া করবার সময় ও কম পাবে। খাঁটি খাদ্য খেতে পারবেন । নিজের যতটুকু লাগে তা আগেই মজুদ রাখতে পারবেন।
সরকারি কর্মচারীদের একসময় চাকরি থাকে না।এমন এক দিন আসবে সরকারি কর্মচারীদের টাকা চেটেচেটে বেঁচে থাকতে হবে। খাদ্য আর কপালে জুটবে না। কৃষকের চাকরি কখনো ই যায় না।
এমন একটা দিন আসবে, যেদিন ডলার ভিক্ষা দিলেও ভিক্ষুক নিবেনা ।
মেয়ে থাকলেও তাদের বিয়েশাদি হবে না। কারণ পুরুষদের মন থেকে বিশ্বাস জিনিসটা ই এখন নাই। ভবিষ্যতে আরো থাকবে না। তাঁরা জঞ্জাল ঘরে আনবে না। মহিলারা কাজকর্ম করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে, ভালোভাবে খেয়ে চলতে ফিরতে পারবে এটা ঠিক কিন্তু সংসার ব’লে কিছু থাকবেনা।
কৃষি সংস্কৃতি আবার গড়ে উঠলে সংসার গুলোও ভেঙে খানখান হবে না।মানুষগুলো গ্রাম মুখী হবে। এমন দিন খুব কাছেই। উন্নত দেশগুলো খাদ্য রপ্তানি করবে না। এখন ই আমাদের গ্রাম মুখী হতে হবে।
এই পেশায় প্রতিযোগিতা কম খাবার বেশী।
ড. এইচ. এম. মনিরুজ্জামান: পুঁইশাক সকলের কাছে একটি জনপ্রিয় শাক। দেশের প্রতিটি হাট-বাজারে প্রায় সারা বছরই পুঁইশাক পাওয়া যায়। এ শাকের পুষ্টিগুণও অনেক। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘বি`, ‘সি` ও ‘এ`। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ আছে। নানা ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ এই শাকটি একদিকে যেমন বহুবিধ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, অন্যদিকে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পুঁইশাককে কেউ কেউ শাকের রাজা বলে থাকেন। সঠিক পদ্ধতিতে পুঁইশাক চাষ করলে তুলনামূলক অন্যান্য সবজির চেয়ে লাভজনক হয়। বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি কিংবা বস্তাতেও খুব সহজে এর চাষ করা যায়। গরম, আর্দ্র আবহাওয়া ও রোদেলা স্থানে পুঁইশাক ভালো জন্মে।
সব ধরনের মাটিতেই পুঁইশাক চাষ করা যায়। তবে পুঁইশাক বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো হয়। তাই বাণিজ্যিকভাবে পুঁইশাক চাষের ক্ষেত্রে দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।
সাধারণত সাদা ও লাল এই দুই ধরনের পুঁইশাক আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তবে বারি পুঁইশাক-২ নামে জাতটি উচ্চ ফলনশীল । চারা অবস্থায় পুরো গাছ সবুজ রং এর। পাতা বড়, নরম ও সবুজ বর্ণের হয়। মধ্যম শাখা প্রশাখা যুক্ত, কান্ডটি (শাখা) বেশ মোটা ও মাংসল এবং ঘন ঘন পাতা সংগ্রহপযোগী।
জমির আগাছা পরিষ্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁইশাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।
শুরুতে ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ৩ ভাগে ভাগ করে চারা লাগানোর ৭-১০ দিন, ৩০ দিন ও ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। আর যদি মাচায় জন্মায় তা হলে ৭-৮ মাস ব্যাপী ফসল সংগ্রহ করা হয় সে ক্ষেত্রে প্রতিবারই ডগা কাটার পর অল্প পরিমাণ ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগ করা উচিত।
পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হলো,- গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।
বর্ষায় সাধারণত সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে। পুঁই ক্ষেতের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে।
চারা ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে, এতে গাছ ঝোপালো হয়। পুঁইশাকের ডগা লম্বা হতে শুরু করলেই ডগা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে ডগা কেটে সংগ্রহ করলে নতুন ডগা গজাবে। নতুন ডগা কয়েকবার কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিবার গোড়ায় এক ফুট রেখে ডগা কাটতে হয়।
বেশি ফলন পাওয়ার জন্য ফসল কাটার পর অনুমোদিত মাত্রায় ইউরিয়া এবং এমপি সার উপরি প্রয়োগ করে একটি হালকা সেচ দিতে হবে। শাক হিসেবে ব্যবহারের জন্য ১০-১২ টি পাতাসহ কচি ডগা সংগ্রহ করা যেতে পারে। ভালোভাবে চাষ করলে প্রতি শতকে ১৩০-১৫০ কেজি পুঁইশাকের ফলন পাওয়া যায়।
