ড. প্রণয় বালা: পাটের অন্যতম প্রধান শত্রু বিছা পোকা । বিছা পোকার আক্রমণে পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয় থাকে । আসুন জেনে নেয়া যাক এ বিছা পোকা হতে সাবধানতা ও আক্রমণ হলে কী করতে হবে ।
বিছা পোকার জীবন চক্র ও পরিচিতি: কীড়ার ৬টি ধাপ রয়েছে যার প্রতিটিই পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। মথ সরাসরি কোন ক্ষতি করে না বরং বংশবৃদ্ধি করে। প্রথম ধাপের বয়স ১-৩ দিন, ২য় ধাপের ৪র্থ-৬ষ্ঠ দিন, ৩য় ধাপের ৭ম-৯ম দিন, ৪র্থ ধাপের ১০-১৩ দিন, ৫ম ধাপের ১৪-১৭ দিন এবং ৬ষ্ঠ ধাপের বয়স ১৮-২০ দিন ।
এরপর পিউপা অবস্থায় ৯-১০ দিন শুকনো পাতা বা মাটির গর্তে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। মধ্য মে ( বৈশাখের মাঝামাঝি) হতে আগস্টের শেষ পর্যন্ত (ভাদ্রের প্রথম) সময়ে এ পোকার আক্রমণ হয়। বিছা পোকা বাচ্চা অবস্থায় হলুদ বা হালকা সবুজ রংয়ের হয়। পূর্ণাঙ্গ বিছা পোকা ১.৫ ইঞ্চি লম্বা, কমলা বা গাঢ় হলুদ রংয়ের। বিছা পোকার গায়ে শুয়ো গুচ্ছাকারে সাজান থাকে। পূর্ণাঙ্গ বিছা পোকা মাঝারি হালকা রং এর মথ এবং এদের পাখায় কালো ফোটা থাকে।
বিছা পোকার ক্ষতির ধরণ: পাটের বিছা পোকার (Spilosoma obliqua) স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে গাদা করে ডিম পাড়ে। ডিমের রং সবুজ।ক্রমশ এটি বাদামী রংয়ের হয়। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর প্রায় ৬-৭ দিন পর্যন্ত পাতার উল্টো দিকে দলবদ্ধভাবে থাকে।পরে এরা সারা মাঠ ছড়িয়ে যায় । বিছা পোকার কীড়াগুলো পাতার উল্টো পিঠের সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মত করে ফেলে।
আক্রান্ত পাতা দূর থেকে দেখে সহজেই চেনা যায় এবং জমির পুরো পাতা খেয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।আক্রমণ ব্যাপক হলে বিছা পোকা পাটের কচি ডগা পর্যন্ত খেয়ে গাছকে পাতাশূণ্য করে ফেলে। গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং আঁশের ফলন কম হয়। আক্রমনের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে একর প্রতি ৫ মন পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে।
দমন ব্যবস্থা: বিছা পোকার আক্রমণের পূর্বে করণীয়:
পাট ক্ষেতের আশে পাশে বা অন্য আগাছা থাকলে তা পরিস্কার করে ফেলতে হবে । বিছা পোকা যাতে এক খেত হতে অন্য খেতে ছড়াতে না পারে সে জন্য প্রতিবন্ধক নালা তৈরী করতে হবে
বিছা পোকার আক্রমণের পর করণীয়:
- প্রাথমিকভাবে পাটের পাতায় ডিমের গাদা বা কীড়া তুলে পায়ে মাড়িয়ে বা গর্তে চাপা দিয়ে মারা বা কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে (১:২০) ডুবিয়ে মেরে ফেলা।
- মথ দমনের জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা ।
উপরের উপায় সমূহ অবলম্বন করেও যদি বিছা পোকা দমন করা না যায় তবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- পাট গাছের উচ্চতা ৩ ফুট পর্যন্ত প্রতিগাছে ২টি এবং ৪ ফুট পর্যন্ত ৪টি বিছাপোকা দেখা গেলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ।
- যেমন: ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন ((Lambda-cyhalothrin) গ্রুপের ক্যারাটে ২.৫ ইসি; অথবা জুবাস ২.৫ ইসি; অথবা ফাইটার প্লাস অথবা রিভা ২.৫ ইসি @ ১ মিলি/লি. হারে পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
- অথবা ** কার্বারিল গ্রুপের সেভিন ৮০ wp (ap-৩৩৮) ভিটাব্রিল ৮৫ wp @ ৩.৪ গ্রাম/লি. পানি হারে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
- অথবা ** সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কট ১০ ইসি (এপি-৬৩৯); অথবা রিপকর্ড ১০ ইসি; অথবা সিমবুশ ১০ ইসি; অথবা শেফা ১০ ইসি (এপি-১০৭৯) @ ১ মিলি/লি. পানি হারে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে ।
- কিছু পরজীবী পোকা যেমন-এ্যাপানটেলিস অবলিকুয়া, ইউরিটোমাএবং ট্রাকিনিড মাছি প্রয়োগ করেও বিছা পোকা দমন করা যায়। মাঠে রেজীবী পোকা ব্যবহার করার সময় অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
ড. প্রণয় বালা,
সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, হাজী লালমিয়াসিটি কলেজ, গোপালগঞ্জ।