পুঁইশাকে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। তবে পাতার দাগ (বীজ বাহিত) ও কান্ডের গোড়া পচা রোগের আক্রমণ দেখা যায়। পাতার দাগ রোগের ফলে শাকের গুণগত মান ও বাজার মূল্য কমে যায়।
কান্ডের গোড়া পচা রোগের কারণে পুঁইশাকের গোড়া পচে যায় ফলে মরে যায়। রোগ মুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করলে রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রনে থাকে। ব্যাভিস্টিন বা নোইন (ছত্রাকনাশক) ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
ড. এইচ. এম. মনিরুজ্জামান
উপপরিচালক (সম্প্রসারণ), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা।
ড. নূরুল হুদা আল মামুন: মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, তথা রায় উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে খাদ্যের নিরাপত্তা জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। পৃথিবীতে মাথাপিছু ক্যালোরির এক বিরাট অংশ আসে মাটিতে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকারের শস্য থেকে। অনেক আমিষজাতীয় খাবারের উৎস (গরু, ভেড়া, ছাগল) পরোক্ষভাবে মাটির ওপরই নির্ভরশীল। হিসাব করে দেখা গেছে, মাথাপিছু ক্যালোরির প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মাটি থেকে আসে।
এ কারণে মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বিষয়টা মায়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্কের মতো। মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ মাটিরূপী মায়ের স্বাস্থ্য দিনদিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ ১০ সেমি মাটির উন্নয়ন করতে প্রায় ২০০০ বছর সময় লাগে।
প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বস লিখেছে, ‘পৃথিবীতে খুব দ্রুত মাটির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার সংবাদ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ। পুষ্টিকর ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ভালো ও সুস্থ মাটি।’ বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৩৮ শতাংশ ভূপৃষ্ঠ কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মৃত্তিকা সম্পদ পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত প্রতিবেদন (২০১৫) অনুযায়ী মাটি নষ্ট হওয়াকে পরিবেশ ও কৃষির জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে অভিহিত করা হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে ইতিমধ্যে বিশ্বের ৩৩ শতাংশ মাটি অবক্ষয় সাধিত বা ডিগ্রেডেড হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন। আগামী ২০ বছরে ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি করতে হবে।
দেশে নিট ফসলি জমি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর, যা আগামী দিনের খাদ্য উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে শস্যের একরপ্রতি উৎপাদন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া নতুন ঘরবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তৈরি, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজে আবাদযোগ্য জমি বছরে প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর কমে যাচ্ছে।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে ক্রমাগত ফসল ফলানোর কারণে এবং মাটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের পুষ্টিকর অংশ তুলে নেওয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে ফসলের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মৃত্তিকা সম্পদ এখন হুমকির মুখে রয়েছে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে—দেশে সব ধরনের বিশেষ করে আবাদি, বনভূমি, নদী, লেক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সুন্দরবন ইত্যাদি এলাকা মিলিয়ে জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ফসফরাস ঘাটতিযুক্ত এলাকার পরিমাণ ৬৬ লাখ হেক্টর, যা মোট জমির প্রায় ৪৫ শতাংশ।
অন্যদিকে পটাশিয়ামের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫২ লাখ ৭০ হাজার বা ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশে। সালফারের ঘাটতি রয়েছে ৬৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর বা ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ এলাকায়। এর বাইরে বোরনের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫১ লাখ ১০ হাজার হেক্টরে (মোট জমির ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ)। জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর বা মোট জমির প্রায় ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশে। এছাড়া অনেক জমিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের অভাব।
উদ্ভিদের বেঁচে থাকা এবং জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে ১৭টি পুষ্টি উপাদান অবশ্যই প্রয়োজন। এসব পুষ্টি উপাদান হলো :কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কপার, মলিবডেনাম, বোরন, ক্লোরিন ও কোবাল্ট। কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন আলোর উপস্থিতিতে গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড সংগ্রহ করে পানির সাহায্যে খাদ্য তৈরি করে।
বাকিগুলো শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে গ্রহণ করে থাকে। ক্রমাগত হারে ফসল চাষ করার ফলে মাটি থেকে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো আস্তে আস্তে কমে একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে ফসলের খাবার জোগান দেওয়ার জন্য জমিতে কৃত্রিম উপায়ে সার হিসেবে খাবার দেওয়া দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে সারের ব্যবহার একেবারেই সুষম নয়। বেশিরভাগ কৃষক জৈবসার কম ব্যবহার করে থাকেন, যার ফলে মাটি রুগ্ণ হয়ে যাচ্ছে।

যে কারণে, পরবর্তী সময়ে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগে ফসলের বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত হয় না। উদ্ভিদের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, ফসলের দানা পুষ্ট হচ্ছে না, শীত-খরায় সহনশীলতা কমে যাচ্ছে।
মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে এবং ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম সার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জোরদার করা অতীব প্রয়োজন। মাটি পরীক্ষা করে সুপারিশভিত্তিক সারের মাধ্যমে চাষাবাদ করলে একদিকে মাটির স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা করা যায়, তেমনি ২০-২৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।
এজন্য মাটি পরীক্ষা ছাড়াও সারের গুণমান নিশ্চিত করা, ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষা করে তাত্ক্ষণিক বিভিন্ন ফসলের জন্য সুষম সার সুপারিশ প্রদান করা, মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ যোগ করা ও ফসলের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা উচিত। এর পাশাপাশি ভূমিক্ষয় রোধের সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে মাটির অম্লমান বজায় রাখা জরুরি। অম্লমান নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিক অম্লীয় মাটিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা দরকার। মাটিতে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা থাকলে পানি নিষ্কাশন করতে হবে। অধিক লবণযুক্ত মাটিতে লবণমুক্ত পানি দ্বারা সেচ প্রদান করতে হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
লেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, কৃষি মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক গবেষণাগার, ফরিদপুর
‘মৃত্তিকা: খাদ্যের সূচনা যেখানে’ প্রতিপাদ্যেকে সামনে রেখে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত ও জেলা প্রশাসন রাজবাড়ী এর সহযোগিতায় রাজবাড়ী জেলায় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ উদযাপিত হয়েছে।
সকালে র্যালি ও পরবর্তীতে রাজবাড়ী জেলায় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ উদযাপিত লোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব আবু কায়সার খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য পেশ করেন এস এম সহীদ নূর আকবর,উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজবাড়ী।

আলোচনা সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সভাপতিত্ব করেন ড.মোঃ নুরুল হুদা আল মামুন, প্রধান কর্মকর্তা কর্মকর্তা, এসআরডিআই, আঞ্চলিক গবেষণাগার, ফরিদপুর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইশতিয়াক আহমেদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা উপজেলা পর্যায়ের কৃষি ও অন্যান্য সেক্টরের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ, কৃষক ও জনসাধারণ।
বক্তব্যে মাটির স্বাস্থ্য, টেকসই কৃষি, মৃত্তিকা দূষণ, ভূমি শ্রেণীর ব্যবহার সর্বোপরি মাটির গুরুত্ব উঠে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ১ ইঞ্চি মাটিও যেন কৃষি উৎপাদনের বাইরে না থাকে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনায় দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত দুর্বল ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। পাশাপাশি তিনি দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কারিকুলাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
সোমবার বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার, সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
রাজধানীর কেআইবি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অধিক ফসলের জন্য সার ব্যবহার করছেন, সেটার জন্য মাটির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটির স্বাস্থ্য ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে সেগুলো ভালো ফল দেবে না। আবার ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সারও লাগবে। সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সবকিছুর সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সে দিক থেকে আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব দুর্বল।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্য মাটির কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সে ধারণা নিন। কয়েক বছর আগে নতুন প্রযুক্তি ভার্মিকম্পোস্ট এসেছে। আমি অনেক বিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করেছি এতে নাইট্রোজেনের মাত্রা কত? তারা জানেন না। সেটা খুব দুঃখজনক। আপনাদের উঁচু মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা কৃষিবিদ হয়ে উঠছেন তাদের দুর্বলতা রয়েছে। মাঠের সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কোনো সম্পর্ক নেই। হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এত বড় বড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটিতেও পোল্ট্রি খামার নেই। ডেইরি ফার্ম নেই। তারা শিখবে কীভাবে। কিন্তু বেসরকারি খাত কত বড় বড় প্রকল্প নিচ্ছে। সেখানে গিয়ে তারা কীভাবে সহায়তা দেবে।’
কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়ে বসেন। তাদের কারিকুলাম দিন। কীভাবে পড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই বিসিএসের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি নোট পড়ে কোনোভাবে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। আমি বলছি না, সবাই সেটা করছে। তবে অধিকাংশরা সেটা করছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সবাই সরকারি চাকরি নিতে ব্যস্ত। মানে মাস গেলে বেতন। কোনো দায়িত্ব নেই। কোনো কাজ নেই। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমরা খাদ্য উৎপাদন করি। অন্য সম্পদ আমাদের নেই। এখনও অনেক খাদ্য বিদেশ থেকে আনি। সবকিছু অনেক চ্যালেঞ্জ। সত্যিকার অর্থে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’
কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক: উচ্ছে ও করলা তিতা বলে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। তবে এর ঔষধিগুণ অনেক বেশি। ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও কৃমি সারাতে এগুলো ওস্তাদ সবজি। ভিটামিন ও আয়রন-সমৃদ্ধ এই সবজির অন্যান্য পুষ্টিমূল্যও কম নয়। উচ্ছে ও করলা এ দেশের প্রায় সব জেলাতেই চাষ হয়। আগে শুধু গরমকালে উচ্ছে-করলা উৎপাদিত হলেও এখন জাতের গুণে প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। যেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট, গোলাকার, বেশি তিতা, সেগুলোকে বলা হয় উচ্ছে। বড়, লম্বা ও কিছুটা কম তিতা স্বাদের ফলকে বলা হয় করলা। উচ্ছেগাছ ছোট ও কম লতানো হয়। করলাগাছ বেশি লতানো ও লম্বা লতাবিশিষ্ট, পাতাও বড়। উচ্ছে ও করলা তিতা বলে অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। তবে এর ঔষধিমূল্য অনেক বেশি। ভিটামিন ও আয়রন-সমৃদ্ধ এই সবজির অন্যান্য পুষ্টিমূল্যও কম নয়।
🥦🍄জাতঃ
বারি করলা-২, বারি করলা-৩, হাইব্রিড দিল, রাইডার, গ্লোরি, বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব, প্রাইড-১, প্রাইড-২, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী, এইসএসটিইউ-১, এইসএসটিইউ-২ ইত্যাদি।
🥦🍄উৎপাদন প্রযুক্তি
জমি তৈরি : ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে করলার জন্য জমি তৈরি করতে হবে।
🥦🍄বেড ও মাদা তৈরিঃ
মই দিয়ে জমি সমান করার পর ১ মিটার বা ৩.২৮ ফুট চওড়া করে বেড তৈরি করে তার মধ্যে ৩০ সেমি বা ১ ফুট চওড়া করে নালা কাটতে হবে। জমি যতটুকু লম্বা তত টুকু লম্বা বেড তৈরি করতে হবে। করলার জন্য ১.৫ মিটার বা ৪.৯২ ফুট দূরে দূরে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি মাদার সাইজ হবে দৈর্ঘ্যে, প্রস্থে ও গভীরতায় ৩০ সেমি বা ১ ফুট। বীজ বপনের ৭ থেকে ১০ দিন আগে মাদায় ২/৩ কেজি পচা গোবর বা ১ কেজি কেঁচো সার বা ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও ৩০ গ্রাম ড্যাপ, ১০ গ্রাম পটাশ, ২০ গ্রাম জিপসাম মাদার মাটির সঙ্গে সার মিশিয়ে দিতে হবে। পরবর্তীতে গাছ বড় হওয়ার পর ১৫-২০ দিনের মাথায় এ সার এর পরিমান ৩ গুন করে দিতে হবে মাদা প্রতি৷ ৩০-৩৫ দিনের মাথায় আরেকবার দিতে হবে পাশাপাশি ১০ গ্রাম সলুবোরন ও ১০ গ্রাম লিবরেল জিংক কিংবা চিলেটেড জিংক মাদার চারপাশে রিং করে দিতে হবে৷ ফুল আসার আগে ও পরে ২ বার মিরাকুলান/ ফ্লোরা/ বর্ধন/সিকোগ্রীন /প্রোটোজিম/ক্রপসকেয়ার যেকোন একটি স্প্রে করলে বাম্ফার ফলন বের করা যাবে৷
বর্তমানে আধুনিক মালচিং শিট ব্যবহার করেও অনেক কৃষক ভালো ফলাফল পাচ্ছেন৷
🥦🍄বীজের পরিমাণ :
সাধারণত প্রতি শতকে করলা চাষের জন্য ১৫ থেকে ২০ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজ কিংবা ৯-১০,০০০ চারা প্রয়োজন হয়।
🥦🍄বীজ বপনের সময় : করলার বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস। তবে আগাম ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে করলার বীজ বপন করা যায়।
🥦🍄বীজ বপন :
করলার বীজের ত্বক শক্ত ও পুরু। তাই দ্রুত অঙ্কুরোদগমের জন্য বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ট্রাইকোডার্মা বা প্রোভ্যাক্স বা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/১ লি পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে শোধন করে নিতে হবে৷ প্রতিটি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ ২ থেকে ৩ সেমি গভীরতায় বপন করে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তবে মাদায় সরাসরি বীজ বপন না করে পলি ব্যাগে চারা তৈরি করে সেসব চারা মাদায় রোপণ করা যেতে পারে। এতে বীজের পরিমাণ কম লাগে এবং মাদায় গাছের প্রয়োজনীয় সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়।
বর্তমানে আধুনিক ক্লাইমেট স্মার্ট টেকনোলজি কোকোডাস্ট ব্যবহার করে প্লাস্টিকের ট্রে তে মাটি বিহীন চারা তৈরি করে সুস্হ সবল চারার পাশাপাশি ফলন ও ২০% বাড়িয়ে তুলতে পারেন৷
🥦🍄সেচ ও নিকাশ :
করলার জমিতে রসের অভাব হলে দুই বেডে মাঝখানের নালা দিয়ে সেচ দিতে হবে। বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুত নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
🥦🍄অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা :
করলা গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত আগাছা দমন করতে হবে। প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকি চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে। করলার চারা ১০-১৫ সেমি লম্বা হলে গাছের গোড়ার কাছাকাছি মাটিতে বাঁশের কঞ্চি বা কাঠি পুঁতে একদিকে কাত করে বেঁধে দিতে হবে। এরপর গাছ ৫০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হলে ১.৫ মিটার উঁচু করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। এছাড়া মাঝে মধ্যে মাটি কুপিয়ে আলগা করে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করে দিতে হবে এবং জমিতে আর্দ্রতা রক্ষায় করলা গাছের গোড়ায় জাবড়া দিতে হবে।
🥦🍄পোকা দমন : করলা গাছে তেমন বেশি পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। তবে ফলের মাছি পোকা, লাল কুমড়া বিটল ও কাঁঠালে পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া জাব পোকা, সাদা মাছি, ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ থ্রিপস এর ও কিছু সংক্রমণ হয়ে থাকে৷
🥦🍄ফলের মাছি পোকা :স্ত্রী মাছি পোকা কচি ফলের গায়ে ২-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়াগুলো আক্রান্ত ফলে ভেতর ঢুকে এবং ফলের শাঁস খায়। আক্রান্ত ফল অকালে ঝরে পড়ে।
দমন : আক্রান্ত ফল কিড়াসহ সংগ্রহ করে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। বিষটোপ ও ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। একটি মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম থেতলানো মিষ্টি কুমড়ার সঙ্গে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডাবিস্নউপি মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করতে হবে। বিষটোপ ৩-৪ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন বা ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের ঔষধ যেমনঃ রিপকর্ড/নাইট্রো/এসিমিক্স/রিলোড ২০ ইসি বা ৫৫ ইসি বা কোরাজিন/ভলিউম ফ্লেক্সি/প্রতিলিটার পানির সঙ্গে ১.৫ মিলি/১ লি পানি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
🎏🥦লাল কুমড়া বিটল : পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতা ও ফল খেয়ে ফেলে।
দমন :এ পোকা দমনের জন্য জমি সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাত দিয়ে পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া জমিতে সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
প্রতিকার :রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর স্প্র্রে করতে হবে।
🧨জাব পোকা, সাদা মাছি দমনে হলুদ আঠালো ফাঁদ এবং থ্রিপস দমনে নীল আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন৷ পাশাপাশি জৈব বালাইনাশক বায়োক্লিন, বায়োট্রিন, বায়োচমক কিংবা নিমবিসিডিন ব্যবহার করে নিরাপদ ফসল ঘরে তুলতে পারেন৷
🦺🏘️ডাউনি মিলডিউ :পাতার ওপর ছোট ছোট হলুদ দাগ পড়ে। পাতা ঝলসে ও কুচকে যায়। পাতার নিচে গোলাপি দাগ দেখা যায়।
প্রতিকার : রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড /ডাইথেন এম-৪৫/কমপ্যানিয়ন/ম্যানসার মিশিয়ে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্র্রে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে সিকিউর/মেলিডিডিও স্প্রে করতে হবে৷
🍄🥦ফসল সংগ্রহ : বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর গাছে ফল ধরে। ফল ধরার ১২-১৫ দিন পর করলা সংগ্রহ করতে হয়।
🍄🥦ফলন : ভালোভাবে যত্ন নিলে হেক্টরপ্রতি ১২-১৫ টন পর্যন্ত করলার ফলন পাওয়া যায়।
🥦🍄উপকারীতাঃ
করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এ বিটা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে এবং চোখের নানা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এছাড়া করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাড় ভালো রাখে। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি, যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। এগুলো ছাড়াও করলায় আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড, জিংক ও ফসফরাস। করলা পেটের পীড়া ও অন্যান্য অসুখ-বিসুখের জন্য উপকারী। করলা রক্তের শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং রক্ত পরিষ্কার করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। করলা পাতার রস দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং নানা ধরনের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। করলা পাতার রস মধুর সঙ্গে খেলে অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে৷
পরামর্শের জন্যঃ
কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক
কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি ইউনিট
পিকেএসএফ এবং সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা
ইমেইলঃ siba_bau@yahoo.com
গভীর শোক ও দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, কৃষিবিদ জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ (৫০), ব্রেইন স্ট্রোক জনিত কারণে গত ১০ নভেম্বর (ব্রিহস্পতিবার) বিকাল ৩:৩০ মিনিটে ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ।
তিনি কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার পদে সিডস প্রসেসিং সেন্টার, এসিআই লিঃ, যশোর, এ কর্মরত ছিলেন।
মৃত্যুকালে জনাব সামাদ স্ত্রী ও পুত্র সন্তান রেখে গেছেন।
‘ডেইলি আপডেট বিডি’র পক্ষ থেকে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
ড. প্রণয় বালা: শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে ক্যাকটাস অত্যন্ত জনপ্রিয়। ক্যাকটাসের ১৩০ টি জেনাস এবং ৩৫০০টি প্রজাতি নিয়ে ক্যাকটাস পরিবার।
ক্যাকটাস শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ুতে অভিযোজনক্ষম তবে হালকা ছায়ায়,বাড়ির ছাদে বা টবে চাষ করা যায়। ছাদে বা টবে ক্যাকটাসের চাষ: ক্যাকটাসের বৃদ্ধিও ধরণ অনুযায়ি টব নির্বাচন করতে হবে।
টবের নিচে ২/৩টি ছিদ্র ছাড়াও টবের চারপাশে আরও ২/৪ টি ছিদ্র থাকা দরকার যাতে টবের বাড়তি পানি তাড়াতাড়ি বের হতে পারে। টব প্রস্তুত ফুটন্ত পানি দিয়ে টব ও ঝামা দুই-ই শোধন করা দরকার। টবের নিচের দিকের তৃতীয়াংশ জায়গা শোধনকৃত ঝামা দিয়ে ভরাট করতে হবে।
টবের সার মাটি টবে গাছ লাগানোর মাস খানেক আগে দো-আঁশ মাটি ১ ভাগ, বালি ১ ভাগ, গুঁড়ো কাঠ কয়লা ১ভাগ,পুরানো পাতা পচা সার ১ ভাগ, রাবিশ গুঁড়া ১/২ ভাগ, ডিমের খোলা ১০-১২ টি, ইটের ছোট টুকরা ১/২ ভাগ,হাড়ের গুঁড়ো ১ মুঠো দিয়ে সার মাটি তৈরি করতে হবে।
৪ ইঞ্চি ব্যাসের টবের নিচে ছিদ্রের উপর ১ ইঞ্চি খোয়ার স্তর দিযে তার উপর মিশ্রণ দিয়ে চারা লাগাতে হবে। বাড়তি সার প্রয়োগ বছরে একবার বাড়তি সার দিতে হবে এবং তা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে।
নিচের মিশ্রণটি বাড়তি সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপাদান পরিমাণ পানি ৫ লিটার গালফেট অব পটাশ ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ২০ গ্রাম এ্যাগনেসিয়াম সালফেট ১৫ গ্রাম টবে পানি দেওয়ার পর তরল সার প্রয়োগ করা উচিত। পানি দেয়া ক্যাকটাস জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, তাই পরিমিত পানি দেয়া উচিত। স্পেয়ারের সাহায্যে পানি দিলে ভাল হয়। শীতকালে ২/৩ দিন পর পর পানি দেয়া উচিত।
মালচিং ক্যাকটাসের ক্ষেত্রে রং বেরঙের নুড়ি পাথরকে মালচ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রোগ ক্যাকটাসের রোগ কম। তবে ক্যাকটাসের জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোন গাছে পচন ধরলে তা আলাদা কওে ফেলতে হবে। প্রতিরোধক হিসেবে ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর ছিটানো দরকার। বেভিস্টিন(০.২%),বেনলেট(০.২%),কপার অক্সিক্লোরাইড(০.৪%),ডাইথেন এম-৪৫(০.২%) এসব ছত্রাকনাশক ব্যবহার করওে রোগের হাত থেকে গাছ রক্ষা পাবে।
পোকা যে সব পোকা ক্যাকটসের ক্ষতি করে তার মধ্যে অন্যতম হলো শোষক পোকা,জাব পোকা,মিলিবাগ,আঁশ পোকা, মাইট ইত্যাদি। দানাদার সিস্টেমিক কীটনাশক মাটিতে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। মিলিবাগ ও আঁশপোকার জন্য ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন (০.১%) এবং মাইট দমনের জন্য ভারটিমেক (০.২%) ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করা উচিত।
ড. প্রণয় বালা: সহকারী অধ্যাপক,কৃষিশিক্ষা
হাজী লালমিয়া সিটি কলেজ,গোপালগঞ্জ।